দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: কলকাতায় রাতভর তল্লাশি চালিয়েও উদ্ধার করা যায়নি ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের খণ্ডিত দেহ। কলকাতা পুলিশের সিআইডি জানায়, গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা এমপি আজীমের খণ্ডিত দেহ ফেলার বেশ কিছু স্থান চিহ্নিত করেন। পরে সেখানে কুকুর দিয়ে তল্লাশি চালিয়েও কিছু পাওয়া যায়নি।
সিআইডির তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আজীমকে হত্যার পর পেশাদার অপরাধীর মতো লাশ টুকরো টুকরো করে হলুদ মিশিয়ে রাখা হয়। এ জন্য প্রশিক্ষিত কুকুরের পক্ষেও তা শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। আর লবণ মিশিয়ে রাখার কারণে দ্রুত মাংস পচে-গলে গেছে। তবে হাড়গুলো কোথায় ফেলা হয়েছে, সে বিষয়ে কিনারা করতে পারেনি সিআইডি।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পশ্চিমবঙ্গের পুলিশের ব্যর্থতার কারণে পরিকল্পনাকারীদের উদ্দেশ্য অনেকাংশে সফল হয়েছে। তারা লাশ গুম করতে অনেক সময় পেয়েছে। কারণ, ১৩ মে হত্যাকাণ্ডের পরে এবং পুলিশি তৎপরতা শুরুর মাঝে কেটে গেছে আট দিন। এ সময়ের মধ্যে শহরের ময়লা-আবর্জনা বেশ কয়েকবার পরিষ্কার হয়েছে। এমনকি ভারী বৃষ্টিতে সব ধুয়ে গেছে।
সিআইডির কর্মকর্তারা বলছেন, এমপি আজীম হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আখতারুজ্জামান শাহীনের কলকাতায় উপস্থিতির একাধিক তথ্য তাদের কাছে রয়েছে। কলকাতা বিমানবন্দরের কাছে একটি তিনতারা হোটেলের পানশালায় হত্যাকাণ্ডের আরেক দফা পরিকল্পনা করেন শাহীন। এমপি আজীম যে ১২ মে কলকাতা যাবেন, তা আগে থেকেই জানতেন তিনি। সেই মতো তাঁকে হত্যার জন্য সঙ্গীদের সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলেন শাহীন।
সিআইডি জানায়, বৃহস্পতিবার আজীম হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যতম সন্দেহভাজন সিয়ামকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তসংলগ্ন বনগাঁ জেলার বাগদা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যার পর হাড় থেকে মাংস আলাদা, সেগুলো প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ফেলার কাজে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত সিয়াম। হত্যাকাণ্ডের ১০ দিন আগে কলকাতা শহরে আসে সিয়াম। এরপর কিছুদিন ছিল মুম্বাইতে।
গোয়েন্দাদের দাবি, সিয়ামকে নিয়ে শাহীন হত্যাকাণ্ডের ছক কষলেও সঠিক এক্সিট প্ল্যান তাঁকে জানাননি। ফলে হত্যাকাণ্ডের পর অভিযুক্তদের পাঁচজন বাংলাদেশে ফিরে যায়। তারা সিয়ামের পাসপোর্ট সঙ্গে নিয়ে যাওয়ায় তিনি ফিরতে পারেননি। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের পর কলকাতায় পুলিশি তৎপরতা শুরু হলে পাসপোর্ট না থাকায় অবৈধ পথে বাংলাদেশে ফেরার চেষ্টা করেন সিয়াম।
একই ঘটনায় জুবের নামে ক্যাবচালককেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। গতকাল ভোররাতে তাঁর গাড়িও জব্দ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে জুবের জানিয়েছেন, ১৪ মে এক নারী ও দুই ব্যক্তিকে স্যুটকেসসহ অ্যাক্সিস শপিংমলের সামনে নামান তিনি। অন্যদিকে সিআইডি সিসিভিটি ফুটেজ দেখে জানতে পেরেছে, অ্যাক্সিস শপিংমলে নামানোর আগে নজরুল তীর্থের কাছে গাড়িটি ১৫ মিনিট দাঁড়িয়েছিল। সে সময় এমপি আজীমের খণ্ডিত দেহ কোথায় কোথায় ফেলা হবে, তার সিদ্ধান্ত হয়। তাদের সে আলোচনা শুনে থাকতে পারেন গাড়িচালক। সিআইডি মনে করে, চালক অনেক কিছুই জানেন; কিন্তু বলছেন না।