সরকার প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে স্কুল ও একটি করে কলেজ জাতীয়করণের পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু মহতি এ উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত যেন বিফলে না যায়! তা নাহলে যেসব কলেজের বয়স ২-১ বছর, যেগুলোর শিক্ষার্থী সংখ্যা ২০-৫০ জন, পাসের হার ৫ শতাংশ অথবা পাসের হার একেবারে শূন্য—সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কীভাবে জাতীয়করণের জন্য মনোনয়ন পায়? এ সংক্রান্ত চারটি শর্ত রেখে নীতিমালা প্রণয়নেরই বা কী দরকার ছিল, যদি তা মানা না হয়? এমনও দেখা গেছে যে মানসম্মত অনেক কলেজ জাতীয়করণ হয়নি।
তাই এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিক্ষোভ, মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান কিংবা হরতালের মতো কর্মসূচি দিয়ে। আর এসব কর্মসূচি পালন করে কিছু কিছু কলেজের নাম জাতীয়করণের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করাও সম্ভব হয়েছে; আবার কোনো কোনো অযোগ্য কলেজের নাম জাতীয়করণের তালিকায় থাকলেও বাদ পড়ে গেছে। যেমন নোয়াখালীর চরজব্বার কলেজ বাদ দিয়ে তার জায়গায় সৈকত কলেজকে অন্তর্ভুক্ত করানো, আবার চট্টগ্রামের হাটহাজারী কলেজকে অন্তর্ভুক্ত করে নাজিরহাট কলেজকেও একই উপজেলা থেকে জাতীয়করণের আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে! অথচ এ ব্যাপারে শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
কলেজ জাতীয়করণের সমস্ত শর্ত পূরণ করেও ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজ তালিকাভুক্ত না হওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে ঐ কলেজ-সংশ্লিষ্ট সবাই। দীর্ঘ ৪৩ দিন নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটে পুলিশের গুলি কিংবা বেধড়ক লাঠিপেটায় শিক্ষক ও ভ্যানচালকের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, সোশাল মিডিয়া এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় স্পষ্টই দেখা গিয়েছে যে পুলিশ কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রবেশ করে ছাত্র-শিক্ষক—এমনকি ছাত্রীদেরও বেধড়ক পেটাচ্ছে; যদিও প্রথমে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার বেসরকারি এক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে পুলিশকে নির্দোষ আখ্যা দিয়ে শিক্ষকের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করলেও একপর্যায়ে দোষ স্বীকার করেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন শিক্ষকদের বেতন দিয়ে মূল্যায়ন করা যায় না। তাঁর মানে তাঁকে মূল্যায়ন করতে হবে সম্মান দিয়ে। কিন্তু এখন পুলিশের লাঠিপেটায় শিক্ষকের মৃত্যুকে কিভাবে মূল্যায়ন করা হবে? কেন শিক্ষকদের জন্য রাবার বুলেট ব্যবহার করতে হবে? প্রশ্নটি স্বাভাবিকভাবেই এসে যায়।
ফেনী সাউথ ইস্ট ডিগ্রি কলেজ।
[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন।]