কী মধু মাদরাসার নিয়োগে

রুম্মান তূর্য |

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্ব বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের হাতে গেলেও প্রতিষ্ঠান প্রধান, সহকারি প্রধান এবং কর্মচারী নিয়োগের ক্ষমতা এখনো কমিটির হাতে। এসব পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এমপিওভুক্ত মাদরাসাগুলো সবসময়ই অতি আগ্রহী। পদ না থাকলেও পরিচালনা কমিটি এসব পদে নিয়োগ, কখনো কখনো কর্মচারীদের শিক্ষক দেখিয়েও নিয়োগ কার্যক্রম চালাতে দ্বিধা করে না।

মাদরাসা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘুষই মাদরাসায় নিয়োগের প্রধান আকর্ষণ। কমিটির হাতে ক্ষমতা থাকার পাশাপাশি নিয়োগের কোনো সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া না থাকায় যাচ্ছেতাইভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিরা ঘুষ নিয়ে ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এসব পদের নিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করেন।  

সম্প্রতি মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা চারটি মাদরাসার সন্ধান পেয়েছেন, যেগুলোতে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরকে জুনিয়র মৌলভী (এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক পদ) দেখিয়ে অফিস সহায়ক নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এসব মাদরাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে অধিদপ্তর। ওই মাদরাসাগুলোর হলো- কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ধরণীবাড়ী মাঝবিল পানাউল্যা বালিকা দাখিল মাদরাসা, নিজাইখান বালিকা দাখিল মাদরাসা, রাজারহাটের নাজিমখাঁন মহিলা দাখিল মাদরাসা এবং বড়ঘাট গমির উদ্দিন দাখিল মাদরাসা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে অর্থ শাখার সহকারী পরিচালক মো. লুৎফর রহমান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ওই মাদরাসাগুলো অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরকে জুনিয়র মৌলভী দেখিয়ে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মিথ্যা তথ্য দিয়ে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগের আয়োজন করে। তারা মহাপরিচালকের প্রতিনিধি পেতে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু যাচাই বাছাইয়ে বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে। ওই চারটি মাদরাসাকে শোকজ করা হয়েছে। জাল-জালিয়াতি করে অবৈধভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালানোর চেষ্টা করায় কেনো তাদের এমপিও বা বেতনভাতা বন্ধ করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে।  

ধরণীবাড়ী মাঝবিল পানাউল্যা বালিকা দাখিল মাদরাসা সুপার আব্দুল মতিন দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, শোকজ পেয়েছি, জবাবও দিয়েছি। 

তবে, কেনো কর্মচারীকে শিক্ষক দেখিয়ে নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করা হলো এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি এ প্রতিষ্ঠান প্রধান।

কেনো মাদরাসাগুলো এভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালাতে আগ্রহী দৈনিক আমাদের বার্তার পক্ষ থেকে তা জানতে চাওয়া হয়েছিলো অধিদপ্তরের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার কাছে। তারা বলেছেন, ঘুষ ও ঘুষের টাকার লোভে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর প্রবণতা এ জটিলতার মূল। মাদরাসা প্রধানরা অবৈধভাবে নিয়োগ কার্যক্রম চালাতে বাধ্য হন। অনেক সময় প্রধানরাই জড়িয়ে পড়েন অনিয়মে। 

অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তার মতে, স্থানীয় এমপি-চেয়ারম্যানই সুষ্ঠু নিয়োগের প্রধান বাধা। ওই কর্মকর্তারা জানান, তিনি সম্প্রতি দক্ষিণের এক দ্বীপ জেলায় একটি মাদারাসায় নিয়োগ কার্যক্রম চালাতে গিয়েছিলেন ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে। নিয়োগ পরীক্ষার পর দেখা গেলো, স্থানীয় এমপির পছন্দের প্রার্থী ভালো করেননি। তাই বেশি নম্বর পাওয়া প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে সব চূড়ান্ত করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। 

সম্প্রতি একটি মাদরাসায় অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। ইউপি চেয়ারম্যানের পছন্দের প্রার্থীকে মাদরাসার অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ না দেয়ায় তাকে আটকে রেখে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় মাদরাসার ম‌্যানেজিং কমিটির সভাপতি উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ-আল মাহমুদ, মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মাসুদুর রহমানসহ চার আসামিকে গত ১ জুন কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। ইউপি চেয়ারম্যান বরখাস্তও হয়েছেন। 
 
এদিকে কর্মচারীকে শিক্ষক দেখিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়ার চেষ্টা চালানো একটি মাদরাসার প্রধানও দৈনিক আমাদের বার্তাকে রাজনৈতিক প্রভাবের শিকার হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ওই মাদরাসার সুপারের কাছে সরাসরি জানতে চাওয়া হয়েছিলো-কারো চাপে তিনি কর্মচারীকে শিক্ষক দেখিয়ে নিয়োগ চালানোর চেষ্টা করেছিলেন কি-না। কিছুক্ষণ ‘আমতা আমতা’ করে ওই শিক্ষক এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। 

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল   SUBSCRIBE  করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ডিআইএর নতুন পরিচালক অধ্যাপক আবু কাইয়ুম - dainik shiksha ডিআইএর নতুন পরিচালক অধ্যাপক আবু কাইয়ুম জাতীয়করণসহ তিন দাবিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরিদের অবস্থান - dainik shiksha জাতীয়করণসহ তিন দাবিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরিদের অবস্থান এমপিওর দাবিতে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় শিক্ষকদের পদযাত্রা - dainik shiksha এমপিওর দাবিতে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় শিক্ষকদের পদযাত্রা কারিগরিতে ৪০ শতাংশ নম্বরে উপবৃত্তি - dainik shiksha কারিগরিতে ৪০ শতাংশ নম্বরে উপবৃত্তি কাউকে হেনস্তা না করার আহ্বান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের - dainik shiksha কাউকে হেনস্তা না করার আহ্বান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের আটকের পর বিজিবিকে যে প্রলোভন দেখান বিচারপতি মানিক - dainik shiksha আটকের পর বিজিবিকে যে প্রলোভন দেখান বিচারপতি মানিক নয় বছরের শিক্ষিকাকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হতে বললেন প্রধান শিক্ষক - dainik shiksha নয় বছরের শিক্ষিকাকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হতে বললেন প্রধান শিক্ষক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027282238006592