করোনা : বাংলাদেশে শিক্ষা সংস্কারের তাগিদ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

করোনাভাইরাস মহামারিকালে শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে এক বেসরকারি গবেষণায় উঠে এসেছে যে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ৬৯.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী দূরশিক্ষণে অংশই নিতে পারেনি।

স্কুল বন্ধ থাকায় ক্লাস পরীক্ষা আর মূল্যায়নের যে বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেটি নিয়েও নানা রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে শিক্ষা সংশ্লিষ্ঠ সবার।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী আর অভিভাবকরাও চান ভবিষ্যতের প্রস্তুতি হিসেবে শিক্ষা ব্যবস্থা তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে আরো আকর্ষণীয়, আনন্দদায়ক আর সবার সাধ্যের আনা হোক।

এ অবস্থায় চলমান মহামারির অভিজ্ঞতা থেকে ভবিষ্যতে শিক্ষায় ব্যাপক সংস্কারের পক্ষে মতামত আসছে। সরকারের পক্ষ থেকেও জাতীয় পাঠ্যক্রম সংস্কারের উদ্যোগের কথা জানা যাচ্ছে।

বাংলাদেশে প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরেই সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় গত শিক্ষাবর্ষেও ক্লাস-পরীক্ষা এবং মূল্যায়ন হয়েছে বিকল্প পদ্ধতিতে।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা অনেকেই ক্লাসে অংশ নিতে পারেনি। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষায় যারা অংশ নিয়েছে, তারাও বলছে যে বহুরকম সমস্যায় তাদের পড়তে হয়েছে।

উত্তরবঙ্গের একটি সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের একজন শিক্ষার্থী বলেন, কোন কিছু না বুঝলে তারা শ্রেণীকক্ষে যেভাবে শিক্ষককে প্রশ্ন করে বুঝে নিতে পারতো, সেটা অনলাইনে সম্ভব হয়নি।

ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াও তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষায় ডিভাইসের সংকটের কথাও জানাচ্ছিলেন আরেকজন শিক্ষার্থী।

ঢাকার একজন শিক্ষার্থীও জানিয়েছে, ইন্টারনেট সংযোগের অভাবে সে অনলাইনে কোনো ক্লাসই করতে পারেনি।

ভবিষ্যতে অনলাইনে তথ্য প্রযুক্তি-নির্ভর শিক্ষা প্র্রচলিত শিক্ষার পাশাপাশি চালু রাখতে গেলে এসব বিষয় নিয়ে এখন থেকেই ভাবতে হবে বলেই মনে করেন সবাই।

করোনাভাইরাস মহামারিতে দীর্ঘ সময় ঘরে বসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় অভিভাবকদের নানা অভিজ্ঞতা হয়েছে। তাদের অনেকে বলছেন যে মহামারি থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যৎ শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে ভাবার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

ঢাকার বেসরকারি একটি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জান্নাতুল বাকী শিফা বলেন, অনলাইন শিক্ষা আরও আকর্ষণীয় হওয়া দরকার।

তিনি বলেন, "আমার বাচ্চা যখন ক্লাস করেছে তখন ওর পাশে থাকতে হয়েছে। ওতো ছোট বোঝে না। অনেকক্ষণ ধরে মনিটরে তাকিয়ে থাকার একটা সমস্যা আছে। আমার মনে হয় ক্লাসগুলো সংক্ষিপ্ত করে কীভাবে আরও আকর্ষণীয় করা যায়, সেদিকটা ভবিষ্যতে ভাবা দরকার।"

তিনি আরো বলেন, "শুধু পাঠ্যবইয়ের বিষয়ের বাইরেও শিশুদেরকে শেখানো দরকার যাতে তারা আগ্রহী হয় ক্লাস করতে।"

আরেকজন অভিভাবক সাজেদা খাতুন বলেন, বর্তমান অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পায় সবার বিষয়ে চিন্তা করতে হবে।

``সবাই এই সুযোগটা পাচ্ছে কিনা, প্রত্যন্ত অঞ্চলে সুযোগটা পাচ্ছে কিনা, সেটা জানতে হবে। সব বাচ্চাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে শিক্ষা গ্রহণ করুক, সেটা নিশ্চিত করাই জরুরি।"

ক্লাস-পরীক্ষার বাইরে জরুরিভিত্তিতে অনলাইনে শিক্ষা বা বিকল্প ক্লাস, পরীক্ষা এবং মূল্যায়নের যে পদ্ধতি এবার প্রয়োগ হয়েছে সেখানে নানা ঘাটতি দেখেছেন শিক্ষকরাও।

সরকারি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকদের সবারই একই রকম অভিজ্ঞতা।

গোপালগঞ্জের শেখ হাসিনা বালিকা বিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ হুমায়রা আক্তার বলেন, স্কুল খুলে সবকিছু স্বাভাবিক হলেও ভবিষ্যতের প্রস্তুতি হিসেবে বিকল্প মূল্যায়ন এবং শিক্ষার্থীদের চর্চার মধ্যে রাখার একটা নির্দেশনা তারা ইতোমধ্যে পেয়েছেন।

এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে মহামারির অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন যে শিক্ষার্থীদের জীবনমুখী ব্যবহারিক শিক্ষাটাও একটা বিকল্প হতে পারে, যেটির বিষয়ে তারা এবার শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ দেখতে পেয়েছেন।

``করোনাকালে সবকিছু বন্ধ থাকার সময় কীভাবে বেঁচে থাকা যায়, নিজস্ব সম্পদ ব্যবহার করে কাজে লাগানো যায়, সে বিষয়ে তাদের শেখার তাগিদ দিয়ে ছাত্রীদের ভাল সাড়া পেয়েছি। এ রকম পরিবারের শিক্ষা, পরিবেশের শিক্ষা, সামাজিক শিক্ষাটা টেক্সটের আওতায় এনে ব্যবহারিক শিক্ষার মধ্যে যদি সন্নিবেশ করা যায়, তাহলেও মনে হয় শিক্ষার্থীরা আগ্রহী হবে।"

ঢাকার বেসরকারি সাউথপয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হামিদা আলী মনে করেন, আংশিক হলেও বিকল্প শিক্ষার বিষয়টি চর্চার মধ্যে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষকদেরও প্রশিক্ষণের বিষয়ে জোর দেন তিনি।

``আমাদের ক্লাসগুলিকে আবার একটু ঢেলে সাজাতে হবে। খোদা না করুক আবার যদি আবার কখনও এরকম পরিস্থিতি হয় তাহলে আমাদের শিক্ষকরা যেন সেইভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের বিষয়গুলিকে বাচ্চাদের কাছে ভালভাবে তুলে ধরতে পারেন এবং বাচ্চারাও যেন সেই পড়াটা ভালভাবে শিখে পরীক্ষা দিতে পারে, সেইভাবে প্রস্তুতিটা রাখতেই হবে।"

চলমান মহামারির অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা বিনির্মাণের পরামর্শ দিচ্ছেন শিক্ষাবিদেরা।

গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, এমন একটি সংস্কার করা খুব দরকার।

``নতুন স্বাভাবিকে যদি আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি সহ আনতে হয়, তাহলে একদিকে পাঠ্যক্রম থেকে পাঠ্যপুস্তক সংস্কার করা দরকার। দ্বিতীয় হলো তথ্যপ্রযুক্তি কোন বয়সের উপযোগী করে কতখানি দেয়া সম্ভব সেটি বিবেচনা করে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কাজ করতে হবে। আর তৃতীয় বিষয়টি হলো সমস্ত বিষয়গুলো এখন এক ধরনের ঢেলে সাজাতে হবে।"

সূত্র : বিবিসি বাংলা


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036358833312988