কাগজমুক্ত কার্যক্রমের পথে রাজশাহী বোর্ডের স্কুল শাখা

আশরাফুল ইসলাম, বড়াইগ্রাম প্রতিনিধি |

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশ হিসেবে সব সিন্ডিকেট ভেঙে আগামী ছয় মাসের মধ্যে শতভাগ কাগজমুক্ত অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রম নিশ্চিত করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় শাখা। এতে করে বোর্ডের আওতায় থাকা আট জেলার প্রায় ৪ হাজার বিদ্যালয়ের সময় এবং অর্থ উভয়ই সাশ্রয় হবে। অনর্থক কোনো প্রতিষ্ঠান প্রধান বা সংশ্লিষ্টদের বোর্ডে ঘোরাঘুরি করে সময় অপচয় করতে হবে না। দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এসব তথ্য জানিয়েছেন বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক মহা. জিয়াউল হক।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় শাখা সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, হাতেগোনা কয়েকজন প্রতিষ্ঠান প্রধান তাদের দাপ্তরিক কাজে বোর্ডে এসেছেন। কথা হয় চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ সদরের ফ্রিডম স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা-উদ্যোক্তা মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে আমি প্রতিষ্ঠানটি চালু করি কিন্তু নানা প্রতিকুলতার কারণে বোর্ড থেকে স্থাপনের অনুমতিই নিতে পারছিলাম না। বর্তমান পরিদর্শক মাত্র দুই মাসে আমাদের সেই কাজ করে দিয়েছেন। এখন আমার প্রতিষ্ঠানে সাতশ’র বেশি শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে।

রাজশাহীর দূর্গাপুর উপজেলারর কালীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়য়ের প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, প্রায় ৫ বছর ধরে চলমান মামলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের মধ্যস্থতায় সমাধান হয়েছে। আমার বেতন হচ্ছিলো না। উনার সহায়তায় সেটাও হয়েছে। 

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার রামেশ্বরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সরওয়ার হোসেন পিঞ্জু দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতির ফাইল আটকে ছিল প্রায় নয় মাস। পরে জিয়াউল স্যার দায়িত্ব নেয়ার পর মাত্র ১৫ দিনে সেটা নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন। এ ধরণের শত উদাহরণ এখন হরহামেশাই মিলে বিদ্যালয় পরিদর্শকের দপ্তরে। 

বড়াইগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবুল আলম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিদ্যালয় পরিদর্শক সকাল ৯ টায় দূরদুরান্তের বিদ্যালয়ে গিয়ে তিনি শিক্ষার্থীদের অ্যাসেম্বিলিতে অংশগ্রহণ করেন। শিক্ষার্থীদের মুক্তি সংগ্রাম, স্বাধীনতা ও বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে করণীয় বিষয়ে ধারণা দিয়ে থাকেন। 

পাবনার বেড়া উপজেলার হরিনা কুন্ডু উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, আমি প্রায় ২৫ বছর ধরে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছি। আগে কখন বিদ্যালয় পরিদর্শকের অফিসে গিয়ে সরাসরি কথা বলতে পারিনি। এখন সেটা অনায়াসেই আমিসহ সব শিক্ষকরা সরাসরি বিদ্যালয় পরিদর্শকের সঙ্গে কথা নিজেদের সমস্যার সমাধান নিতে পারেন।

শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় শাখা সূত্রে জানা যায়, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে বিদ্যালয় পরিদর্শক হিসেবে প্রেষণে নিয়োগ পান বিসিএস-২৬ ব্যাচের শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা সহকারী অধ্যাপক মহা. জিয়াউল হক। তিনি যখন দায়িত্ব গ্রহণের আগে শাখার কর্মচারীদের সিন্ডিকেট, অতিমারি কোভিড-১৯ এবং আগের বিদ্যালয় পরির্দশকের অসুস্থ্যতার কারণে স্থবিরতা নেমে আসে শাখার কার্যক্রমে। মাস পেরিয়ে বছর লেগে যেতো কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের ফাইল ছাড়াতে।  এসময় তিনি দায়িত্ব নিয়েই পড়ে থাকা কাজের তালিকা করেন। এরপর দ্রুত সব ফাইল নিষ্পত্তি করতে শুরু করেন। গত এক বছরে জমে থাকা প্রায় আড়াই হাজার ফাইল নিষ্পত্তি করেন। ফলে এখন আর কোনো প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি, অ্যাডহক কমিটি, স্বীকৃতি নবায়নের ফাইল আটকে নেই। তিনি দায়িত্ব নিয়েই ইতোমধ্যে প্রায় দেড় শতাধিক প্রতিষ্ঠান সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। বিদ্যালয় মুঞ্জুরী কমিটি ও বোর্ড সভার অনুমোদন লাভ করা ৪৮টি প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে স্থাপন, পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতির অনুমতি দিয়েছেন। 

জানতে চাইলে বিদ্যালয় পরিদর্শক মহা. জিয়াউল হক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সরকারি দায়িত্ব পবিত্র আমানত। সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে কাজ করে যাচ্ছি। দপ্তরের কর্মকর্তা ও সেবাগ্রহীতাদের সহযোগিতায় বিদ্যালয় শাখাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শতভাগ অনলাইনভিত্তিক সেবার আওতায় নিয়ে আসা হবে। এরমাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সহজেই তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা পাবে। তবে নিরবিচ্ছিন্ন সেবা দিতে প্রয়োজনীয় জনবল প্রয়োজন হবে। 

তিনি আরো বলেন, আট জেলার আটজন কার্যসহকারী পদের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ৩ জন। প্রতি জেলায় একজন করে কার্যসহকারী প্রয়োজন। ৪ হাজার বিদ্যালয়ের কাজগুলো করতে অন্তত ৩ জন কম্পিউটার এক্সপার্ট প্রয়োজন, আছেন মাত্র একজন। ঘাটতি জনবলগুলো পেলে আমরা আরো দ্রুততম সময়ে লক্ষে পৌঁছাতে পারবো।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সরকার পরিচালনায় ভুলত্রুটি থাকলে ধরিয়ে দিন, সম্পাদকদের ড. ইউনূস - dainik shiksha সরকার পরিচালনায় ভুলত্রুটি থাকলে ধরিয়ে দিন, সম্পাদকদের ড. ইউনূস এইচএসসি ফল তৈরি: পরীক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়েছে বোর্ড - dainik shiksha এইচএসসি ফল তৈরি: পরীক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়েছে বোর্ড শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য ও হেনস্তা নয়: শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য ও হেনস্তা নয়: শিক্ষা উপদেষ্টা স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের আগস্ট মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের আগস্ট মাসের এমপিওর চেক ছাড় এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ডিজি হলেন - dainik shiksha এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ডিজি হলেন ছাত্রী হয়রানির অভিযোগ, উত্তরা ইউনিভার্সিটি উত্তপ্ত - dainik shiksha ছাত্রী হয়রানির অভিযোগ, উত্তরা ইউনিভার্সিটি উত্তপ্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের হাত ভাঙলেন বরখাস্ত প্রধান শিক্ষক - dainik shiksha ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের হাত ভাঙলেন বরখাস্ত প্রধান শিক্ষক সাংবাদিক নিপীড়নের আইনগুলো এখনই বাদ দেয়ার প্রস্তাব - dainik shiksha সাংবাদিক নিপীড়নের আইনগুলো এখনই বাদ দেয়ার প্রস্তাব মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার চলতি দায়িত্ব দিতে আবেদন আহ্বান - dainik shiksha মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার চলতি দায়িত্ব দিতে আবেদন আহ্বান শিরীন শারমিনের পদত্যাগে স্পিকার পদে কি শূন্যতা তৈরি হলো - dainik shiksha শিরীন শারমিনের পদত্যাগে স্পিকার পদে কি শূন্যতা তৈরি হলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028800964355469