কল্পনা শক্তিকে বাঁচিয়ে রাখতে বেশি বেশি বই পড়তে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি বলেছেন, মানুষ মানুষ হয়েছে তার কল্পনা শক্তির দ্বারা। একমাত্র মানুষই পারে কোনো কিছুকে কল্পনা করতে। যা অন্যকোনো জীবই পারে না। পৃথিবীতে আইনস্টাইনের চেয়ে বেশি জ্ঞান কেউ দেয়নি। জ্ঞানের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো কল্পনা। কাজেই সেই কল্পনা করার ক্ষমতাকে তরুণ প্রজন্মকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আর সেটা করার অনেক রাস্তা আছে। তবে সবচেয়ে সহজ রাস্তাটা হলো বই পড়া। শিক্ষার্থীদের কাছে আমার একটাই অনুরোধ তোমরা বেশি বেশি বই পড়ো।
মঙ্গলবার দুপুরে ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে নবীন শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা ও জীবনগঠন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন প্রথিতযশা এ শিক্ষাবিদ।
আরো পড়ুন : এআইয়ের যুগে টিকে থাকতে শিক্ষার্থীদের সচেতন হতে হবে : অধ্যাপক জাফর ইকবাল
অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল আরো বলেন, নতুন প্রজন্মকে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাদেরকে মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন মানুষ হতে হবে যেটা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কখনো পারে না। তোমাদের নিজেদের তাগিদেই মানুষের গুণাবলিগুলো অর্জন করে নিতে হবে। তা না হলে তুমি কিন্তু টিকবে না। সামনের জীবনে চলতে হলে সতর্ক হয়ে থাকতে হবে।
ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর।
ওরিয়েন্টেশন বক্তৃতায় দেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানসহ নানা বিষয় তুলে ধরেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের লড়াইটা অনেক দীর্ঘ। সেই লড়াইয়ের নতুন যোদ্ধা হচ্ছেন আপনারা। আমাদের কাজটা আমরা কোনোভাবে শেষ করেছি হয়তো কিছুটা সফল। একটি ভূমি আছে, স্বাধীন সার্বভৌম আছে-এ জায়গায় হয়তো আমরা সফল কিন্তু দেশটা আপনারা গড়বেন।
তিনি বলেন, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ না হলে রাষ্ট্রটা বিকশিত হবে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন হবে না। সব মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে না। তাই একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি চাই আপনারা একটি মানবিক রাষ্ট্র গড়ে তুলবে না, একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, শিক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন এই তিনটি মোটো নিয়ে বর্তমান প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিচালনা করছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি নন্দনকানন হিসেবে গড়ে তোলা হবে। যেখানে লেখাপড়ার মানকে সুনিশ্চিত করা হবে, গবেষণার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা হবে। বিজ্ঞানমনস্ক প্রজন্ম তৈরি করে দক্ষতা বৃদ্ধিতে সব ধরনের উৎসাহ দেয়া হবে। জাফর ইকবাল স্যার যে কথা বলেছেন-কল্পনা শক্তিকে বাড়াতে হলে তরুণ শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করাটা শিখতে হবে।
ওরিয়েন্টেশনে আগত নবীন শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানিয়ে তিনি আরো বলেন, শিক্ষা জীবনে সর্বোচ্চ জ্ঞান অর্জনের অন্যতম বিদ্যাপীঠ হলো বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে পড়াশোনার পাশাপাশি একজন শিক্ষার্থী সত্যিকারের ও সার্বিক মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার পথের দিশা পায়। তাই জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন শিক্ষার্থী হিসেবে সপ্তদশ আবর্তনে যুক্ত হয়ে এ প্রাঙ্গণে যারা আসছে তাদের সকলকে আমরা স্বাগত জানাই।
ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. আতাউর রহমান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. নজরুল ইসলাম, কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মুশাররাত শবনম, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান, ব্যাবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন ও ওরিয়েন্টেশন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মো. রিয়াদ হাসান, চারুকলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. তপন কুমার সরকার। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জী। সঞ্চালনা করেন রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবীর।
ওরিয়েন্টশন অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদেরকে জীবন ও চরিত্র গঠনের পরামর্শের পাশাপাশি হাতে তুলে দেয়া হয় এক বছরের একাডেমিক ক্যালেন্ডার। এই ক্যালেন্ডার অনুসারে ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যতে লেখাপড়া, পরীক্ষা এবং অন্যান্য একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
এর আগে অতিথিরা ক্যাম্পাসে এলে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।