বরিশাল নগরীর বেগম তোফাজ্জেল হোসেন মানিক মিয়া কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী ও গৃহবধূ সুস্মিতা সরকার মিথিলাকে হত্যা মামলায় স্বামী মাইনুল ইসলাম শান্ত ও তার মা শাহনাজ মাহমুদকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ। সম্প্রতি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই সাইদুল হক এ চার্জশিট জমা দেন। মামলার এজাহারে থাকা অভিযুক্তরা হলো পিরোজপুর নাজিরপুর থানা এলাকার মনোহরপুর ফকির বাড়ির আলতাফ হোসেনের ছেলে ও স্ত্রী।
বর্তমানে তারা নগরীর কলেজ অ্যাভিনিউ ৫ম গলির ইউনুস ভিলায় বসবাস করে। মামলার এজাহারে জানা যায়, ঘটনার ৫ মাস আগে মাইনুল ইসলাম শান্ত কলেজছাত্রী সুস্মিতা সরকার মিথিলাকে বিয়ে করে। বিয়ের পর শান্ত তার স্ত্রী মিথিলাকে নিয়ে বাবার সংসারে ওঠে। কিন্তু গত ১ জুন শান্তর মা শাহনাজ মাহমুদ বিয়ে স্বীকার না করে ছেলেকে অন্যত্র বিয়ে করাবে বলে হুমকি দিয়ে মিথিলার সাথে খারাপ আচরণ করেন এবং তাদের বাসা থেকে তাড়িয়ে দেন। এতে শান্ত ওই এলাকার আফসার উদ্দিন লেনে ছালাম মিয়ার বাসা ভাড়া করে মিথিলাকে নিয়ে বসবাস শুরু করে। ওই বাসায় শান্ত তার স্ত্রী মিথিলাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে। ঘটনার দিন ৮ জুন রাত ৮টার দিকে শাশুড়ি শাহনাজ মাহমুদের প্ররোচনায় শান্ত তার স্ত্রী মিথিলাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে রাখে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় মিথিলাকে উদ্ধার করে শেবাচিম হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তার মৃত্যু হয়েছে বলে ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় একই দিন কোতোয়ালি মডেল থানায় মাইনুল ইসলাম শান্ত ও শাহনাজ মাহমুদকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেন নিহত কলেজছাত্রীর বাবা স্বপন সরকার। দায়ের করা মামলায় এসআই সাইদুল হককে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়।
আরও পড়ুন: কলেজছাত্রীকে হত্যার অভিযোগে স্বামী-শাশুড়ির বিরুদ্ধে মামলা
এসআই সাইদুল হক তদন্তে এজাহারনামীয় আসামি মাইনুল ইসলাম শান্ত ও তার মা শাহনাজ মাহমুদের বিরুদ্ধে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা খুঁজে পান। তিনি তার তদন্তে উল্লেখ করেন ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শান্তকে তার মা অন্যত্র বিয়ে করাবে এমন মন্তব্য নিয়ে মিথিলা ও শান্তর মধ্যে অশান্তি হয়। তখন শান্ত তার স্ত্রী মিথিলাকে চড়থাপ্পর মারে। পরে সে বিস্কুট কিনতে বাসা থেকে বের হয়ে দোকানে যায়। দোকান থেকে ফিরে শান্ত দরজা ভিতর থেকে বন্ধ দেখে ধাক্কাধাক্কি করে। দরজা খুলতে না পেরে সে পাশের জানালা দিয়ে দেখে মিথিলা গলায় ফাঁস দিচ্ছে। তখন সে কান্নাকাটি করলে বাড়ির মালিকসহ অন্যান্যরা এগিয়ে এসে দরজা ভেঙ্গে মিথিলাকে উদ্ধার করে। তাৎক্ষণিক তাকে শেবাচিম হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মিথিলাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তা চার্জশিটে আরও উল্লেখ করেন, মাইনুল ইসলাম শান্ত ও তার মা শাহনাজ মাহমুদের মানসিক নির্যাতনে সুস্মিতা সরকার মিথিলা অভিমানে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে গত ৭ অক্টোবর এসআই সাইদুল হক আত্মহত্যায় প্ররোচিত করার অভিযোগ এনে এজাহারনামীয় আসামি মাইনুল ইসলাম শান্ত ও তার মা শাহনাজ মাহমুদকে অভিযুক্ত করে প্রকাশ্যে আদালতে বিচার করতে ৩০৬ ধারায় চার্জশিট জমা দেন।
বর্তমানে মাইনুল ইসলাম শান্ত জামিনে থাকলেও শাহনাজ মাহমুদ জেলহাজতে রয়েছে বলে চার্জশিট থেকে জানা যায়।