কালো যুবরাজের সেই চুনি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

১৩০০ খ্রিষ্টাব্দের আশপাশে মাটি খনন করে বার করা হয়েছিল মহামূল্যবান এক চুনি। মধ্য এশিয়ার হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল থেকে। সম্ভবত, বাদাখশান অঞ্চল থেকে উত্তোলন করা হয়েছিল চুনিটি। পরে যার নাম হয়েছিলো ‘কৃষ্ণাঙ্গ যুবরাজের চুনি’। যদিও তখন কেউই জানতো না, মহামূল্যবান ওই রত্ন কোনো সম্রাটের সৌভাগ্য বয়ে আনবে, আর কোনো সম্রাটের জন্য হয়ে উঠবে অভিশপ্ত।  

লাল এই পাথরকে চুনি বলা হলেও আদতে তা ১৭০ ক্যারেটের একটি স্পিনেল। ১৭৮৩ খ্রিষ্টাব্দের আগে স্পিনেল ও চুনির ফারাক করতে জানতেন না মানুষ। তাই চুনি নামেই পরিচিত হতে থাকে ওই মহামূল্যবান পাথরটি।

সে সময় সিল্ক রুট দিয়ে চীন থেকে পশ্চিম এশিয়ায় বাণিজ্য করতে যেতেন মানুষ। তার পর পশ্চিম এশিয়া থেকে যেতেন আফ্রিকা এবং ইউরোপে। ওই ব্যবসায়ীরা স্পিনেল, চুনি কিনে বিক্রি করতেন। ইতালীয় ব্যবসায়ী তথা পর্যটক মার্কো পোলোও বাদাখশানের চুনির কথা উল্লেখ করেছিলেন।

১৩৬০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ গ্রানাডাতে প্রথম উল্লেখ মেলে কৃষ্ণাঙ্গ যুবরাজের চুনির। গ্রানাডা তখন ছিল এক স্বাধীন দেশ। এখন স্পেনে রয়েছে। সেই দেশের রাজা চতুর্থ সুলতান মহম্মদের কাছে ছিল সেই চুনিটি।

১৩৬২ খ্রিষ্টাব্দে সিংহাসনচ্যুত হন সুলতান মহম্মদ। তিনি গ্রানাডা ছেড়ে সেভিলে পালিয়ে যান। সঙ্গে নিয়ে যান সেই স্পিনেল-সহ বেশ কিছু মূল্যবান ধনরত্ন। যদিও স্থায়ী হয়নি সেই সম্পদ।

সেভিলে গিয়ে সেখানকার সম্রাট পেড্রোর কাছে সাহায্য চান। নিজের সাম্রাজ্য ফিরে পাওয়ার জন্য সেখানকার সম্রাট পেড্রোর দ্বারস্থ হন। গ্রানাডার নতুন সুলনতান যদিও ছিলেন পেড্রোর বন্ধু। কিন্তু, তিনি পাল্টা মহম্মদকেই খুন করেন।

মহম্মদের কাছে থাকা সেই কৃষ্ণাঙ্গ যুবরাজের চুনিও কেড়ে নেন। ইতিহাসবিদদের একাংশ মনে করেন, সুলতান মহম্মদের মতো সেই চুনি পেড্রোর জীবনেও নাকি দুর্ভাগ্য বয়ে এনেছিল।

চুনি হাতে পাওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই পেড্রোর ভাই এনরিক তাঁকে উৎখাতের চেষ্টা করেন। পেড্রো ইংল্যান্ডের রাজা তৃতীয় এডওয়ার্ডের কাছে সাহায্যের আবেদন করেন।
রাজা এডওয়ার্ড মধ্যস্থতার জন্য ছেলে এডওয়ার্ড অফ উডস্টককে পাঠান সেভিলে। এই এডওয়ার্ড যুদ্ধক্ষেত্রে এতটাই নিষ্ঠুর ছিলেন যে, তাঁকে বলা হত কৃষ্ণাঙ্গ বা কালো যুবরাজ।

পেড্রোর সঙ্গে হাত মিলিয়ে এনরিককে দমন করেন এডওয়ার্ড। প্রচুর সেনা দিয়ে সাহায্য করেন। পরিবর্তে পেড্রোর থেকে নেন সেই চুনি। তখনকার মতো পেড্রো জয় পেলেও দু’বছর পর তাঁকে সরিয়ে সিংহাসন দখল করেন এনরিক।

ব্রিটিশ যুবরাজ এডওয়ার্ডের হাতে সেই চুনি আসার পর তার নাম হয় কৃষ্ণাঙ্গ যুবরাজের চুনি। এর পর বংশানুক্রমে ইংল্যান্ডের সম্রাট-সম্রাজ্ঞীদের হাতে যায় সেই চুনি।

এই চুনি কিন্তু ইংল্যান্ডের রাজাদের হাতে এসে তাঁদের ভাগ্য বদলে সাহায্য করেছে। দু’বার প্রাণরক্ষা করেছে দুই সম্রাটের। পঞ্চম হেনরি এজিনকোর্টে যুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন। তাঁর শিরোস্ত্রাণে ছিল সেই চুনি। মাথায় আঘাত করেছিলেন শত্রু। বেঁচে যান তিনি। এমনকি সেই চুনিও ছিল অটুট।

একই ভাবে বসওয়ার্থের যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে এই চুনির জোরে প্রাণে বেঁচেছিলেন রাজা তৃতীয় রিচার্ড। 

১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দে ইংল্যান্ডের সিংহাসনে বসেন দ্বিতীয় চার্লস। তাঁর তোশাখানায় থাকা সামগ্রীর মধ্যে এই চুনির উল্লেখ মেলে। ক্রমে বংশপরস্পরায় হাতবদল হয়েছে এই চুনি। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে নিজের অভিষেকের দিন এই চুনি খচিত মুকুটই মাথায় পরেছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তার শেষযাত্রাতেও সামিল হয়েছিল চুনি বসানো সেই বিখ্যাত মুকুট।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর ইংল্যান্ডের রাজা হন তৃতীয় চার্লস। অভিষেকের দিন শেষ দিকে এই মুকুটই মাথায় পরেছিলেন চার্লস। 

এই চুনি আদতে সার্বভৌমত্বের প্রতীক। ১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এই চুনিখচিত মুকুটের নকশা বার বার পাল্টানো হয়েছে। ১৮৩৮ খ্রিষ্টাব্দে রানি ভিক্টোরিয়ার জন্য এই মুকুটের নকশা ফের বদল করা হয়। তখন থেকে মুকুটের সামনে রয়েছে এই ‘কালো যুবরাজের চুনি’। আর ওই মুকটটিতে মোট রত্নের সংখ্যা এখন ২,৯০১টি। মুকুটটির ওজন প্রায় দেড় কেজি।

সূত্র: আনন্দবাজার 

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল   SUBSCRIBE  করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা প্রাথমিকের সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হাইকোর্টে স্থগিত - dainik shiksha প্রাথমিকের সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হাইকোর্টে স্থগিত আন্দোলন স্থগিত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের, ৭ দিনের মধ্যে কমিটি - dainik shiksha আন্দোলন স্থগিত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের, ৭ দিনের মধ্যে কমিটি পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের নির্দেশ ইউজিসির - dainik shiksha আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের নির্দেশ ইউজিসির কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পদত্যাগ করেছেন সেই তিন বিতর্কিত বিচারপতি - dainik shiksha পদত্যাগ করেছেন সেই তিন বিতর্কিত বিচারপতি কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিচার হওয়া উচিত: সলিমুল্লাহ খান - dainik shiksha ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিচার হওয়া উচিত: সলিমুল্লাহ খান বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল - dainik shiksha বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024669170379639