কাদার রুটি খেয়ে দিন গুজরান

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

হাইতি। ক্যারিবিয়ান সাগরের দ্বীপদেশ। এই দেশকে বিশ্বের অন্যতম গরিব দেশ হিসাবে গণ্য করা হয়। এর আয়তন মাত্র ২৭ হাজার ৭৫০ বর্গ কিমি। মোট জনসংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখের কাছাকাছি। ছোট এই দেশের বাসিন্দাদের একাংশ এতোটাই গরিব যে, অনেক সময় কাদা দিয়ে তৈরি রুটি খেয়েও দিন গুজরান করতে হয় তাদের।

হাইতির অন্যতম গরিব এলাকা শার্লিন ডুমাস। এই বস্তি এলাকার মানুষ দুপুরের খাবার হিসাবে সাধারণত এই বিশেষ কাদার রুটি খেয়ে থাকেন। মূল্যবৃদ্ধির কারণে হাইতির অনেক মানুষের এক বেলার খাবার জোটানোরও ক্ষমতা নেই। পেট ভরানোর তাগিদে কাদার তৈরি রুটিকেই তাই অবলম্বন করে নিয়েছেন তাঁরা।

কৃষি, পরিবহণ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিশ্ব জুড়ে খাদ্যের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। 
ক্যারিবিয়ান সাগরে শুধু আমদানির ওপর নির্ভর করে থাকা দেশগুলোতে এর প্রভাব অনেক বেশি।

২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের ঘূর্ণিঝড় ও ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ভূমিকম্পের কারণে জাতিসংঘের তরফে হাইতিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই পরিস্থিতি থেকে এখনও ঠিক ভাবে বেরিয়ে আসতে পারেনি সেই দেশ। আর সেই কারণে এখনও নাকি সে দেশের বহু মানুষ বেঁচে থাকার জন্য কাদার তৈরি রুটির উপর নির্ভর করে রয়েছেন। আর কাদার রুটি তৈরি করতে যে মাটি লাগে, তা নিয়েও রীতিমতো ব্যবসা ফেঁদে বসেছেন হাইতির এক দল মানুষ।

হাইতিতে যে কাদা দিয়ে রুটি তৈরি হয়, তা নিয়ে আসা হয় হিনচে শহর থেকে। বিক্রি হয় ‘লা স্যালাইন’ বাজারে। বাজারের শাকসব্জি ও মাংসের পাশাপাশি বিক্রি হয় এই মাটিও।

প্রথমে বাজার থেকে সেই শুকনো মাটি কিনে আনা হয়। মাটি গুঁড়ো করে সেখান থেকে বাদ দেওয়া হয় নুড়ি-পাথর। এর পর সেই মাটিকে আরও মিহি করে গুঁড়িয়ে পানিতে ভিজিয়ে কাদার মণ্ড তৈরি হয়। ওই মণ্ডে নুন ও মশলা মিশিয়ে রুটির মতো গোল করে বেলে নেওয়া হয়। গোলাকৃতি কাদার রুটি তৈরি হয়ে গেলে তা শুকোনোর জন্য রোদে ফেলে রাখা হয়।

কাদার রুটি রোদে দু’-তিন দিন শুকিয়ে নেওয়ার পর তা খাওয়ার জন্য নিয়ে আসা হয়। অনেক সময় তা বাজারেও বিক্রি করা হয়। তবে খুবই সামান্য মূল্যে। 

হাইতির বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, শুধু কম দামের জন্য নয়, ‘পুষ্টিগুণের’ জন্যও তারা কাদার রুটি খেতে পছন্দ করেন। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এই রুটি অন্তঃসত্ত্বা মহিলা ও শিশুদের শরীরে অ্যান্টাসিড এবং ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূর্ণ করে। অন্তঃসত্ত্বা মহিলারা এই রুটি খেলে সন্তানরা স্বাস্থ্যবান হবে বলেও বিশ্বাস প্রচলিত। 

যদিও চিকিৎসকদের মতে, হাইতিবাসীদের এই ধারণা ভ্রান্ত। দিনের পর দিন কাদার রুটি খেলে দাঁতের ক্ষয়, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ব্যথা-সহ একাধিক শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটির ইমিউনোলজির অধ্যাপক জেরাল্ড এন ক্যালাহানের মতে, কাদার রুটিতে মারাত্মক পরজীবী এবং বিষাক্ত পদার্থ থাকতে পারে। তবে এটি গর্ভের ভ্রূণের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও বাড়িয়ে দিতে পারে।

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিস্বাদ এই রুটি খাওয়ার পরই তা মুখের সমস্ত আর্দ্রতা শুষে নেয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেই স্বাদ অনুভব করা যায়। বাঁচার তাগিদে হাইতিবাসীরা এই কাদার রুটি খান। 

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে - dainik shiksha চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ - dainik shiksha সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন - dainik shiksha রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? - dainik shiksha বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে - dainik shiksha ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি - dainik shiksha প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0049099922180176