করোনা ভাইরাস বর্তমানে বিশ্ববাসীর কাছে এক বিশাল সংকটের নাম। বিশ্বের বড় বড় ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোও হিমসিম খাচ্ছে এ দুর্যোগ মোকাবেলায়। এরই মধ্যে সোয়া লাখ পেরিয়েছে মৃতের সংখ্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ইতোমধ্যে করোনা বা কোভিড-১৯ কে Pandemic বা বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান পানি দিয়ে হাত ধুলে বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ অনেকটাই প্রতিহত করা যায়। নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে এই বিধি মেনে নিয়মিত কিছুক্ষণ পরপর হাত পরিষ্কার করছেন সচেতন জনগণ। বিপত্তির শুরু সেখানেই!
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, একটি পানির ট্যাপ ২০ সেকেন্ড ধরে চালু থাকলে খরচ হয় প্রায় ২ লিটার পানি। একজন মানুষ যদি ট্যাপ চালু রেখে প্রতিদিন অন্তত ৫ বার হাত পরিষ্কার করে তার খরচ করা পানির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১০ লিটার। পরিমাণটা খুব বেশি মনে না হলেও যদি ব্যাপারটা বাংলাদেশের ১৫ কোটি মানুষের ক্ষেত্রে হয় তখন? তখন এর পরিমাণ দাঁড়াবে প্রতিদিন প্রায় ১৫০ কোটি লিটার পানি!
আরেকটু বড় করে চিন্তা করলে আমরা যখন সারা বিশ্বের কথা বলবো, তখন আমাদের প্রায় ৮ বিলিয়ন মানুষদের প্রায় ৮০ বিলিয়ন লিটার পানি অপচয় হবে প্রতিদিন! এই পরিমাণটা অবশ্যই অনেক বিশাল। প্রতিদিন যদি এরূপ ১৬ বিলিয়ন লিটার পানি অতিরিক্ত অপচয় করা হয় তবে খুব শীঘ্রই বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়তে পারে বিশ্ববাসী।
পৃথিবীর মোট পানির মাত্র ২ দশমিক ৫০ থেকে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ হলো বিশুদ্ধ ব্যবহার যোগ্য পানি। বাকি প্রায় ৯৭ শতাংশ পানিই লবণাক্ত। আমরা নিত্যদিনের ব্যবহারে, কৃষি ক্ষেত্রে, কল-কারখানায়সহ নানাভাবে এই বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করছি প্রতিনিয়ত।
ইতোমধ্যেই মাটির নিচের ওয়াটার টেবিল অনেক নিচে নেমে গিয়েছে। প্রতিনিয়ত ব্যবহারের ফলে ক্রমান্বয়ে পানির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। যদি আমরা এই পানির অপচয় রোধ না করি তাহলে নিকট ভবিষ্যতে আমাদের এর চরম মূল্য দিতে হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা যাচ্ছে। আমরা যদি যথেষ্ট সচেতন না হই তাহলে এক সময় হয়তো সমগ্র দেশেই নিরাপদ পানির অভাব দেখা দেবে এবং বাংলাদেশ মরুভূমি হওয়ার উপক্রম হবে। যা একটি কৃষিপ্রধান দেশের জন্য মোটেই কাম্য নয়।
সুতরাং আমাদের সবাইকে খুবই সচেতনতার সাথে পানির পরিমিত ব্যবহার করতে হবে। পানির অপচয় রোধ করতে হবে। তাই ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার সময় অবশ্যই পানির কল/ট্যাপ বন্ধ রাখুন। নিরাপদ থাকুন, সুস্থ থাকুন। পরিবেশকেও বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করুন।
লেখক : মো. আসাদুজ্জামান সজল, শিক্ষার্থী, পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, নোয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন।]