করোনা : সাধারণ সর্দি-কাশি আর গলাব্যথা হলে কী করবেন?

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বাংলাদেশে সর্দি-কাশির মতো সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যায় যারা ভুগছেন, তাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হাসপাতালে পৃথক ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা জানিয়েছেন। শুক্রবার (৩ এপ্রিল) বিবিসি অনলাইনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে সর্দি-কাশির মতো সমস্যায় অনেকে চিকিৎসা পরামর্শ পাচ্ছেন না, এমন অভিযোগ ওঠার পর সরকারি এই সিদ্ধান্ত জানানো হলো।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ঋতু পরিবর্তনের সময় বাংলাদেশের মতো দেশে সর্দি-কাশি একটি সাধারণ বিষয়।

বাংলাদেশে প্রতিবছর মার্চ-এপ্রিল মাসে সর্দি-কাশির প্রাদুর্ভাব থাকে বলে চিকিৎসকরা জানান। তাদের ভাষায়, এটি সিজনাল ইনফ্লুয়েঞ্জা।

এখন যেহেতু বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণের মহামারি চলছে, সেজন্য সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়েও অনেকে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণের মধ্যেও সর্দি-কাশি রয়েছে।

তিনি বলেন, বছরের এই সময়টিকে অনেকেরই মৃদু জ্বর ও সর্দি-কাশি থাকে। কিন্তু এখন অনেকে আগের চেয়ে বেশি ভয় পাচ্ছেন। ফলে হাসপাতালেও বেশি মানুষ আসার চেষ্টা করে। চিকিৎসকদের কাছেও অনেকে টেলিফোন করে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পরামর্শ দিয়েছেন, কারো যদি জ্বর থাকে এবং সামান্য গলা ব্যথা থাকে, তাহলে বাড়িতে অবস্থান করে চিকিৎসা নেয়া ভালো।

জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল এবং কুসুম গরম পানি পানের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

এছাড়া তিনি বলেন যে গলা ব্যথা থাকলে কুসুম গরম পানি দিয়ে গার্গল করা যেতে পারে। সর্দি-কাশির জন্য অ্যান্টি-হিস্টামিন জাতীয় ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

"যদি অবস্থা একদম জটিল না হয় তাহলে হাসপাতালে আসার প্রয়োজন নাই," বলছিলেন মি. আজাদ।

তিনি জানান, সরকার হাসপাতালগুলোতে পৃথক আউটডোর ও ইমার্জেন্সি বিভাগ খোলার চেষ্টা করছে, যেখানে সর্দি-কাশির রোগী বা এই ধরণের সমস্যায় যারা আছেন, তারা যেতে পারেন।

তিনি বলেন, "যদি করোনা সন্দেহ করা হয়, তাহলে একথা বলবো না যে সাধারণ হাসপাতালে অন্যান্য রোগীর সাথে তাদের ভর্তি করা হবে।"

মহাপরিচালক জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য যেসব হাসপাতাল নির্ধারিত রয়েছে, সেসব জায়গায় সন্দেহভাজন রোগীদের পাঠানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মৌসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জার কারণে হঠাৎ জ্বর, শুষ্ক কাশি, মাথাব্যথা, মাংসপেশীতে ব্যথা হতে পারে। এছাড়া হতে পারে গলা ব্যথা এবং সর্দি।

এক্ষেত্রে কফ মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে এবং এই অবস্থা দুই সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে। আর অধিকাংশ মানুষ কোন চিকিৎসা ছাড়াই সপ্তাহ খানেকের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন বলে জানাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু ঠেকানো পাঁচটি উপায়
খুব সামান্য কারণেই ঠাণ্ডা বা সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হতে পারেন যে কেউ। সাধারণত কয়েকদিনের মধ্যেই মানুষের সর্দি-জ্বর ভালও হয়ে যায়।

তবে কয়েকটি উপায়ে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত সময়ে সর্দি-জ্বর ভাল করা সম্ভব বলে মনে করেন চিকিৎসকেরা।

মৌসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু প্রতিরোধের জন্য পাঁচটি পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

১. টিকা নেয়া
ফ্লু থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রতিবছর টিকে নিতে পারেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সাধারণত গর্ভবতী নারীদের জন্য এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া ছয়মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের জন্যও এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

২. নিয়মিত হাত ধোয়া
নিয়মিত হাত পরিষ্কার রাখলে ফ্লু ছাড়াও অন্যান্য সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায়। সাবান দিয়ে ভালো মতো হাত ধোয়ার পর তা মুছে শুকনো করে নেবার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

৩. চোখ-নাক-মুখ স্পর্শ নাকরা

এই তিনটি স্থান দিয়ে মূলত শরীরে জীবাণু প্রবেশ করে। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে যা কিছু ভেতরে প্রবেশ করছে, তার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তবে মুখ হাত না দিয়ে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকটা কমিয়ে আনা যেতে পারে।

৪. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা
ফ্লু একটি সংক্রামক বিষয়। যেখানে জনসমাগম বেশি সেখানে ফ্লু বেশ দ্রুত ছড়ায় - এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, হাসপাতাল এবং যে কোন ধরণের গণজমায়েত। ফলে এ ধরণের জমায়েত এড়াতে পারলে অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার ঝুঁকি কমে।

৫. শরীর খারাপ লাগলে বাসায় থাকুন
আপনি যদি ফ্লু'র মাধ্যমে অসুস্থ হন, তাহলে অন্যদের সংস্পর্শে গেলে তারাও অসুস্থ হতে পারেন।

যারা ক্যান্সার বা হৃদরোগে ভুগছেন কিংবা এইচআইভি পজিটিভ - তাদের জন্য এটি বেশি ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। ফ্লু হওয়া মাত্র নিজেকে অন্যদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখলে ভাইরাসের বিস্তার থামানো সম্ভব।

এছাড়া চিকিৎসকরা আরো যেসব পরামর্শ দেন, সেগুলো হচ্ছে -

উষ্ণ পরিবেশ
সর্দি-জ্বরের সময় উষ্ণ পরিবেশে থাকা বা উষ্ণ পোশাক পড়ে থাকলে ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

প্রচুর তরল পান
প্রচুর পরিমাণ পানি বা ফলের রস পানের মাধ্যমে পানিশূন্যতা রোধ করলে ঠাণ্ডা থেকে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা যেতে পারে।

গলার যত্ন নিন
ঠাণ্ডার একটি সাধারণ উপসর্গ গলা ব্যথা। লবণ পানি দিয়ে গার্গল করা অথবা লেবু ও মধু দিয়ে হালকা গরম পানীয় তৈরি করে পান করলে গলা ব্যথার দ্রুত উপশম হতে পারে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037910938262939