কারিগরি শিক্ষায় মানোন্নয়ন

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

কোনো ব্যক্তি যে শিক্ষা তার বাস্তব জীবনে ব্যবহার করে কোনো একটি নির্দিষ্ট পেশায় নিযুক্ত হতে পারে, তা কারিগরি শিক্ষা। মূলত চাকরির বাজারের চাহিদা এবং চাকরি না পেলে নিজেই যাতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে, সে উদ্দেশ্য সামনে রেখেই কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থা গঠিত। কারিগরি শিক্ষা গ্রহণের পর শিক্ষার্থীকে বা ব্যক্তিকে পেশা নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। সে নিজেই অর্জিত শিক্ষার সঙ্গে মিল রেখে স্বাধীনভাবে পেশা খুঁজে নিতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে মূল বিবেচ্য বিষয় হলো দক্ষতা। যে কারণে কারিগরি শিক্ষাকে ছোটো ছোটো অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। কোনো শিক্ষার্থী যে বিষয়ে অধ্যয়ন করবে, সে বিষয়ে তার দক্ষতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে সামগ্রিক উন্নয়নের অংশ হতে পারে।  শনিবার (৮ জানুয়ারি) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। 

নিবন্ধে আরও জানা যায়, বর্তমান সরকার দেশের কারিগরি শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে ২০২০ সালের মধ্যে ২০ শতাংশ এবং ২০৩০ সালে ৩০ শতাংশ কারিগরি শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, যার ধারাবাহিকতায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসমূহে আসন বৃদ্ধি ও সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজগুলোতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চালু করেছে।

এছাড়া নতুন আরো ৩২৯টি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মাণের জন্য গত ২১ জানুয়ারি একনেকে প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। স্কুল পর্যায়েও কারিগরি বিষয় বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। কারিগরি শিক্ষার ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য বর্তমানে দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৫৫০টির অধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ৩০টির অধিক ডিপার্টমেন্টে প্রায় ৩ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে।

‘দক্ষতাই উন্নয়ন’ কথাটি কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এখন প্রশ্ন হলো, যে ১৪ শতাংশ কারিগরি শিক্ষা নিচ্ছে, তারা কি ব্যাবহারিক কাজে দক্ষতা অর্জন করতে পারছে? তারা কি সবাই কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে? একজন সাবেক কারিগরি শিক্ষার্থী হিসেবে আমার মনে হয় না পারছে। কারিগরি শিক্ষাসংশ্লিষ্ট যারা আছেন, তারাও আমার সঙ্গে একমত হবেন বলে বিশ্বাস করি। ভেতরে যেমন হোক, পণ্যের মোড়ক দেখে যেমন আমরা ভালো-মন্দ বিবেচনা করি, কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রেও কিছুটা তেমন বিষয় লক্ষ করছি। কারিগরি শিক্ষার্থীরাও আজ কারিগরি শিক্ষার মোড়কে সনদনির্ভর হয়ে পড়েছে।

সরকার কারিগরি শিক্ষার হার বৃদ্ধি করবে এটি নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত, তবে সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। সেক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন বলে মনে করি, তা হলো শিক্ষকের সংকট নিরসনে উদ্যোগ গ্রহণ করা, ল্যাবরেটরিগুলোতে প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত সরঞ্জাম নিশ্চিত করা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা, পাঠ্যক্রম থেকে সেকেলে বিষয়বস্তু বাদ দিয়ে আধুনিক বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্তকরণ, শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিয়মিতকরণ, টেকনিক্যাল স্কুলগুলোতে পাবলিক পরীক্ষার (এসএসসি, এইসএসসি) কেন্দ্র স্থাপন না করা, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কাউন্সিলিং সেল গঠন, ব্যাবহারিক বিষয়ের জন্য প্রতি সেমিস্টারে স্কিল টেস্টের ব্যবস্থা গ্রহণ, প্রজেক্ট তৈরি বাধ্যতামূলক এবং তার জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দের ব্যবস্থা রাখা ইত্যাদি বিষয়কে প্রাধান্য দিলে কারিগরি শিক্ষার্থীরা দক্ষ হিসেবে গড়ে উঠবে বলে বিশ্বাস করি।

দেশের বর্তমান বেকারের মধ্যে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ৪০ শতাংশ। এমন অবস্থায় কারিগরি শিক্ষার প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন অভিভাবকসহ সচেতন মহল। তবে সংখ্যা বৃদ্ধির হিসাবের চাপে যেন কর্মমুখী শিক্ষাও গতানুগতিক না হয়ে যায়, সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। অন্যথায় কারিগরি শিক্ষাও ধীরে ধীরে বেকার তৈরির কারখানায় পরিণত হবে।

লেখক : ইয়াছির আরাফাত, প্রকৌশলী।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0045111179351807