কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে ফের ফিরেছে ধর্ম

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বিদায় দেওয়ার সময় আলোচনা-বিতর্ক-প্রচার হয়েছিল প্রচুর। কিন্তু ফিরিয়ে আনার সময় তেমন হইচই হয়নি। সে যে ফিরে এসেছে, এখন তা প্রকট হওয়ায় শুরু হয়েছে গুঞ্জন।  সোমবার (৩ জুন) আনন্দবাজার পত্রিকায় এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২৬ বছর আগে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, স্নাতকোত্তর স্তরে ভর্তির ফর্মে আবেদনকারী পড়ুয়াকে ধর্মের উল্লেখ করতে হবে না। একবিংশ শতাব্দীতে এসে, ২০০৮-০৯ নাগাদ কর্তৃপক্ষ সেই সিদ্ধান্তের বদল ঘটিয়েছিলেন। এখন ভর্তির ক্ষেত্রে ধর্ম উল্লেখ করতে হয়। অবশ্য এ ক্ষেত্রে ‘আদার’ বা অন্যান্য লেখারও সংস্থান রয়েছে।

ভর্তির আবেদনপত্রে ধর্মের উল্লেখ বন্ধ করা হোক, ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেটে এই প্রস্তাব পেশ করেন অন্যতম সদস্য ও চিকিৎসক আবীরলাল মুখোপাধ্যায়। বিষয়টি বাস্তবায়িত করার জন্য একটি কমিটি গড়া হয়। ওই বছরের ডিসেম্বরে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের জেরে অশান্ত হয়ে উঠেছিল কলকাতাও। তার কিছু দিন পরে সেই কমিটি রিপোর্টে বলেছিল, কোনও পরিস্থিতিতেই কোনও ছাত্র বা ছাত্রীকে তাঁর ধর্ম দিয়ে চিহ্নিত করা চলে না। এটা ধর্মনিরপেক্ষতার বিরোধী। এই ধরনের তথ্য পড়ুয়ার কাছে না-চাওয়াই বিধেয়। ১৯৯৩-এর ২৯ জানুয়ারি সেনেট বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ভর্তির আবেদনপত্রে ধর্মের উল্লেখ থাকবে না। সিপিএমের তৎকালীন রাজ্য সম্পাদক এবং সেনেট-সদস্য অনিল বিশ্বাস সেই বৈঠকে বলেছিলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকেও ভর্তির ফর্মে ধর্মের উল্লেখ বন্ধ করা দরকার। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক রোববার জানান, বছর পনেরো এই পদ্ধতিতেই আবেদন করা যেত। কিন্তু কয়েকটি বিষয়ে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছিল। ২০০৫-এ দেশের মুসলিমদের আর্থ-সামাজিক ও শিক্ষাগত অবস্থান খতিয়ে দেখতে তৈরি হয়েছিল সাচার কমিটি। তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম পড়ুয়াদের সম্পর্কেও তথ্য জানতে চায়। কিন্তু তার বেশ কিছু বছর আগেই ভর্তির ফর্মে পড়ুয়াদের ধর্মীয় পরিচয় জানানো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাই সেই সময় ওই তথ্য দিতে খুবই অসুবিধা হয়। তা ছাড়া সংখ্যালঘুদের বেশ কিছু মেধাবৃত্তি থাকে। সেই সব ক্ষেত্রেও তথ্যের চাহিদা পূরণে অসুবিধা হচ্ছিল। এই সব দিক বিবেচনা করে আবার নিয়ম পরিবর্তন করা হয়। ‘‘১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে ধর্মের উল্লেখ তুলে দেওয়ার বিষয়টি যতটা প্রচার পেয়েছিল, তা ফিরিয়ে আনার বিষয়টি ততটা প্রচার পায়নি,’’ বলেন ওই আধিকারিক।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন এমটেক ও হোম সায়েন্স পাঠ্যক্রমে ভর্তি চলছে। অনলাইনে এই ভর্তির ফর্মে ধর্ম ‘কলাম’ বা স্তম্ভ আছে। আবেদনকারীরা তাঁদের ধর্ম জানাতে পারেন। তবে ‘আদার’ বা ‘অন্যান্য’-এর বিকল্পও আছে। হোম সায়েন্স বিভাগে ভর্তির ফর্মে ধর্মের পাশে লেখা ‘ফর স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনটারেস্ট অনলি’ (নিছক তথ্য-পরিসংখ্যানের খাতিরে)। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা জানান, বিভিন্ন কলেজে ধর্মের জায়গায় মানবতা, ঈশ্বর অবিশ্বাসী, নাস্তিক ইত্যাদি লেখা নিয়ে হইচই চলছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু ধর্ম কথাটি তুলে দেওয়ার কথা ভেবেছিল গত শতাব্দীতেই।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান প্রধান বিচারপতির উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষক হতে চান না শিক্ষক দম্পতিদের কৃতী সন্তানরা - dainik shiksha শিক্ষক হতে চান না শিক্ষক দম্পতিদের কৃতী সন্তানরা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028610229492188