কাঁদতে কাঁদতে অধ্যক্ষ সিরাজের কক্ষ থেকে বের হয় নুসরাত : অফিস সহকারী

ফেনী প্রতিনিধি |

ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় মঙ্গলবার (২ জুলাই) বিকালে চতুর্থ দিন বিচারিক আদালতে আংশিক সাক্ষ্য দিয়েছেন চার নম্বর সাক্ষী মাদরাসার অফিস সহকারী নুরুল আমিন। ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে এই সাক্ষ্য দেন তিনি। আদালত বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত তার সাক্ষ্য নিয়ে শুনানি মুলতবি করেন। বুধবার (৩ জুলাই) বেলা ১১টায় তার অবশিষ্ট সাক্ষ্য ও জেরা গ্রহণের জন্য পরবর্তী দিন ধার্য করেন বিচারক। বিচারিক আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হাফেজ আহাম্মদ এসব তথ্য জানিয়েছেন।

বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজু বলেন, নুরুল আমিন সাক্ষ্য দেয়ার সময় আদালতকে বলেন, ‘অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার নির্দেশে ২৭ মার্চ সকালে নুসরাতকে ক্লাস থেকে অধ্যক্ষের কক্ষে যেতে বলেছিলাম । তিনি সে সময় ক্লাসে বসে সহপাঠীদের সঙ্গে গল্প করছিলেন। নুসরাত তার বান্ধবী নিশাত সুলতানা ও নাসরিন সুলতানা ফূর্তিকে নিয়ে অধ্যক্ষের কক্ষে যান। অধ্যক্ষ সিরাজ নিশাত ও ফূর্তিকে কক্ষের বাইরে বের করে দেন। এর কয়েক মিনিট পর অধ্যক্ষের কক্ষ থেকে নুসরাতকে কাঁদতে কাঁদতে বের হয়ে বাড়ি চলে যেতে দেখি। পরে দেখি নুসরাতকে সঙ্গে নিয়ে তার মা, ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান ও স্থানীয় কাউন্সিলর ইয়াসিন অধ্যক্ষের কক্ষে যান। এ সময় অধ্যক্ষ সিরাজ উল্টো তাকে গালমন্দ করেন এবং নুসরাতের চরিত্র হননের অপচেষ্টা করেন। তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে অধ্যক্ষ ফোন করলে পুলিশ মাদরাসায় যায়।’ এর আগে একই আদালতে বেলা ১১টা থেকে তিনটা পর্যন্ত সাক্ষী নাসরিন সুলতানা ফূর্তিকে জেরা করেছেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা।

আদালত সূত্র জানায়, ২৭ ও ৩০ জুন নুসরাত হত্যা মামলার বাদী ও নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানকে জেরার মধ্য দিয়ে বহুল আলোচিত এ মামলার বিচার কাজ শুরু হয়। ১ জুলাই নুসরাতের সহপাঠী নিশাত সুলতানার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। ২৯ মে, আদালতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে ৮০৮ পৃষ্ঠার চার্জশিট দাখিল করে। ৩০ মে, মামলাটি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে স্থানান্তর করা হয়। ১০ জুন, মামলাটি আমলে নিয়ে শুনানি শুরু হয়। ২০ জুন, অভিযুক্ত ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বিচারিক আদালত।

এ মামলায় মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের, জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।

প্রসঙ্গত, সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান ওরফে রাফিকে গত ৬ এপ্রিল গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। ১০ এপ্রিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে মারা যান তিনি। এ ঘটনায় নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে আটজনকে আসামি করে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। পরে মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তর করা হয়। পুলিশ ও পিবিআই এই মামলায় ২১ জনকে গ্রেফতার করে। তাদের মধ্যে ১২ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

এর আগে গত ২৭ মার্চ নিজ কক্ষে ডেকে নুসরাতকে যৌন হয়রানি করেন অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা। এ অভিযোগে নুসরাতের মা বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করলে পুলিশ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়। ওই মামলা তুলে না নেওয়ায় আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় নুসরাতকে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0044848918914795