কার্যক্রম বন্ধ হলেও অনুমোদন বহাল ২, ৬৯৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: রাজধানীর কাঁটাবনে ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে ওয়েস্টার্ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল। প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদিত। তবে বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য বলছে, বাস্তবে এখন এই প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষা কার্যক্রম নেই।

ব্যানবেইসের এই তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার দুপুরের পর কাঁটাবনে গিয়ে দেখা যায়, যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ছিল, সেখানে এখন একটি আবাসন কোম্পানি বহুতলবিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করছে। দায়িত্বরত দারোয়ান জানালেন, তিনি নির্মাণাধীন এই ভবনে কাজ করছেন ২০২১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে। কিন্তু তিনি আসার সময় এখানে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেখেননি। সোমবার (৮ মার্চ) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মোশতাক আহমেদ।

প্রতিবেদনে আরো জানা যায়, প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা মুঠোফোন নম্বরে ফোন করলে অপর প্রাপ্ত থেকে তানভীর হক নামের একজন ওই প্রতিষ্ঠানের তৎকালীন উপাধ্যক্ষ হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি বলেন, এখন তাঁদের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম স্থগিত আছে। করোনার সময় বন্ধ করা হয়েছিল, আর চালু করা সম্ভব হয়নি।

ব্যানবেইসের তথ্য বলছে, ওয়েস্টার্ন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মতো শিক্ষা বিভাগের অনুমোদন থাকা (ইআইআইএন বা এডুকেশনাল ইনস্টিটিউট আইডেনটিফিকেশন নম্বর) সারা দেশের ২ হাজার ৬৯৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম গত কয়েক বছরে বন্ধ হয়ে গেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত বেসরকারি। তবে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও যেহেতু এখনো ইআইআইএন নম্বর আছে, মানে শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন বাতিল হয়নি, তাই এসব প্রতিষ্ঠানকে কাগজপত্রে এখনো বন্ধের তালিকাভুক্ত করা হয়নি। কিন্তু বাস্তবে এসব প্রতিষ্ঠান কার্যত নেই। ব্যানবেইসের দায়িত্বশীল দুজন কর্মকর্তা এই তথ্য জানিয়েছেন। তাঁরা জানান, ‘বাংলাদেশ শিক্ষা পরিসংখ্যান’ প্রতিবেদনের জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে তাঁরা এই তথ্য জানতে পারেন।

দেশের মাধ্যমিক থেকে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান সংগ্রহ, সংকলন ও বিতরণ করে সরকারি সংস্থা ব্যানবেইস। ব্যানবেইসের তথ্য বলছে, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে সারা দেশে মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে ১৮ হাজারের বেশি। স্কুল অ্যান্ড কলেজ আছে প্রায় দেড় হাজার। কলেজ আছে ৩ হাজার ৩৪১টি, মাদ্রাসা ৯ হাজার ২৫৯টি, কারিগরি প্রতিষ্ঠান ৫ হাজার ৩৯৫টি এবং বিশ্ববিদ্যালয় আছে ১৭১টি।

সংস্থাটির প্রাপ্ত তথ্য বলছে, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদ্যালয়। গত কয়েক বছরে ১ হাজার ২৭৪টি বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে।

এ ছাড়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ অর্থাৎ যেখানে উচ্চমাধ্যমিকের পাশাপাশি মাধ্যমিক স্তরেও পড়ানো হয়, সেই ধরনের ৯১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যকম বন্ধ হয়েছে। এ ছাড়া ৯১২টি কলেজ, ৭৪১টি মাদ্রাসা, ৩৭ শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, ৩১৩টি কারিগরি প্রতিষ্ঠান, ৪৪টি পেশাগত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে। যদিও কাগজপত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্ব রয়েছে গেছে, মানে ওগুলোর ইআইআইএন নম্বর সচল আছে।

ঢাকার কলাবাগানের লেক সার্কাস এলাকার একটি ঠিকানায় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকার তথ্য থাকলেও সেখানে গিয়ে তার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

তবে কী কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে, তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি ব্যানবেইসের কর্মকর্তারা। একজন কর্মকর্তা বলেন, উত্তরাঞ্চলে তুলনামূলকভাবে বেশি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে। তাঁদের ধারণা, অধিকাংশ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে এমপিওভুক্তির আশায়। কিন্তু দীর্ঘদিনেও যখন তা হয় না, তখন অনেকেই হাল ছেড়ে দেন। আবার যথাযথ চাহিদার বিষয়টি বিবেচনা না করেই অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। কিন্তু পরে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তেমন শিক্ষার্থী পায় না।

অভিযোগ আছে, নানা ‘ফন্দিফিকির’ করে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদন পেয়ে যায়।

শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে করোনা শুরুর পর দীর্ঘ দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার প্রভাবও পড়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর।

ব্যানবেইস সূত্র বলছে, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে সাত শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধের তথ্য পেয়েছে তারা।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক  বলেন, তাঁর কাছে মনে হয়েছে অপ্রয়োজনীয়ভাবেও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। কিন্তু সেগুলোতে মানসম্মত শিক্ষক, অবকাঠামো তৈরি হয়নি। ফলে একটা সময় পর আর এসব প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। দ্বিতীয়ত, করোনার কারণেও অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। কোন প্রতিষ্ঠানগুলো এ রকম অবস্থায় আছে, তার তথ্য শিক্ষা বোর্ডগুলোর কাছে আছে। কারণ, পাবলিক পরীক্ষার সময় শিক্ষা বোর্ডগুলো তা জানতে পারে। তাই শিক্ষা বোর্ডগুলোর উচিত এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ইআইআইএন নম্বর বা অনুমোদন বাতিল করে ব্যানবেইসকে জানিয়ে দেওয়া, যাতে ব্যানবেইস প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
তাপপ্রবাহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার বিষয়ে নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha তাপপ্রবাহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার বিষয়ে নতুন নির্দেশনা জাল সনদেই সরকারকে হাইকোর্ট, নয় শিক্ষক অবশেষে ধরা - dainik shiksha জাল সনদেই সরকারকে হাইকোর্ট, নয় শিক্ষক অবশেষে ধরা মা*রা গেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি - dainik shiksha মা*রা গেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ইরানের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন মোখবার - dainik shiksha ইরানের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন মোখবার এমপিওভুক্ত হচ্ছেন ৩ হাজার শিক্ষক - dainik shiksha এমপিওভুক্ত হচ্ছেন ৩ হাজার শিক্ষক কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0058600902557373