দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ নতুন মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পাওয়া ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রীর মন্ত্রণালয় বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। তবে সংসদে বিরোধী দল কারা হবে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এই সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের পর সবচেয়ে বেশি ৬২টি আসন পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা ব্যক্তিরা।
দেশের সংবিধান বা কোনো আইন-বিধিতে বিরোধী দল ইস্যুতে স্পষ্ট নির্দেশনা নেই, কেবল সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিতে ‘বিরোধীদলীয় নেতা’ কথাটি উল্লেখ রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘বিরোধী দলের নেতা অর্থ স্পিকারের বিবেচনা মতে যে সদস্য সংসদে সরকারি দলের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চসংখ্যক সদস্য লইয়া গঠিত ক্ষেত্রমত দল বা অধিসংঘের নেতা।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন ছাড়া বাকি সবাই হয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কমিটির পদধারী নেতা, নয়তো সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। স্বতন্ত্ররা মিলে জোটবদ্ধ (গ্রুপ) হলে তারাই হবে প্রধান বিরোধী দল এবং তাদের একজন হবেন বিরোধীদলীয় নেতা।
সোমবার (৮ জানুয়ারি) সংসদে এখন বিরোধী দল কে হবেন এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী যারা জয়লাভ করেছেন তারা তাদের অবস্থান কি, যতক্ষণ না পর্যন্ত তারা একসঙ্গে থাকবেন নাকি নিজেরা জোট করবেন নাকি তারা আলাদা আলাদা থাকবেন সেটা পরিষ্কার না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত বিরোধী দল কাকে বলা হবে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
বুধবার (১০ জানুয়ারি) দ্বাদশ সংসদের বিরোধী দল প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, ‘আমি ঠিক জানি না নিয়মটা কী। তবে আমরা বিরোধী দলে ছিলাম এবং বিরোধী দলে থাকতে চাই। আমরা জনকল্যাণমুখী যেটা জনগণের ভালো হয় সেটাই করতে চাই।’
বুধবার (১০ জানুয়ারি) দ্বাদশ সংসদের এমপি হিসেবে শপথ নেওয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ফরিদপুর-৪ আসনে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী (নিক্সন চৌধুরী) বলেছিলেন, আসলে আমরা তো স্বতন্ত্ররা আলাদা আলাদা সবার জায়গা থেকে। আজকে শপথের পর আমাদের কাছে সময় আছে। আমরা আলোচনা করে যেটা ভালো হয়, সেটাই করব।
তিনি আরও বলেন, আসলে বিরোধী দলের নেতা হওয়ার জন্য আমরা স্বতন্ত্ররা নির্বাচন করিনি। আমরা আমাদের নিজ এলাকার যে নৌকার মাঝি তার বিপক্ষে নির্বাচন করেছি। আমরা নৌকার পক্ষেই। আওয়ামী লীগের নৌকাটা তারা ঠিকই পাইছে, কিন্তু বৈঠাটা আমরা পেয়েছি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, নির্বাচনের ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা হওয়ার পর বিরোধী দল কারা, অলরেডি বিরোধী দল জাতীয় পার্টির তো অনেকেই জিতেছেন, ১৪ দলেরও দুজনের মতো জিতেছেন। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তো দূরে নয়। যিনি লিডার অব দ্য হাউজ হবেন, তিনি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।
সংসংদে বিরোধী দল করা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, পদ্ধতিটা কেন আপনাকে বলব? এটা নতুন সরকার বসুক। সংশ্লিষ্ট যারা আছে তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করবেন। সব বাস্তবতার নিরিখে সিদ্ধান্ত নেবেন। নতুন প্রধানমন্ত্রী, নতুন লিডার অব দ্য হাউজ পরিস্থিতি, বাস্তবতা, করণীয় বিষয়ে অবশ্যই সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী। এজন্য সবাইকে অপেক্ষায় থাকতেও অনুরোধ করেন তিনি।
রাজনীতি ও আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা চাইলে বিরোধী দল হিসেবে থাকতে পারেন। আবার তারা যেহেতু আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত, তাই তারা এই দলটিতেও যোগ দিতে পারেন। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কী করবেন তা পুরোপুরি আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে বলেও মনে করেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, ২৯৮টি আসনের মধ্যে ২২২টিতে জিতেছে আওয়ামী লীগ এবং একাদশ জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি পেয়েছে মাত্র ১১টি আসন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, যাদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন দলের নেতা, ৬২টি আসন পেয়েছে।