করোনা : রূপান্তরের পর বিশ্বব্যাপী মানুষ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

দুনিয়া কাঁপানো এই ভাইরাসটি উৎপন্ন হয়েছিল চীনের উহান শহরে, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে। শুরুতেই এর পরিচয় পাওয়া যায়নি। শুধু বলা হয়েছিল ‘ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে’ এরকম এক ভাইরাস। কিন্তু পরে এই ভাইরাসটি যখন ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে তখন জানা যায় যে এটিও একটি করোনাভাইরাস।

এই ভাইরাস যখন এশিয়ার দেশ চীন থেকে সীমান্ত পার হয়ে ইউরোপ ও আমেরিকাতে চলে আসে তখন বিজ্ঞানীরা এর জিন সিকোয়েন্সিং করে তার নাম দেন D614, কিন্তু পরে এটি ছড়িয়ে পড়তে পড়তে নিজের গঠন ও চরিত্রে কিছু পরিবর্তন সাধন করে, বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলা হয় রুপান্তর। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষ থেকে মানুষের সংক্রমণের সময় একেক অঞ্চলে এই ভাইরাসটির একেক ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে। দফায় দফায় এই পরিবর্তন বা এই রুপান্তরের পর বর্তমানে যে ধরনের করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী মানুষ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, বিজ্ঞানীরা তাকে চিহ্নিত করেছেন G614 হিসেবে। এই ভাইরাসে সারা পৃথিবীতে এখনও পর্যন্ত অন্তত এক কোটি আট লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে পাঁচ লাখ ২০ হাজার।

দ্রুত ছড়ায় :

আন্তর্জাতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানের করোনাভাইরাসটি আসল ভাইরাসটির চেয়ে অনেক বেশি সংক্রামক। অর্থাৎ শুরুতে এই ভাইরাসটি মানুষের শরীরে যতোটা সংক্রমিত হতো, রুপান্তরের পর বর্তমান ভাইরাসটি তার চেয়েও বেশি সংক্রমিত হচ্ছে। তবে এটি আসল ভাইরাসের চেয়ে মানুষকে আরো বেশি অসুস্থ করে দেয় কীনা সেবিষয়ে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত লোকের নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলোর জিন বিন্যাসের মাধ্যমে এই গবেষণা পরিচালিত হয়েছে যার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী ‘সেলে’, গত সপ্তাহে। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের কিছু গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে এই গবেষণাটি চালিয়েছে।

গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এমন একজন বিজ্ঞানী এরিকা ওলমান মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএনকে বলেছেন, “এই করোনাভাইরাসটিই এখন প্রাধান্য বিস্তার করছে। এটাই এখন করোনাভাইরাস।”

করোনাভাইরাসের রুপান্তরের বিষয়ে বিজ্ঞানীদের এই দলটি আগেও গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।

কারণ কী?

জিন বিন্যাসের সাথে সাথে বিজ্ঞানীরা এখন পরীক্ষাগারে মানুষ ও প্রাণীর কোষের ওপরেও পরীক্ষা চালিয়েছে এবং তাতে দেখা যাচ্ছে যে রুপান্তরিত ভাইরাসটি এখন আগের ভাইরাসের চেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এখন তারা জানতে পারছেন যে পরিবর্তিত ভাইরাসটি সংক্রমণের দিক থেকে আসল ভাইরাসের তুলনায় শক্তিশালী।

তারা বলছেন যে করোনাভাইরাস কোন একটি কোষকে আক্রান্ত করার সময় তার ভেতরে ঢুকতে স্পাইক প্রোটিনের কাঠামো ব্যবহার করে থাকে এবং রুপান্তরের ফলে সেই কাঠামোতেও পরিবর্তন ঘটে। গবেষকরা এখন পরীক্ষা করে দেখছেন টিকার সাহায্যে এই ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে আনার ওপর এই পরিবর্তনের কোন প্রভাব পড়ে কীনা।

বর্তমানে ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের লক্ষ্যে যেসব গবেষণা চলছে তার বেশিরভাগই এই স্পাইক প্রোটিনকে টার্গেট করেই করা হচ্ছে। জীব বিজ্ঞানী বেটি কোরবার ও তার সহকর্মীরা গবেষণা রিপোর্টে লিখেছেন, “সারা বিশ্বে যেসব সংক্রমণ ঘটছে তাতে দেখা যাচ্ছে করোনাভাইরাসের বর্তমান G614 ধরনটি শুরুর D614 ধরনের তুলনায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।”

“এর ব্যাখ্যা হতে পারে যে পরিবর্তিত ভাইরাসটি অনেক বেশি সংক্রামক। তবে রোগ কতোটা গুরুতর হবে তাতে নতুন ভাইরাসের ভূমিকা কী সেবিষয়ে আমরা কোন প্রমাণ পাইনি।”

ব্রিটেনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এমন এক হাজার রোগীর ওপর পরীক্ষায় দেখা গেছে আগের ভাইরাসের তুলনায় নতুন ভাইরাসের কারণে তারা যে আরো বেশি অসুস্থ হয়েছে সেরকম কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউচি বলেছেন, “তথ্য উপাত্তে দেখা যাচ্ছে রুপান্তরের ফলে ভাইরাসটি দ্রুত প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে। হয়তো এর ফলে এটি বেশি সংক্রামক। তবে এই ধারণা এখনও নিশ্চিত নয়।”

কীভাবে ছড়ায়:

গবেষণায় দেখা গেছে ১লা মার্চ অবধি করোনাভাইরাসের G614 ধরনটি ইউরোপের বাইরে ছিলো বিরল। কিন্তু মার্চ মাসের পর সারা বিশ্বেই এর সংখ্যা বাড়তে থাকে। বিজ্ঞানীর বলছেন, করোনাভাইরাসের পরিবর্তিত ধরনটির সবচেয়ে দ্রুত বিস্তার ঘটে নাক, সাইনাস ও গলায়। এবং একারণেই এটি খুব সহজে আশেপাশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, রুপান্তরিত ভাইরাসটির দ্রুত ও বেশি মাত্রায় বেড়ে ওঠার কারণে, এটিকে নির্মূল করতে মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতাকে আরো সক্রিয় হতে হবে।

তবে এই ভাইরাসের যে আর রুপান্তর ঘটবে না তা নয়। এই পরিবর্তন অব্যাহত থাকলে এর পরের ভাইরাসের সংক্রমণ শক্তি বর্তমান ভাইরাসটিকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।

সূত্র : বিবিসি বাংলা


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0047659873962402