চলতি করবর্ষের নিয়মিত সময়ে রিটার্ন জমা দিয়েছেন ইটিআইএনধারীর অর্ধেকেরও কম। ফলে কর পরিশোধে সক্ষমতা থাকার পরও যারা রিটার্ন জমা দেননি তাদের খোঁজে নামছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চলতি করবর্ষে কেউ রিটার্ন জমা না দিলে বা রিটার্নে মিথ্যা তথ্য দিলে তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
গতকাল সোমবার থেকে এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে এনবিআরের বিভিন্ন কর অঞ্চলের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত একাধিক কমিটি। এসব কমিটি প্রথম ধাপে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, বিলাসবহুল গাড়ির মালিক, বিভিন্ন করপোরেট হাউজে কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্যরা রিটার্ন জমা দিয়েছেন কি না তার তথ্য খতিয়ে দেখবে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন নামিদামি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অভিভাবকদের নামের তালিকা সংগ্রহ করা হবে। স্কুল থেকে অভিভাবকরা কে কী করেন, কোথায় থাকেন, সব তথ্যই সংগ্রহ করা হবে। এরপর খোঁজ নেওয়া হবে তারা রিটার্ন দাখিল করেছেন কি না। এর আগে এনবিআরের তদন্তে দেখা গেছে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অনেক অভিভাবক রিটার্নে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। অনেকে ব্যবসায়ে লোকসান দেখিয়েছেন। অনেকে আবার ব্যবসা করলেও রিটার্ন জমা দেননি।
অতীতে এনবিআরের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর থেকে জাল কাগজপত্র নিয়ে রাস্তায় চলছে এমন প্রায় শতাধিক বিলাসবহুল গাড়ি চিহ্নিত করেছে এনবিআর। এসব গাড়ির মালিক মিথ্যা ঘোষণায় আনা গাড়ি কিনেছেন বা আমদানি করে ব্যবহার করেছেন। চলতি করবর্ষে গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে বিলাসবহুল গাড়ির মাালিকদের চিহ্নিত করে রিটার্ন জমার তথ্য খতিয়ে দেখা হবে।
এনবিআর সূত্রে আরও জানা গেছে, সাধারণত বিভিন্ন করপোরেট হাউজ থেকে তাদের কর্মকর্তাদের কর পরিশোধ করে থাকে। অনেক সময় রিটার্ন জমা দিয়ে দেয় বা রিটার্ন জমার কাজে সহযোগিতা করে থাকে। এর আগে এনবিআরের তদন্তে দেখা গেছে, করপোরেট হাউজ থেকে এনবিআরের পাওনার কম রাজস্ব পরিশোধ করেছে।
ইটিআইএনধারীর অর্ধেকও রিটার্ন জমা দেননি : বর্তমানে কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (ইটিআইএন) আছেন ৮২ লাখের কিছু বেশি। অর্থাৎ এসব ব্যক্তি করজালের আওতায় আছেন। প্রত্যেক ইটিআইএনধারী করদাতার রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতা থাকলেও এবার নিয়মিত সময়ের মধ্যে (১ জানুয়ারি) রিটার্ন জমা দিয়েছেন ২৮ লাখ ৫১ হাজার করদাতা। আরও ২ লাখ ৫০ হাজার করদাতা চলতি করবর্ষে রিটার্ন জমা দেওয়ার সুযোগ চেয়ে আবেদন করেছেন।
চলতি করবর্ষে নিয়মিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন জমা দিয়ে আয়কর পরিশোধ হয়েছে ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার রিটার্ন দাখিলে প্রবৃদ্ধির হার ২৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ। গত বছর এ সময় পর্যন্ত রিটার্ন দাখিল করেছিলেন ২২ লাখ ৯৯ হাজার ৬২৫ করদাতা। গত করবর্ষে আয়কর আদায় হয়েছিল ৩ হাজার ২৮১ কোটি টাকা।