কলেজ সভাপতির অনৈতিক দাবি না মানলেই অব্যাহতি

পঞ্চগড় প্রতিনিধি |

পঞ্চগড়ে সভাপতির অনৈতিক দাবি না মানায় গত ১৫মাসে চার শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নিয়মবহির্ভূত হলেও এ কাজটি করেছেন পরিচালনা পর্ষদের (গভর্নিং বডি) সভাপতি ফজলে নূর বাচ্চুক। তার ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর চলছে ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার কলেজিয়েট ইনস্টিটিউট। তার অনৈতিক দাবি না মানলেই কৌশলে পদ থেকে সরিয়ে দেন। এতে শিক্ষক-কর্মচারী ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।

জানা যায়, ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে কলেজটিতে পূর্ণাঙ্গ অধ্যক্ষ নেই। ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চালানো হচ্ছে। ভারপ্রাপ্তরাও কেউ বেশিদিন থাকতে পারেন না। এমপিও মনোনীত কলেজটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ফজলে নূর বাচ্চুকে ম্যানেজ করে চলতে না পারাসহ, পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ, আর্থিক ও বিভিন্ন অনৈতিক বিষয়ে রাজি না হলেই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী কাউকে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসালে তাকে ছয় মাসের আগে সরানো যাবে না। সরাতে হলে অব্যাহতিপত্র নিতে হবে। কিন্তু এসবের কোনো তোয়াক্কা করেন না তিনি।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর থেকে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২ জানুয়ারি পর্যন্ত গত ১৫ মাসে চারজন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। শুধু সভাপতির অনৈতিক কর্মকা-ে রাজি না হওয়ায় নানা অজুহাতে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। অতীতে অনিয়মে জড়িত একজনকে সর্বশেষ গত ৩ জানুয়ারি চতুর্থবারের মতো ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

অব্যাহতি পাওয়া শিক্ষক মো. আবদুল খালেক বলেন, ‘আমি ১ মাস ৫ দিন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলাম। কলেজের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ফজলে নূর বাচ্চুর মেয়াদ আর বেশিদিন নেই। তিনি আরেকবার সভাপতি থাকতে চান। এ ব্যাপারে আমি তাকে সহযোগিতা করতে অসম্মতি জানালে তিনি আমার ওপর ক্ষুব্ধ হন। এ ছাড়া তিনি কলেজের বিভিন্ন খাতের টাকা নয়ছয়ের হিসাব দেখিয়ে “আপনিও খান আমাকেও দিয়েন” বলে প্রস্তাব দেন। কিন্তু আমি তার প্রস্তাবে সায় না দিলে আমাকে সরিয়ে দেন।’

আরেক শিক্ষক কায়েদে আজম দুলাল বলেন, ‘আমি ১১ মাস ৫ দিন অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলাম। কলেজে কেউ হিতৈষী সদস্য হতে চাইলে তাকে ৫০ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। একজন সদস্য টাকা জমা দিয়েছেন কি না তা নিয়ে অস্পষ্টতার জন্য আমি সংশ্লিষ্টদের শোকজ করি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে গভর্নিং বডির সভাপতি বাচ্চু আমাকে বিষয়ভিত্তিক অযোগ্যতা দেখিয়ে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেন।’

আরেক শিক্ষক দীপেন্দ্র নাথ রায়ও সভাপতির অনৈতিক প্রস্তাব না মানায় অব্যাহতি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পাওয়া আহসান হাবিব বলেন, ‘কেউ সঠিকভাবে হয়তো দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। তাই আমাকে আবার দায়িত্ব দিয়েছেন।’

অভিযোগ অস্বীকার করে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ফজলে নূর বাচ্চু বলেন, ‘কলেজের কার্যক্রম সঠিকভাবে না চলার কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক কয়েকজন শিক্ষককে অধ্যক্ষের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কাউকে অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়া হয়নি।’

স্থানীয় (পঞ্চগড়-১) সংসদ সদস্য নাঈমুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, ‘বর্তমান গভর্ণিং বডির সভাপতি আগের সংসদ সদস্যের সুপারিশে হয়েছেন। উনার মেয়াদ শেষ হলে বিষয়টি ভেবে চিন্তে নতুন সভাপতি মনোনয়ন দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া সভাপতির অনিয়ম দেখার কর্তৃপক্ষ হচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও মাউশি।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
একাদশ-দ্বাদশ বাংলা-ইংরেজির সিলেবাস প্রকাশ - dainik shiksha একাদশ-দ্বাদশ বাংলা-ইংরেজির সিলেবাস প্রকাশ ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে ঠুঁটো জগন্নাথ অধ্যাপকের পকেটে ৬০ লাখ টাকা - dainik shiksha ঠুঁটো জগন্নাথ অধ্যাপকের পকেটে ৬০ লাখ টাকা সব কয়টারে গু*লি কইরা মা*রমু - dainik shiksha সব কয়টারে গু*লি কইরা মা*রমু স্কুলে ভর্তি: সরকারিতে জোয়ার, বেসরকারিতে ভাটা - dainik shiksha স্কুলে ভর্তি: সরকারিতে জোয়ার, বেসরকারিতে ভাটা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণের দাবি যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা - dainik shiksha স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণের দাবি যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027379989624023