থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়ায় চরম দুঃসময় পার করছেন কাস্টমসের প্রতাপশালী কর্মকর্তা মতিউর রহমান। টানা কয়েকদিন তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সংবাদপত্রে খবরের শিরোনাম। মতিউরের অঢেল সম্পদের ফিরিস্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রীতিমতো ভাইরাল। এমন টালমাটাল অবস্থায় সহকর্মীদের কাছে বিশেষ সহায়তার অনুরোধ জানিয়েছেন মতিউর।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিপদ থেকে রক্ষায় কাস্টমসকে পাশে চান মতিউর। এজন্য অবিলম্বে বিসিএস কাস্টমস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতি চান তিনি। এ বিষয়ে অনুরোধ জানিয়ে কাস্টমস কর্মকর্তাদের কাছে আবেগঘন দীর্ঘ বার্তা পাঠাচ্ছেন মতিউর। এতে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে চরম দুঃসময় পার করছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
রোববার কাস্টমস অফিসারদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে লেখা এক পোস্টে মতিউর বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, সহকর্মীরা যারা এলটিইউ (জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বৃহৎ করদাতা ইউনিট), ঢাকা পশ্চিম এবং ট্রাইব্যুনালে আমার সঙ্গে কাজ করেছেন, তারা আমার টিমওয়ার্ক সম্পর্কে জানেন। সহকর্মীদের প্রতি আমার ভালোবাসা সম্পর্কেও তারা অবগত। অভিভাবক হিসাবে আমি সব সময় সহকর্মীদের রক্ষা করি। তাই বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আমি আপনাদের সবার কাছ থেকে ভালোবাসা এবং নির্দেশনা আশা করছি।’
গণমাধ্যমে প্রকাশিত কোটি টাকার বাড়ি, রিসোর্ট এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সব ছবি কৃত্রিমভাবে বানানো দাবি করে মতিউর বলেছেন, ‘ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) ভিত্তিক ছবি তৈরি করে অনেক ট্রল চলছে, যা আমাদের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এমন পরিস্থিতির জন্য আমি সত্যিই দুঃখিত।’
সন্তানদের সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণব এবং মেয়ে ফারজানা রহমান ইপ্সিতা খুবই ভালো। বিশেষ করে আমার ছেলে বিয়ের আগে কখনো কোনো মেয়ের সঙ্গে চোখের যোগাযোগ পর্যন্ত রাখেনি। স্ত্রী এবং সন্তানরা আপনাদের সবার সহায়তা চায়। এমন খারাপ সময়ে আমাকে বাঁচান।’
তবে মতিউর-কাণ্ডে এখনই কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাতে রাজি নয় বিসিএস কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশন। এক্ষেত্রে পরিস্থিতি বুঝে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছেন সংগঠনের নেতারা। বিশেষ করে সম্প্রতি পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতি ঘিরে দেশজুড়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আরও সতর্ক অবস্থানের পক্ষে মত এসেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কাস্টমস কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, কাস্টমস এবং পুলিশ প্রশাসনের একটি বড় অংশ আকণ্ঠ দুর্নীতিগ্রস্ত। এটা অনেকটা ‘ওপেন সিক্রেট’। কিন্তু সাবেক আইজিপি বেনজীরের দুর্নীতি নিয়ে আলোচনার মধ্যে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বিবৃতি পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। এখন কাস্টমস অ্যাসোসিয়েশন যদি মতিউরের পক্ষে বিবৃতি দেয় তবে একই পরিস্থিতি তৈরি হবে।
অপর এক কর্মকর্তা বলেন, দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের পক্ষ না নিয়ে বরং সংগঠনগুলোর উচিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকা। দুর্নীতিবাজ হিসাবে কেউ চিহ্নিত হলে অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। যাতে সংগঠনের একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান তৈরি হয়। কিন্তু বাস্তবে এখন হচ্ছে উলটো। ফলে দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের অনেকের ধারণা-বিপদের সময় অ্যাসোসিয়েশন তার রক্ষাকবজ হিসাবে মাঠে থাকবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিসিএস কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও এনবিআর-এর সদস্য ড. সহিদুল ইসলাম সোমবার বলেন, সভাপতি বা অন্য কেউ এককভাবে কোনো বিষয়ে বিবৃতি দিতে পারেন না। এজন্য সংগঠনের বিশেষ সভায় সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এখন পর্যন্ত মতিউর রহমানের পক্ষে বিবৃতি দেওয়ার বিষয়ে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত হয়নি।
মতিউরের বিষয়ে সংগঠনের অবস্থান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাস্টমস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা কাস্টম হাউজের কমিশনার একেএম নূরুল হুদা আজাদ বলেন, ব্যক্তির দায় কখনোই সংগঠন নেবে না। মতিউর রহমানের দুর্নীতির বিষয়ে দুদকসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সংস্থা তদন্ত করছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারও পক্ষে-বিপক্ষে অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতি প্রকাশের সুযোগ নেই। এ বিষয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি।