কার্যকর নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই ক্র্যাকডাউন

মিজানুর রহমান খান, দৈনিক শিক্ষাডটকম |

কয়েক ঘণ্টায় না হলেও, কয়েকদিনের মধ্যেই অন্তত আওয়ামী লীগকে ধ্বংস এবং পূর্ব বাংলার ওপর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই ‘২৫ মার্চে নেমে আসে ক্র্যাকডাউন’। বাঙালিদের জীবনে ২৫ মার্চের কালরাতটি নেমে আসার কারণ এভাবেই বর্ণনা করেছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ‘সিআইএ’। আর ২৫ ফেব্রুয়ারি ইসলামাবাদে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া মার্কিন রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ডের কাছে এই মর্মে হতাশা ব্যক্ত করেন যে, আলোচনা যদি ভেঙে যায় তাহলে ‘রক্তপাত ও বিশৃঙ্খলা’র সূচনা ঘটতে পারে।

১৯৭১ সালের ১২ এপ্রিল সিআইএ’র রিপোর্টে বলা হয়, ‘২৫ মার্চে যখন তারা অভিযান শুরু করে, পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক নেতৃবৃন্দ সম্ভবত ধরে নিয়েছিলেন অথবা অন্তত আশা করেছিলেন আওয়ামী লীগকে ধ্বংস এবং যদি কয়েক ঘণ্টায় নাও সম্ভব হয়, তাহলে কয়েকদিনের মধ্যেই পূর্ব বাংলার নিয়ন্ত্রণ পুনরায় কার্যকরভাবে ফিরে পাওয়া সম্ভব হবে। তাদের হিসাব স্পষ্টতই ভুল ছিল। আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ গ্রেফতার হয়েছেন; কিন্তু তৃণমূল পর্যায়ের দলীয় নেতৃবৃন্দ দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে সক্রিয় রয়েছেন। ১৫ পৃষ্ঠার এই রিপোর্ট থেকে মনে হয়, সিআইএ এই সময়ে শেখ মুজিবের ভাগ্য সম্পর্কে নিশ্চিত ছিল না। রিপোর্ট বলেছে- একটি স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় সম্পর্কে এখনই ভবিষ্যদ্বাণী করা খুব কঠিন। মুজিব এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ যদি এখনো বেঁচে থাকেন এবং তারা প্রত্যাবর্তনের সুযোগ পান তাহলে তারা দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনবেন।’

ঢাকার পরিস্থিতি সম্পর্কে সদ্য প্রকাশিত মার্কিন দলিলে প্রথম বিবরণ পাওয়া যায় ২৮ মার্চ, ১৯৭১ এ তৎকালীন কনসাল জেনারেল ব্লাডের টেলিগ্রামে। ব্লাড লিখেছেন- ‘পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সন্ত্রাসের রাজত্ব প্রত্যক্ষ করে আমরা ভয়ানকভাবে আতঙ্কগ্রস্ত, বাকশক্তিহীন। প্রাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণাদি থেকে দেখা যাচ্ছে- সামরিক কর্তৃপক্ষের কাছে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের একটি তালিকা রয়েছে। যাদেরকে  তারা পদ্ধতিগতভাবে নির্মূল করবে। এজন্য তারা বাড়ির বাইরে ডেকে এনে গুলি চালিয়ে হত্যা করছে। তাদের নিধনযজ্ঞের টার্গেটে আরো রয়েছে ছাত্র নেতৃবৃন্দ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি। বিপুলসংখ্যক এমএনএ এবং এমপিএ রয়েছেন। পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর সমর্থনে অবাঙালি মুসলমানরা পদ্ধতিগতভাবে দরিদ্র বাঙালি ও হিন্দুদের বাসাবাড়িতে হামলা চালাচ্ছে। বহু বাঙালি আমেরিকানদের বাসায় আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন এবং বেশিরভাগই আশ্রয়ের সুযোগ পেয়েছেন। আজ জারিকৃত সান্ধ্য আইন কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এর লক্ষ্য হচ্ছে, পাক সামরিক বাহিনী তল্লাশি ও ধ্বংসযজ্ঞে মেতে উঠবে।

ঢাকায় তারা এখনো পর্যন্ত প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়নি। আগে কিংবা পরে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর পরিচালিত নৃশংসতার পূর্ণ বৃত্তান্ত আলোর মুখ দেখবে। তাই বোধগম্য কারণেই পাকিস্তান সরকার অব্যাহতভাবে সব ঠিক আছে মর্মে যে ভুয়া ধারণা যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে দিচ্ছে সে সম্পর্কে আমি প্রশ্ন তুলছি। ঘরোয়াভাবে হলেও পাকিস্তান সরকারকে আমাদের জানিয়ে দেওয়া উচিত যে, নিজ দেশবাসীর বিরুদ্ধে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর নৃশংসতায় আমরা বেদনাহত। আমি তথ্যের সূত্র হিসেবে অবশ্যই চিহ্নিত হতে পারি এবং ধারণা করি, পাকিস্তান সরকার আমাকে চলে যেতে বলতে পারে। আমি বিশ্বাস করি না যে, ঘটনাবলির পরিণামে মার্কিন কমিউনিটির নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হবে। কিন্তু আমাদের যোগাযোগের সামর্থ্য হ্রাস পাবে।

২৯ মার্চ, ১৯৭১

কনসাল জেনারেল অরচার্ড ব্লাড এদিনের টেলিগ্রামে লিখেছেন, পুরানো ঢাকার আমেরিকান পাদ্রিরা জানালেন, কোনো উস্কানি ছাড়াই সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়েছে। বাঙালিরা শুধু রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়েছিল। সেনাবাহিনী সব গুলিবর্ষণের জন্য বিশেষভাবে দায়ী। কৌশলটা ছিল প্রথমে বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া এবং তারপর পলায়নরত মানুষদের গুলি করে হত্যা করা। বিশ্বাস করা হয়ে থাকে হিন্দুরাই এই অভিযানের মূল টার্গেট। অবশ্য হিন্দুবিহীন এলাকার বাড়িঘরেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর্মি যদিও বেছে বেছে আওয়ামী লীগারদের হত্যার ভাব দেখাচ্ছে, আসলে হত্যা করছে নির্বিচারে। আর্মির ধ্বংসযজ্ঞ বেশিরভাগই ঘটে ২৫-২৬ মার্চের রাতে। ২৭ ও ২৮ মার্চে তুলনামূলক কম। ১১ সদস্যের একটি পরিবারের সবাইকে ২৫ মার্চের রাতে হত্যা করা হয়। ভুয়া অজুহাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু শিক্ষককে হত্যা করা হয়েছে। অনেকে বলছেন, সম্ভাবনাময় সব বুদ্ধিজীবীকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে।

একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, সরকার কিংবা সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট নয়, এমন একটি পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করেছে আর্মি। আমরা বিশ্বস্তসূত্রে নিশ্চিত খবর পাচ্ছি যে, সেনাবাহিনী বাড়িতে বাড়িতে লুটতরাজ শুরু করেছে। যারা বাধা দিচ্ছে তাদেরকে তারা প্রহার করছে। বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা ভীত কিন্তু বিস্ময়করভাবে পরিশীলিত মনোভাব বজায় রেখেছেন। সেনাবাহিনী সাবেক বাঙালি চাকরিজীবীদের বাড়িতে বিশেষভাবে হানা দিচ্ছে। রাজারবাগ পুলিশলাইন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ঢাকার কোথাও কোনো পুলিশ চোখে পড়ছে না। ব্লাড মন্তব্য করেছেন যে, সেনাবাহিনী সাধারণভাবে জনসাধারণকে আতঙ্কগ্রস্ত করতে চাইছে এবং প্রতিরোধ এলেই তারা তা স্তব্ধ করে দিচ্ছে। সামরিক আইন কর্তৃপক্ষের প্রতি হুমকি হিসেবে বিবেচিত সমাজের সম্ভাবনাময় সবাইকেই নিশ্চিহ্ন করা তাদের লক্ষ্য বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

৩০ মার্চ, ১৯৭১

ব্লাড এই টেলিগ্রামটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দেন। এতে বলা হয়, পূর্ব পাকিস্তানের এফএও’তে কর্মরত আমেরিকানরা ২৭ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। তাদের রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, ইকবাল হলের সশস্ত্র ছাত্রদের উপস্থিতি সেনাবাহিনীকে ক্রোধে অন্ধ করে দেয়। তাদেরকে হয় কক্ষে অথবা তারা যখন দলে দলে বেরিয়ে আসছিল তখন পাইকারি হত্যা করা হয়। তারা প্রায় ২৫টি লাশের একটি স্তূপ দেখতে পান। অন্যদের মরদেহ সেনাবাহিনী সরিয়ে নিয়েছে। সবচেয়ে নৃশংসতা চলে রোকেয়া হলে। এই হলে অগ্নিসংযোগের পর ছাত্রীরা যখন পালাচ্ছিল তখন তাদের ওপর চলে মেশিনগানের গুলি। ছাত্রীরা ছিল নিরস্ত্র। ৪০ জন নিহত হয়। এই হামলার লক্ষ্য ছিল নারী ছাত্র নেতৃত্ব নির্মূল করে দেওয়া। কারণ সেনাবাহিনীর কাছে খবর ছিল, নারী ছাত্র কর্মীরা এই হলেই থাকে। আনুমানিক ১০০০ লোক, যাদের বেশিরভাগই ছাত্র তাদের হত্যা করা হয়। উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ফাইল ও নথিপত্র পুড়িয়ে দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ঠিক কত জন মারা গেছে তার সংখ্যা নিরূপণ কঠিন। সরকারিভাবে স্কুল ছিল বন্ধ এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধিকাংশ না হলেও অনেক ছাত্রই চলে গিয়েছিল।

সেই হিসেবে নিহতের সংখ্যা কম হওয়ার কথা। কিন্তু অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ‘আন্দোলনের’ সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছাত্রদের কার্যক্রমের মূল ঘাঁটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়। সুতরাং অনুমান করা চলে, ২৫ ও ২৬ মার্চের রাতে গোলযোগ শুরুর পর তরুণরা সেখানে সমবেত হয়েছিল। ক্যাম্পাসে অন্তত দুটো গণকবরের সন্ধান মিলেছে- একটি ইকবাল হলের, অন্যটি রোকেয়া হলের কাছে। ২৯ মার্চের রাতে গুলিবর্ষণের ফলে কিছু মৃতদেহ স্পষ্ট চোখে পড়ে, তা ভয়ানক গন্ধ ছড়ায়। অনেকে বলেছেন, সেনাবাহিনী কাউকে বন্দি করেনি, সবাইকে হত্যা করেছে। আর্মি রেডিও থেকে বলা হয়েছে, কিছু ছাত্র পালাতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০০০ ছাত্র নিহত হওয়ার তথ্য আমাদের কাছে অতিরঞ্জিত মনে হয়েছে। তবে এখন যে সময় ঢাকায় চলছে তাতে এর সত্যতা উড়িয়ে দেওয়াও যায় না।

৩১ মার্চ, ১৯৭১

পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাবলির প্রতিক্রিয়া শীর্ষক এই টেলিগ্রামটি ইসলামাবাদ থেকে ওয়াশিংটনে পাঠান ফারল্যান্ড। চার পৃষ্ঠার এই বার্তায় তিনি লিখেছেন, পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পুনর্নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় ২৫-২৬ মার্চের রাত থেকে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী যে অভিযান শুরু করেছে তা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের জন্য স্বল্প ও দীর্ঘ উভয় মেয়াদের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ সমস্যা বয়ে এনেছে। এখন আমাদের জন্য আশু ভাবনা হচ্ছে, আমাদের লোকদের সরিয়ে আনা, ঢাকার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগের নিরাপত্তা এবং পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র কি করে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন।... দীর্ঘমেয়াদি ইস্যুগুলোর মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানি সরকারের সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ এবং আমাদের বিভিন্ন অপারেশনাল কর্মসূচি রিভিউ করতে হবে, এই বার্তার লক্ষ্য হচ্ছে কিছু প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া অবহিত করা। বর্তমানে যে সামরিক অভিযান চলছে তার নেপথ্যের কারণ খতিয়ে দেখতে আমাদেরকে অন্তত ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির দিকে তাকাতে হবে। পূর্ব ও পশ্চিম অংশের মধ্যে স্বার্থের বৈচিত্র্য এবং সামাজিক প্যাটার্নের ইতিহাস সবারই জানা। সম্পদের অসম বণ্টন এবং পশ্চিম পাকিস্তানের আধিপত্যের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের দুঃখবোধ ছিলই। সুতরাং পূর্ব পাকিস্তানির তাদের জনসংখ্যার গরিষ্ঠতার আলোকে ন্যায্য পাওনা বুঝে নেয়ার যথার্থতা নিশ্চয় রয়েছে।

পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে একটা ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং তাকে ন্যায্য ভাগ দেওয়ার বিষয়টি পশ্চিম পাকিস্তানে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। এমনকি কট্টর সামরিক নেতৃবৃন্দ যারা পাকিস্তানের ‘অখণ্ডতায়’ জানবাজ তাদের মধ্যেও এমন উপলব্ধি এসেছিল। ক্ষমতা হস্তান্তর প্রশ্নে গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক ভিত্তি অর্জনে ইয়াহিয়ার দীর্ঘ কর্মপ্রয়াসের মধ্যেও এর প্রতিফলন ঘটে। ফারল্যান্ড এ পর্যায়ে মন্তব্য করেন, মার্কিন দূতাবাস দৃঢ়তার সঙ্গেই এই অভিমত রাখছে যে, পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে স্বীকার করে নিয়েই তিনি একটি রাজনৈতিক সমাধানে পৌছাতে আন্তরিক ছিলেন। তবে তিনি অবশ্যই দুটি (বা তার চেয়ে বেশি) পাকিস্তান নয়, এক পাকিস্তানের ভিত্তিতেই সেই রাজনৈতিক ফর্মূলাকে বাস্তবে রূপ দিতে সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। ইয়াহিয়া এবং সামরিক বাহিনী ঢাকায় মার্চের রাজনৈতিক সমঝোতার প্রক্রিয়ায় ছাড় দিতে সত্যি কতটা আন্তরিক ছিল কিংবা তারা কার্যত আলোচনার নামে সামরিক প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য কালক্ষেপণ করছিল- তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা বিরোধপূর্ণ হতে বাধ্য। সত্যটা হতে পারে দুটোরই এক মিশ্রিত রূপ। আমরা বিশ্বাস করি, সব উল্লেখযোগ্য দলগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছাতে ইয়াহিয়া অব্যাহতভাবে কাজ করে গেছেন।

অন্যদিকে এটা সন্দেহাতীতভাবে ধারণা করাই সঙ্গত যে, পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি করা ছিল একটি কন্টিনজেন্সি ব্যবস্থা। ২৫-২৬ মার্চে পূর্ব পাকিস্তানে ইয়াহিয়ার সামরিক শক্তির ব্যবহার তার পূর্বসূরি প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের স্থলাভিষিক্তের ঠিক দুবছর পরে এলো। যার পটভূমি ছিল মুজিব ও তার আওয়ামী লীগ কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানে কয়েক সপ্তাহ ধরে একটি সামন্তরাল সরকার পরিচালনা। আওয়ামী লীগ প্রদত্ত আদেশ ও তা কার্যকর হওয়ার মধ্য দিয়ে একটি প্রতিষ্ঠিত সরকারের বিরুদ্ধে ঘোষিত হয়েছিল এক বিদ্রোহ।
পাকিস্তানের পতাকা ধ্বংস করে দিয়ে উত্তোলিত হয়েছিল বাংলার পতাকা। এবং পূর্ণ পাকিস্তানের কর্মরত বেসামরিক ও সামরিক কার্যক্রমে সৃষ্টি হয়েছিল বাধা। আর এসবই ছিল সশস্ত্র বিদ্রোহের আলামত। তবে পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক শক্তির মাত্রাতিরিক্ত প্রয়োগের যে চিত্র আমাদের ঢাকার মিশন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা দিয়েছেন তা সত্যিই ভয়াল। কিন্তু আমরা শুধুই মানবিক অনুভূতিসম্পন্ন নই, সরকারি চাকুরে। সুতরাং পূর্ব পাকিস্তানে এখন যা ঘটে চলেছে তার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুধুই নৈতিক দৃষ্টিকোণ বিচার করলে চলবে না। সাংবিধানিক সরকার তার কর্তৃত্ব অমান্যকারী নাগরিকদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ করছে। যুদ্ধটা চলছে পাকিস্তানি এবং পাকিস্তানিদের মধ্যে (সৌভাগ্যবশত কোনো আমেরিকান আহত হয়নি। কারো বাসস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি)।

ফারল্যান্ড লিখেছেন, বর্তমান সংকটের প্রাথমিক পর্যায়ে অর্থাৎ ২৫-২৬ মার্চের আগে যুক্তরাষ্ট্র সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পাক সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় তার হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। কারণ বিষয়টি একান্তভাবেই তার অভ্যন্তরীণ। সেই থেকে সংকট ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে, তা আরো ঘনীভূত হয়েছে। কিন্তু সমস্যাটি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ হিসেবেই রয়ে গেছে। এই দূতাবাস মনে করছে পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাবলি নিন্দনীয়, কিন্তু এটা অনভিপ্রেত যে, তারা একটি বিরোধপূর্ণ আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে এটিকে উত্থাপন করবে (এ পর্যন্ত আমরা যতটা জানি কেবল ভারতই পাকিস্তানের বর্তমান সমস্যা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিয়ে যেতে উদ্যোগী হয়েছে)। আমাদের সরকারসহ বিভিন্ন সরকারকে পাকিস্তানের নতুস ঘটনাবলি ও তার তাৎপর্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।।

ফারল্যান্ড পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত ছিলেন ১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ছিলেন এফবিআই’র এজেন্ট। চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক তৈরির দূতিয়ালিতে তিনি ছিলেন অন্যতম অনুঘটক।

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্মরণশক্তিকে মেধা বলার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে - dainik shiksha স্মরণশক্তিকে মেধা বলার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে প্রাথমিকের দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ হতে পারে কাল - dainik shiksha প্রাথমিকের দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ হতে পারে কাল চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান রেজাউল - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান রেজাউল বিদেশ নির্ভরতা কমাতে মানসম্মত উচ্চশিক্ষার তাগিদ ইউজিসির - dainik shiksha বিদেশ নির্ভরতা কমাতে মানসম্মত উচ্চশিক্ষার তাগিদ ইউজিসির এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে বদলি প্রত্যাশী শিক্ষকদের কষ্ট - dainik shiksha বদলি প্রত্যাশী শিক্ষকদের কষ্ট একাদশে ভর্তি আবেদন ২৬ মে থেকে ১১ জুন - dainik shiksha একাদশে ভর্তি আবেদন ২৬ মে থেকে ১১ জুন কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন শুরু ২৬ মে - dainik shiksha একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন শুরু ২৬ মে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025711059570312