করোনা : দুই শিক্ষককে বরখাস্তের প্রতিবাদ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফোরামের

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় প্রশাসনিক গাফিলতি উল্লেখ করে মত প্রকাশ করার অভিযোগে সরকারি কলেজের দুইজন শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফোরাম।

শুক্রবার (২৭ মার্চ) বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফোরামের আট শতাধিক শিক্ষক যৌথ বিবৃতিতে প্রতিবাদ ও আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানান।

সাময়িক বরখাস্ত দুই শিক্ষক হলেন, ময়মনসিংহের গফরগাঁও সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী জাকিয়া ফেরদৌসী এবং বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজের দর্শন বিভাগের প্রভাষক সাহাদাত উল্লাহ কায়সার।

গত বুধবার (২৫ মার্চ) দুই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করার আদেশ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাদেরকে সাময়িক বরখাস্ত করে শোকজ করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ফেসবুক স্ট্যাটাসে এই শিক্ষকগণ সরকার বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বা ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে কোনো বক্তব্য প্রদান করেননি, বরং প্রশাসনের একটি অংশ যারা নিজ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে যৌক্তিক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। গত বেশ কিছুদিন ধরে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় করোনাভাইরাস মোকাবেলায় প্রস্তুতির ভয়াবহ ঘাটতির যে হতাশাজনক চিত্র ফুটে উঠেছে তাতে সমগ্র দেশবাসীও এই শিক্ষকগণের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করবেন না। জীবন বাজি রেখে দায়িত্ব পালন করা সকল চিকিৎসক যেখানে অত্যাবশ্যকীয় ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (Personal Protective Equipment; PPE) পাননি, সেখানে সরকারি কর্মকর্তাদের পিপিই পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি প্রদানের কারণে শুধু ওই শিক্ষকগণই নয় সমগ্র সচেতন নাগরিক সংক্ষুব্ধ হয়েছেন।

উল্লেখ্য, একই দিনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে (স্মারক নং ৪৫,০০,০০০০,১৬১,৯৯,০০১,১৯-৯১) চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত ডাক্তার ও নার্সদের বিরুদ্ধে শালীনতার সীমা অতিক্রম করে নজিরবিহীনভাবে হুমকি প্রদর্শন করা হয় যা পরবর্তীতে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের দাবির মুখে প্রত্যাহার করা হয়।

বাংলাদশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফোরাম মনে করে স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর এই নগ্ন হস্তক্ষেপ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মূল ভিত্তির ওপর হামলার শামিল। সারা দেশ যখন COVID-19 (কোভিড-১৯) তথা করোনা ভাইরাস নিয়ে আতংকিত, সরকার সাধারণ মানুষদের নিরাপত্তা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত, ঠিক তখন সরকারি আমলাদের ব্যর্থতা ঢাকতে বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে এই দেশপ্রেমী শিক্ষকগণকে। প্রকৃতপক্ষে কারণ দর্শানো উচিত ওইসব দায়িত্বপ্রাপ্ত আমলাদের যারা সময় পেয়েও প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারেননি। 

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হওয়ার আগে আমরা প্রায় তিন মাস সময় পেয়েছিলাম। কিন্তু এই সময়ে ডাক্তারদের জন্য পর্যাপ্ত সার্জিকাল মাস্ক ও প্রটেকশন গিয়ার পর্যন্ত যোগাড় করা হয়নি। এমনকি বিদেশ ফেরতদের জন্য কোয়ারান্টাইনের ব্যবস্থা করা হয়নি। যেখানে দেশের জনগণের সুখ ও সমৃদ্ধি নিশ্চিতকল্পে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন সেখানে আমলাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ রাষ্ট্রীয় সম্পদের চূড়ান্ত অপব্যবহার করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য সহ দেশের সকল খাতকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছেন। আমলাতান্ত্রিক এই দুষ্টচক্রের কারণে সাধারণ জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হতে হতে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণা করার কারণে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মলয় কান্তি মৃধাকেও হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। দেশবাসীকে অনুরোধ করছি আসুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহবানে সাড়া দিয়ে 'করোনাযুদ্ধে' জয় লাভের জন্য স্ব স্ব গৃহে অবস্থান করি ও সরকারের জারি করা স্বাস্থ্য নির্দেশ মেনে চলি।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, আমরা অতিসত্বর এই প্রতিহিংসামূলক কারণ দর্শানো নোটিশ ও সাময়িক বরখাস্তের আদেশের প্রত্যাহার দাবি করছি। পাশাপাশি যারা দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে অবিবেচকের মতো আচরণ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে নিয়মমাফিক ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি।

 

আরও পড়ুন: করোনা : উসকানিমূলক পোস্ট দেয়ায় দুই শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা বরখাস্ত


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030379295349121