করোনায় ‘স্বল্প পরিসরে’ পালিত হবে ঢাবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

ঢাবি প্রতিনিধি |

পহেলা জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স হবে ৯৯ বছর। তবে মহামারীর কারণে এবারের প্রতিবার্ষিকী উদযাপনে থাকছে না জাকজমকপূর্ণ কোনো আয়োজন। করোনা মহামারীর কারণে স্বল্প পরিসরে দিবসটি উদযাপিত হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন প্রাঙ্গণে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও বেলুন ওড়ানোর মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হবে।

বেলা ১১টায় অধ্যাপক আবদুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক  মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনলাইন সভা অনুষ্ঠিত হবে।

এতে মূল বক্তা হিসেবে জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ‘শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রসঙ্গ: আন্দোলন ও সংগ্রাম’ শীর্ষক বক্তব্য দেবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন), উপ-উপাচার্য (শিক্ষা), কোষাধ্যক্ষ, সাবেক দুই জন উপাচার্য, দুই জন ডিন, একজন প্রভোস্ট, একজন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট, ঢাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং ঢাবি শিক্ষক সমিতিসহ অন্যান্য সমিতির পক্ষ থেকে নেতারা এই অনলাইন অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হবেন।

৯৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান এক শুভেচ্ছা বাণীতে বলেন, ‘শিক্ষা ও গবেষণার বিস্তার, মুক্তচিন্তার উন্মেষ ও বিকাশ এবং সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নতুন ও মৌলিক জ্ঞান সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে অস্তিত্বপ্রতিম এই প্রতিষ্ঠান শতবর্ষপূর্তি উদযাপন করবে। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীও একই বছর উদযাপিত হবে। তাই বছরটি হবে আমাদের জন্য এক বিশেষ মর্যাদা, সম্মান, আবেগ, অনুভূতির সংশ্লেষে গৌরবদীপ্ত ও স্মৃতি-ভাবুকতার বছর

“ইতোমধ্যেই সেই উৎসব আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। কালিক নৈকট্যে এ বছরের প্রতিষ্ঠা দিবসেও আমাদের প্রাণে তার ছোঁয়া এসে লেগেছে। তবে প্রকৃতি ও জীবন বাস্তবতার অভিঘাত অগ্রাহ্য করার শক্তি কারও নেই। নভেল করোনাভাইরাসের অতিসংক্রমণের কারণে সমগ্র বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশও গভীর সংকটময় মূহূর্ত অতিক্রম করছে। আশার কথা এই যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যরা বিশেষ করে বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীরা শুধু তুলনামূলক নিরাপদে নেই, জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলায় মানবিক সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন অনেকে।

“আমাদের বিশ্বাস— সুদিন সামনে, বিপদবিঘ্ন পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অতীতের ন্যায় আবারও মুখরিত হবে শিক্ষার্থীদের প্রাণচাঞ্চল্যে, স্পন্দিত হবে মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক মূল্যবোধ চর্চার অদম্য প্রতিযোগিতায়।"

১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের ১ জুলাই তৎকালীন ঢাকার সবচেয়ে অভিজাত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত রমনা এলাকায় প্রায় ৬০০ একর জমির ওপর পূর্ববঙ্গ এবং আসাম প্রদেশ সরকারের পরিত্যক্ত ভবনগুলো ও ঢাকা কলেজের (বর্তমান কার্জন হল) ভবনগুলোর সমন্বয়ে মনোরম পরিবেশে গড়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

তিনটি অনুষদ, ১২টি বিভাগ, ৬০ জন শিক্ষক, ৮৪৭ জন শিক্ষার্থী এবং তিনটি আবাসিক হল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি।

প্রথম শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন বিভাগে মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৮৭৭ জন এবং শিক্ষক সংখ্যা ছিল মাত্র ৬০ জন। যেসব প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্নে শিক্ষকতার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন, তারা হলেন- হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, এফ সি টার্নার, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, জি এইচ ল্যাংলি, হরিদাস ভট্টাচার্য, ডব্লিউ এ জেনকিন্স, রমেশচন্দ্র মজুমদার, এ এফ রহমান, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ প্রমুখ।

বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩টি অনুষদ, ১৩টি ইনস্টিটিউট, ৮৪টি বিভাগ, ৬০টি ব্যুরো ও গবেষণা কেন্দ্র এবং ছাত্র-ছাত্রীদের ১৯টি আবাসিক হল, ৪টি হোস্টেল ও ১৩৮টি উপাদানকল্প কলেজ ও ইনস্টিটিউট রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৪৬ হাজার ১৫০ জন। পাঠদান ও গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় ২ হাজার ৮ জন শিক্ষক।

১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং পরবর্তী সময়ে সব জন-আন্দোলন ও সংগ্রামে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গৌরবময় ভূমিকা। স্বাধীনতা যুদ্ধে এ বিশ্ববিদ্যালয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণের শিকার হয়। এতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ছাত্র-ছাত্রীসহ শহীদ হয়েছেন অনেকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দের আইয়ুব সরকারের জারি করা অর্ডিন্যান্স বাতিলের জন্য ষাটের দশক থেকে শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওই অর্ডিন্যান্স বাতিল করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ-১৯৭৩ জারি করেন। ফলে এই বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা লাভ করে এবং পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক রীতি প্রতিষ্ঠিত হয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0044431686401367