আঙ্গুল বিহীন হাত নিয়ে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম। সে দুই হাতের সাহায্যে কলম ধরে পরীক্ষার খাতায় উত্তর লেখে। কেবল পড়ালেখা নয়, জাহিদুল তার শারীরিক সমস্যা নিয়ে ক্রিকেট খেলায়ও বেশ পারদর্শী। নিজের মনোবলকে কাজে লাগিয়ে প্রচন্ড আগ্রহ নিয়ে লেখাপড়া চালাচ্ছে জাহিদুল।
মণিরামপুর উপজেলার আগরহাটি গ্রামের ভাটা শ্রমিক মাহবুবুর রহমান ও গৃহিনী রাশিদা বেগমের ছেলে জাহিদুল ইসলাম। উপজেলার ধলিগাতী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবারের জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে জাহিদুল। পড়ালেখায় মোটামুটি ভাল। ক্লাসে ২৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে জাহিদুলের রোল নম্বর ৬। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলীপ কুমার পাল এবং সহকারী গ্রন্থগারিক আব্দুল মজিদ জানান, জাহিদুল স্কুলের একজন নিয়মিত ছাত্র। লেখাপড়ায়ও যথেষ্ট ভাল। কেবল নেই তার দুটি হাত।
লাউড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ার সময় বিদ্যুস্পৃষ্ট হয়ে দুটি হাতের আঙ্গুল হারায় জাহিদুল। তাকে বাঁচাতে চিকিৎসকরা তার হাত দুটি কেটে ফেলা হয় বলে তার পিতা মাহাবুবুর রহমান জানায়। ওই বিদ্যালয় থেকে সে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৭৬ পেয়ে উর্ত্তীণ হয়। লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা, সাইকেল চালানোসহ সবই পারে সে। তবে বেশি পারদর্শী ক্রিকেট খেলায়। মণিরামপুর সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে জেএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে সহাপাঠীদের সাথে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে জাহিদুল।
জাহিদুলের জানায়, যেকটি পরীক্ষা দিয়েছে তাতে ভাল ফল করার আশা করছে সে। দিনমজুর পরিবারের সন্তান জাহিদুলকে নিয়ে দু:চিন্তা তার পিতা-মাতার। লেখাপড়া না শিখলে তার ভবিষ্যৎ কি হবে? কিভাবে তার জীবন চলবে? বাবা-মা’র ইচ্ছা তার লেখাপড়া চালিয়ে নেয়া। কিন্তু আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই তাদের। ভাটায় শ্রমিকের কাজ করে চার ছেলে-মেয়েসহ ৭জনের পরিবার চলে কোন রকমে। যে কারণে জাহিদুলের পিছনে অর্থ ব্যয় করার মতো সামর্থ নেই বাবা-মা’র। বছর তিনেক আগে উপজেলা পরিষদ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নিজের লেখা গান গেয়ে সবার নজরে আসে। জাহিদুলের স্বপ্ন লেখাপড়া করে মানুষ হবার। তার চাওয়া আর্থিক সহায়তা নিয়ে হলেও যেন সে লেখাপড়া চালিয়ে নিতে পারে।