জাতীয় জরুরি সেবা এখন ভরসা হয়ে উঠছে মানুষের। পারিবারিক নির্যাতন, ধর্ষণ, বাল্যবিবাহ, সাইবার অপরাধ, অগ্নিকা-, সড়ক দুর্ঘটনাসহ যেকোনো বিপদে ৯৯৯ মুহূর্তের মধ্যে সাড়া দিচ্ছে। নানামুখি সমস্যার প্রতিকার চেয়ে প্রতিদিন ৯৯৯-এ ফোন করে ৪শ’র বেশি সেবাগ্রহীতা। ফোন করে বলতে হতো তাদের নাম, ঠিকানা ও অবস্থান। সেবাদানকারী সংস্থাটিকে পড়তে হবে না বিড়ম্বনায়। গ্রাহকের অবস্থান, নাম ও ঠিকানা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসবে ৯৯৯-এ। ফোন করে আর বলতে হবে না নাম, ঠিকানা ও অবস্থান। কলার লোকেশন ট্র্যাকারের মাধ্যমে চলে আসবে ভুক্তভোগীর সকল তথ্য। সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠার পর থেকে কলার লোকেশন ট্র্যাকার না থাকায় ৯৯৯-এ ফোন করলে গ্রহককে তার নাম, ঠিকানা বলতে হতো। অনেক বিপদগ্রস্ত মানুষ ওই সময় তার সঠিক অবস্থান জানাতে পারেন না সংস্থাগুলোর সেবাদানে পড়তে হতো বিড়ম্বনায়। এসব সমস্যার সমাধান পেতে যুক্ত হচ্ছে কলার লোকেশন ট্র্যাকার। এটি চালু হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সকল তথ্য চলে আসবে ৯৯৯-এর কাছে। এই কলার লোকেশন ট্র্যাকারটি ইতিমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছে।
জাতীয় জরুরি সেবার তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ৩১শে জানুয়ারি পর্যন্ত ৯৯৯ নম্বরে ৪ কোটি ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার ৫৬১টি কল এসেছে। এরমধ্যে ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৮২টি কল সরাসরি সমাধানযোগ্য ছিল। মোট কলের ১ কোটি ৮০ লাখ ৬৬ হাজার ৬২২টির বিপরীতে কোনো না কোনোভাবে সেবা দেয়া হয়েছে। গত ৫ বছরেরও বেশি ২ কোটি ৫৭ লাখ ৮৮ হাজার ৯৩৯টি অপ্রয়োজনীয় কল এসেছে। এরমধ্যে বিরক্তিকর কল এসেছে ২৩ লাখ ১১ হাজার ৯৬৫টি। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে মিসকল দিয়েছে ৪৩ লাখ ৬ হাজার ৮৫টি। ব্লাঙ্ক কল এসেছে ১ কোটি ৮৪ লাখ ৯০ হাজার ৩০৯টি। এরমধ্যে পুলিশি সহায়তা পেতে কল এসেছে ৮ লাখ ৩৬ হাজার ৭০৩টি। এ ছাড়া অগ্নিকা-ের ঘটনায় ৯৩ হাজার ৫৯০টি, এম্বুলেন্স সার্ভিসের জন্য ১ লাখ ৯ হাজার ৮৩৫টি কল আসে। মোট ফোন কলের নারীদের ফোনের সংখ্যা ৩ লাখ ৫৯ হাজার ২১৬টি এবং শিশুদের ৯ লাখ ৫২ হাজার ৮০৪টি ফোন কল। ৯৯৯ দেশের যেকোনো জায়গায় ২৪ ঘণ্টা নাগরিকের জরুরি মুহূর্তে ও প্রয়োজনে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও এম্বুলেন্স সেবা প্রদানে সবসময় প্রস্তুত থাকে। এ ছাড়া ২৪ ঘণ্টায় ৩ শিফটে কাজ করছেন সাড়ে ৪শ’ জন কর্মী। এখন একসঙ্গে ফোনদাতাদের ১০০টি ফোন গ্রহণ করতে পারে সংস্থাটি। ফোন পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেয়ায় অনেক বড় বড় দুর্ঘটনা ও ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে হাজার হাজার মানুষ। সম্প্রতি চট্টগ্রামে স্পিডবোট নিয়ে সাগরে নামার সময় লিফটের তার ছিঁড়ে পড়ে যান ১২ জন চীনা নাবিক। পরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে তাদের উদ্ধার করে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড। জানা যায়, মঙ্গলবার বিকালে বঙ্গোপসাগরে চট্টগ্রামের ভাটিয়ারী উপকূলের নিকটবর্তী অবস্থানে থাকা ‘এনডিই-১৪’ লাইটার জাহাজের নাবিক আলি আজগর ৯৯৯-এ ফোন করেন। তিনি জানান, তারা চীনা পতাকাবাহী মাদার ভেসেল ‘ক্যাং হুয়ান-১’ থেকে মালামাল লোড করার জন্য সেখানে অবস্থান করছিলেন। মাদার ভেসেল থেকে ১২ জন চীনা নাবিক একটি স্পিডবোট নিয়ে সাগরে নামছিলেন। এ সময় লিফটের তার ছিঁড়ে সাগরে পড়ে স্পিডবোটটি উল্টে যায়। সে সময় দু-একজন নাবিক বের হয়ে আসতে সক্ষম হলেও বাকি সবাই উল্টানো বোটের ভেতরে আটকে ছিলেন। আশপাশের কিছু বোট এগিয়ে এলেও উল্টানো স্পিডবোটের ভেতর থেকে নাবিকদের উদ্ধার করতে সক্ষম হননি। এ অবস্থায় দ্রুত উদ্ধার সহায়তার অনুরোধ জানিয়ে ৯৯৯-এ একজন কলার ফোন করেন। ৯৯৯-এর কলটেকার কনস্টেবল আকাশ চন্দ্র নাথ কলটি রিসিভ করেন। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে কোস্টগার্ড চট্টগ্রাম পূর্ব জোন নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বিষয়টি জানিয়ে দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জানান। ৯৯৯-এর ডিসপ্যাচার এসআই জয়ন্ত ঘরামী কোস্ট গার্ড এবং কলারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে উদ্ধার তৎপরতার আপডেট নিতে থাকেন। সংবাদ পেয়ে কোস্ট গার্ড চট্টগ্রাম পূর্ব জোনের একটি উদ্ধারকারী দল দ্রুত উদ্ধারকারী নৌযানসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই চীনা নাবিকদের জীবিত উদ্ধার করে।
এদিকে রোববার ফরিদপুর সদরে কোতোয়ালি থানাধীন একটি বেসরকারি শিশু হাসপাতাল থেকে একজন মা ৯৯৯-এ ফোন করে জানান, তিনি তার ৩ মাস বয়সী ছেলে সন্তানকে ডাক্তার দেখানোর জন্য হাসপাতালে এসেছেন। একজন আয়ার কাছে শিশুটিকে রেখে টয়লেটে যান। টয়লেট থেকে এসে তিনি আয়াকে এবং তার সন্তানকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাননি। এমন তথ্য জানিয়ে আইনি সহায়তার অনুরোধ জানিয়ে ৯৯৯ নম্বরে তিনি ফোন করেছিলেন। জানা যায়, ৯৯৯-এর কলটেকার কনস্টেবল জাহাঙ্গীর আলম কলটি রিসিভ করেছিলেন। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় বিষয়টি জানিয়ে দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জানায়। সংবাদ পেয়ে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা পুলিশ এবং জেলা গোয়েন্দা পুলিশসহ একাধিক টিম শিশুটিকে উদ্ধারে তৎপর হয়। পরে জানা যায়, অভিযোগকারী মা নিজেই তার সন্তানটিকে বিক্রি করে দিয়েছেন। পরের দিন তার দেয়া তথ্যমতে ফরিদপুরের ভাঙা থানাধীন লোহারদিয়া থেকে ছেলে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।
জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর গণমাধ্যম ও জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রশিক্ষক পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার সাত্তার বলেন, জাতীয় জরুরি সেবায় অটো কলার লোকেশন ট্র্যাকার সংযুক্ত হচ্ছে। এটির পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চলছে। কিছু টেকনিক্যালি সমস্যার কারণে এখনো পুরোপুরি চালু করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, এই কলার লোকেশনের মাধ্যমে আমরা সেবাগ্রহীতাদের অবস্থান জানতে পারবো। এতে কলারদের সেবা দেয়া আরও সহজতর হবে। ফোন করার পর ৯৯৯ থেকে শুধু জানতে চাওয়া হবে সে কোন ধরনের সমস্যায় পড়েছেন। তবে তার অবস্থান জানতে চাওয়া হবে না। এই কলার লোকেশন সংযুক্তির মাধ্যমে সময়ও সেভ হবে। এটির মাধ্যমে যেকোনো জায়গায় বিপদের মুখোমুখি হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘটনাস্থলে যাওয়া এবং উদ্ধার করা সম্ভব হবে।