করোনা : আগামী তিন সপ্তাহ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

দেশে করোনা ভাইরাস ভয়ংকর রূপ নেয়ার পথে এগুচ্ছে। কিছুতেই লাগাম টানা যাচ্ছে না করোনা সংক্রমণে। দেশে এক দিনে রেকর্ড ৮৮৭ জনের মধ্যে গতকাল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী তিন সপ্তাহ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এই সময়ে ব্যাপক হারে ভাইরাসটির সামাজিক সংক্রমণ ঘটতে পারে। যেহেতু করোনা ভাইরাসের নেই নির্দিষ্ট ওষুধ, ভ্যাকসিন, তাই জনসচেতনার কোনো বিকল্প নেই। বাঁচতে চাইলে সবারই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। কিন্তু লকডাউন শিথিলের পর ঘরের বাইরে বেরিয়ে এসেছে মানুষ। রাস্তাঘাট, বাজার, শপিংমল, দোকানপাটসহ অলিগলিতে গতকাল থেকে অনেক মানুষের ভিড় দেখা গেছে। ব্যক্তিগত প্রাইভেট গাড়ি চলাচলও বেড়েছে। জন চলাচল ও জনসমাগম যত বাড়বে, করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি ততই বেশি হবে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন। সোমবার (১১ মে) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন আবুল খায়ের।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশে সংক্রমণ যখন ঊর্ধ্বমুখী, তখন শিথিল করে দেয়া হয়েছে লকডাউন। অধিকাংশ গার্মেন্টস খুলে দেয়া হয়েছে, বাকিগুলো খোলার অপেক্ষায়। শ্রমিকরা ঢাকায় আসছেন দলে দলে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকানপাট খোলা রাখার সময় বাড়ানো হয়েছে। দেয়া হয়েছে ইফতার বিক্রির অনুমতি। গতকাল থেকেই শর্তসাপেক্ষে খুলে দেয়া হয়েছে দোকানপাট ও শপিংমল। এসব সিদ্ধান্তে অনেক বিশেষজ্ঞই বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, সংক্রমণের চরিত্র দেখে এটা স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, মে মাস হবে বাংলাদেশের জন্য খুবই ‘ক্রিটিক্যাল’। দেশে করোনার সংক্রমণের ক্ষেত্রে সরকার যে ভবিষ্যত্ চিত্রের খসড়া করেছে সেখানেও দেখানো হয়েছে, মে মাসের শেষ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছাতে পারে ১ লাখে। তাহলে কেন খুলে দেয়া হচ্ছে সবকিছু—এর উত্তর জানা নেই কারো। এ নিয়ে বলতে গিয়ে ‘আসলেই কি বাংলাদেশে লকডাউন চলছে’ সেই প্রশ্ন তুলে এক জন ভাইরোলজিস্ট বলেন, এমনিতে মানুষকে ঘরে রাখা যায়নি, তার ওপর আবার সবকিছু খুলে দেওয়া হচ্ছে। এভাবে ঝুঁকি বাড়বে বৈ কমবে না। যারা ঘরে বসে আছে তারা ভাববে, গার্মেন্টসকর্মীরা তো দিব্যি কাজ করছে তাহলে আমরা বসে থাকব কেন। এ কারণে সামনে ভয়ংকর দিন অপেক্ষা করছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, লকডাউন শিথিল করায় আশঙ্কাজনক হারে করোনা আক্রান্ত রোগী বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনিতেই মানুষ লকডাউন মানতে চায় না। তিনি বলেন, বাঁচতে চাইলে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। মানুষ নিজে সচেতন না হলে পুলিশ দিয়ে সবকিছু করা যায় না। এক্ষেত্রে তিনি চীন, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডের জনগণের লকডাউন মেনে চলার উদাহরণ তুলে ধরেন।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মজিবুর রহমান বলেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে যখন লকডাউন মানতে কঠোর হওয়া দরকার, তখন লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। রাজধানী আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে। সব জায়গায় মানুষের ভিড়। এ জন্য সামনে আমাদের খারাপ দিন অপেক্ষা করছে। গার্মেন্টস খুলে দেওয়ার পর সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাঁচতে চাইলে ঘরে থাকুন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।

দেশে করোনার সর্বোচ্চ ঝুঁকির মধ্যেও লকডাউন মানছে না মানুষ। বিশেষ করে গতকাল থেকে শপিংমল ও দোকানপাট খুলে দেয়ায় রাজধানীসহ সারাদেশে ঘরের বাইরে বেরিয়ে এসেছে মানুষ। সরকার ঘোষিত চলমান সাধারণ ছুটিতে ঘর থেকে বের হওয়া নিষিদ্ধ হলেও মানুষ রাস্তায় নামছে। সামাজিক দূরত্ব মানছে না। সবচেয়ে বেশি শৈথিল্য চলছে হাটবাজারে। শরীর ঘেঁষে ভিড় করে কেনাকাটা করা হচ্ছে। জটলা হচ্ছে। এ সময় সুরক্ষা সরঞ্জামাদি ব্যবহার করতেও দেখা যাচ্ছে না অধিকাংশ মানুষকেই। ক্রেতারা মাস্ক ব্যবহার করলেও হাটবাজারের বিক্রেতাদের মধ্যে মাস্ক পরার প্রবণতা একেবারেই কম। এছাড়া সারাদেশেই ন্যায্যমূল্যে টিসিবির পণ্য কিনতে আসা মানুষও সামাজিক দূরত্ব মানছে না। ট্রাকের সামনে ভিড় ধাক্কাধাক্কি করে মানুষ এসব পণ্য কিনছে। গ্রামাঞ্চলে ত্রাণ বিতরণে বিশৃঙ্খলা চলছে। ত্রাণ পেতে মানুষ কোনো নিয়ম মানছে না। এ সময় স্থানীয় প্রশাসনের লোকজন উপস্থিত থাকলে সামাজিক দূরত্ব কিছুটা বজায় রাখা হলেও অন্য সময় তা একেবারেই মানা হচ্ছে না। প্রয়োজনীয় কেনাকাটার বাইরেও মানুষ চায়ের দোকানে এখনো আড্ডা দিয়ে যাচ্ছে। প্রধান শহরগুলোর পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাড়া-মহল্লার গলিতেও অহেতুক বের হচ্ছে মানুষ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাইকিং, টহল, জরিমানা—কোনো কিছুতেই গা করছে না কেউ। এমনকি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জেলা ও এলাকায় লকডাউন উপেক্ষা করে এখনো মানুষ বের হচ্ছে। এখনো লোকজনের স্থানান্তর অব্যাহত রয়েছে। গতকাল রাজধানী, ঢাকার আশপাশ এবং দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লকডাউন শৈথিল্যের এমন তথ্য পাওয়া গেছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির বেশি হলে স্থানীয়ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে পারে - dainik shiksha তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির বেশি হলে স্থানীয়ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে পারে বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাখাত - dainik shiksha বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাখাত আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0051500797271729