করোনা ভাইরাস সঙ্কটে শিক্ষা শিক্ষার্থী ও অভিভাবক

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

করোনাভাইরাস মোকাবেলা করার জন্য সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ রেখেছে। আগামী কতদিন বন্ধ থাকবে বলা মুশকিল। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকল প্রকার অফিস, শিল্প কলকারখানা, গণপরিবহন খুলে দিলেও খুব তাড়াতাড়ি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। সরকারী ছুটি চলাকালীন সময়ে সবচেয়ে বেশি সঙ্কটে আছেন শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা। একই সঙ্গে সঙ্কটে পড়েছে শিক্ষাব্যবস্থা। বুধবার (১ জুলাই) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত উপসম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়। 

উপসম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি আছে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। তাদের বয়স সাত থেকে পঁচিশ বছরের মধ্যে হওয়ায় তারা তাদের জীবনের অধিকাংশ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কোচিং সেন্টার, খেলার মাঠ এবং বন্ধুদের আড্ডায় কাটিয়েছে। করোনাভাইরাস মোকাবেলা করার জন্য তাদের এখন লম্বা সময় ঘরে অবস্থান করতে হচ্ছে। ফলে বদলে গেছে তাদের দৈনন্দিন জীবন ব্যবস্থা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় লেখাপড়ার চাপ না থাকায় তাদের সময় কাটছে না। তবে সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা কারণ তাদের পরীক্ষা কবে অনুষ্ঠিত হবে তারা তা জানে না। দুই বছর ধরে পরীক্ষার প্রস্তুতি শেষে পরীক্ষা দিতে না পারার হতাশা ভর করেছে তাদের উপর।

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিজে টিউশনির টাকা দিয়ে চলে এবং এদের উল্লেখযোগ্য অংশ বাড়িতে টাকা পাঠায় বাবা-মার চিকিৎসা কিংবা ছোট ভাইবোনের লেখাপড়া চালানোর জন্য। এখন কারও কোন টিউশনি না থাকায় তারা নিজেদের মেসভাড়া দিতে পারছে না, নিয়মিত দুবেলা খেতে পারছে না, বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারছে না ফলে তারা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। তাদের এই অনিশ্চিত পথচলা কবে শেষ হবে তা কেউ জানে না। দেশ থেকে করোনাভাইরাস দূর হলেও আগের টিউশনি থাকবে কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নেই। মেস মালিকদের ভাড়ার চাপ, গ্রামে বাবা-মার জন্য টাকা পাঠানোর তাগিদসহ নানা কারণে আজ তারা দিশেহারা। সরকার বিভিন্ন সেক্টরে নানাবিধ প্রণোদনা দিলেও শিক্ষার্থীদের জন্য কোন প্রণোদনা ঘোষণা করেনি। তাদের সঙ্কট সহজেই দূর হবে বলে মনে হচ্ছে না। চাকরির বিজ্ঞপ্তি বন্ধ থাকায় লেখাপড়া শেষ করে কোথাও আবেদন করতে পারছেন না কেউ। অনেকের বয়স শেষ হয়ে গেছে ছুটি চলাকালীন সময়ে। তাদের বিষয়ে সরকারের কোন সিদ্ধান্ত না থাকায় চরম হতাশায় দেশের লাখ লাখ চাকরিপ্রার্থী।

শিক্ষাব্যবস্থা চালু রাখার জন্য সরকার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নানাবিধ চেষ্টা করে যাচ্ছে। সরকার টেলিভিশনের মাধ্যমে ক্লাসের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু কথা হচ্ছে বাংলাদেশের কতটি পরিবারের নিজস্ব টেলিভিশন আছে ? এক্ষেত্রে ধনীক শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা উপকৃত হলেও মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছে। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি স্কুল এবং কলেজ তাদের শিক্ষার্থীদের বকেয়া ছয় মাসের বেতন পরিশোধ করার জন্য নোটিস করেছেন। যেখানে অভিভাবকরা সংসার সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে হঠাৎ করে ছয় মাসের বেতন পরিশোধ করা অনেকের জন্য কষ্টসাধ্য ব্যাপার যার ফলে অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অনেক অভিভাবক জেলা শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাচ্ছে ফলে শিক্ষার্থীদের অনেকেই গ্রামে গিয়ে লেখাপড়া বাদ দিয়ে অন্য কাজে যোগদান করবে। দেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে অনলাইনে শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেছেন। ফলে নতুন করে সঙ্কটে পড়েছেন অভিভাবকরা। এদেশের অধিকাংশ পরিবারের জন্য ল্যাপটপ, কম্পিউটার, এনড্রয়েড মোবাইল নতুন শব্দ। করোনাকালীন সময়ে সংসারের অন্যান্য খরচের পাশাপাশি তাদের প্রিয় সন্তানের জন্য এগুলো কিনার মতো বিলাসিতা দেখাতে পারছে না। ফলে পিতা এবং সন্তানের মধ্যে ভালবাসায় চিড় ধরছে। শিক্ষাব্যবস্থায় ধনী এবং গরিবের আসল চিত্র ফুটে উঠেছে। করোনাকালে শিক্ষাব্যবস্থাটা চলে যাচ্ছে ধনীদের কাছে এবং ছিটকে পড়ছে গরিবরা।

চরম সঙ্কটে পড়েছে শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ক্লাস, পরীক্ষা, রেজাল্ট, গবেষণা সবকিছুই বন্ধ রয়েছে। তৈরি হচ্ছে সেশনজট। ভেঙ্গে পড়ছে ক্লাসের সিডিউল। শিক্ষার্থীর অভাবে অনেক স্কুল কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অনেক শিক্ষক ছাঁটাই করবেন খরচ কমানোর জন্য। বাড়িভাড়া বাকি পড়ায় ভাড়ায় চালিত অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলে ভেঙ্গে পড়তে পারে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। বলা যায় করোনাভাইরাস মোকাবেলাকালীন সময়ে শিক্ষা, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক সকলেই চরম সঙ্কটে আছেন। সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে এ সঙ্কট মোকাবেলায়। প্রণোদনা ঘোষণা করতে হবে শিক্ষাখাতে যাতে উপকার ভোগ করতে পারেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের মেসভাড়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বকেয়া বেতন পরিশোধে সরকারকে এগিয়ে আসার পাশাপাশি তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য কনসালটেন্ট নিয়োগ করতে হবে। মনে রাখতে হবে আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামীর বাংলাদেশ। আগামীর বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে এখনি এগিয়ে আসতে হবে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে তা না হলে করোনার মতো হারিয়ে যাবে এদেশের শিক্ষাব্যবস্থা এবং শিক্ষার্থীরা।

লেখক : মোঃ হেদায়েত উল্লাহ তুর্কী, সহকারী রেজিস্ট্রার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান প্রধান বিচারপতির উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষক হতে চান না শিক্ষক দম্পতিদের কৃতী সন্তানরা - dainik shiksha শিক্ষক হতে চান না শিক্ষক দম্পতিদের কৃতী সন্তানরা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027940273284912