সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তার ব্যবহৃত ‘দামি’ ঘড়িগুলো নিয়ে যে ব্যাখ্যা সাংবাদিকদের দিয়েছেন, তাকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ ও অপর্যাপ্ত’ বলছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি।
দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি প্রশ্ন তুলেছে, কাদেরের দাবি অনুযায়ী এসব সামগ্রী যদি উপহার হিসেবেই পাওয়া হয়ে থাকে, কেন সেগুলো রাষ্ট্রীয় তোশাখানায় জমা দেয়া হল না?
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে টিআইবি বলেছে, সরকারের উচিৎ বিষয়গুলো শুধু উপহার পাওয়া ঘড়ি এবং ব্যক্তি ওবায়দুল কাদেরের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, নাকি এর ‘বিস্তৃতি’ আরও বেশি ছিল- তা খতিয়ে দেখে দেশবাসীকে জানানো।
সুইডেনভিত্তিক বাংলাভাষার অনলাইন পোর্টাল নেত্র নিউজে গত ডিসেম্বরে ওবায়দুল কাদেরের ঘড়ি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর বাংলাদেশ থেকে ওই পোর্টাল দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ ওঠে।
সাংবাদিকরা এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদের বৃহস্পতিবার বলেন, “আমার যত ঘড়ি আছে একটাও আমার নিজের না, পয়সা দিয়ে কেনা না। ধরেন আপনি বিদেশে গেলেন, এসে আমাকে একটা ঘড়ি দিলেন, আমি নিলাম।”
নেত্র নিউজের ওই প্রতিবেদনে ওবায়দুল কাদেরের হাতে থাকা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সাতটি ঘড়ির ছবি দিয়ে দেখানো হয়েছে, সেটি কোন ব্র্যান্ডের এবং কোনটির দাম কত।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিখ্যাত সব কোম্পানির ওই ঘড়িগুলোর বাজার মূল্য ৯ থেকে ২৮ লাখ টাকা।
গত জাতীয় নির্বাচনে ওবায়দুল কাদেরের দেয়া হলফনামার সঙ্গে মিলিয়ে নেত্র নিউজ দেখানোর চেষ্টা করেছে, ওই সাতটি ঘড়ির মধ্যে একটির দামই সেতুমন্ত্রীর এক বছরের আয়ের প্রায় সমান। হলফনামায় ওইসব ঘড়ির কোনো উল্লেখও নেই।
এর মধ্যে অত্যন্ত দামি একটি ঘড়ি কোনো একটি ‘কন্ট্রাক্ট পাস’ করিয়ে দেয়ার বিনিময়ে তিনি ‘উৎকোচ হিসেবে’ হিসেবে নিয়েছেন- এমন অভিযোগ পাওয়ার কথাও বলা হয়েছে নেত্র নিউজের প্রতিবেদনে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বিবৃতিতে বলেন, “সংবাদকর্মীদের প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা প্রশ্নবিদ্ধ এবং পর্যাপ্ত নয়, বরং আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “যেভাবেই তিনি উপহারসমূহ পেয়ে থাকুন না কেন- ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের জুনে হালনাগাদ করা তোশাখানা বিধি ১৯৭৪ অনুযায়ী উপহারগুলো যথাসময়ে তোশাখানায় জমা দেয়া হল না কেন।
“জমা না দেয়ার সিদ্ধান্ত যেহেতু তিনি নিয়েছেন সেহেতু সংশ্লিষ্ট ধারা অনুসরণ করে উপহারপ্রাপ্ত বস্তুর প্রকৃত মূল্য অনুযায়ী অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়া হয়েছে কী না?”
উৎকোচ হিসেবে ঘড়ি নেয়ার কথা অস্বীকার করে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘ঠিকাদাররা’ নির্বাচনের সময় তাকে ‘একটা অ্যামাউন্ট’ দিতে চেয়েছিল, তিনি নেননি।
সেই সব ঠিকাদারদের ‘অনৈতিকতা ও দুর্নীতির চর্চা’ প্রতিরোধে সেতুমন্ত্রীর পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কি না, কাউকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে কি না, অন্তত জনস্বার্থে তাদের তালিকা প্রকাশ করা হবে কি না- সেই প্রশ্ন রেখে টিআইবি।