বিশ্ব শিক্ষক দিবস আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য, ‘শিক্ষকেই শুরু শিক্ষার রূপান্তর’। শিক্ষকদের অবদান স্মরণ করার জন্য জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনেস্কোর সদস্যভুক্ত প্রতিটি দেশে ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর দিন দিবসটি উদযাপন করা হয়। 

জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শিক্ষকদের মর্যাদা ও মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নে শিক্ষকের গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত করা, শিক্ষকদের অধিকার সম্পর্কে জানানো, মানসসম্মত শিক্ষা ও সব শিশুর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে আলোকপাত করা এবং প্রবীণ শিক্ষকদের অভিজ্ঞতাকে জানা ও কাজে লাগানোই দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ দিবসটি পালিত হচ্ছে। বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর ২৬তম সাধারণ সভায় ৫ অক্টোবর দিনটিকে বিশ্ব শিক্ষক দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরপর ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রথমবার দিবসটি পালন করা হয়। ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বিভিন্ন দেশে শিক্ষকরা মোটা দাগে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ উদযাপন শুরু করেন। ইউনেস্কোর অনুমোদনে প্রতিবছর পৃথক প্রতিপাদ্যে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

ইউনেস্কোর মতে, শিক্ষা ও উন্নয়নে শিক্ষকরা বিশেষ ভূমিকা রাখছেন। মানুষের মধ্যে সচেতনতা, উপলব্ধি সৃষ্টি ও শিক্ষকদের ভূমিকার স্বীকৃতিস্মারক হিসেবে দিবসটি গুরুত্বপূর্ণ। মানবিক বিপর্যয় বা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটে আক্রান্ত হয়েও সামাজিক, অর্থনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিনির্মাণে শিক্ষকরা তাদের ভূমিকা রেখে চলেছেন। 

বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন আলোচনা সভা, র‌্যালিসহ নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি ও বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদ যৌথভাবে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মাজহারুল হান্নান দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, সকাল দশটায় বাকশিস-বিপিসির মিরপুরের অস্থায়ী কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাকশিস সভাপতি ইসহাক হোসেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিঘেরা টুঙ্গিপাড়ায় দিবসটি উদযাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ। পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, শিক্ষক দিবসে টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন পরিষদের নেতারা। পরে, উপজেলার জি টি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যলয়ে এক আলোচনা সভা ও গুণীজন সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে।

স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ সকাল দশটায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান। অনুষ্ঠানে সাবেক শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান ও সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর অতিথি হিসেবে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। 

বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী ফোরাম এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের দাবিতে সকাল দশটায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। এতে কুষ্টিয়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আ কা ম সরওয়ার জাহান বাদশাহ, রাজশাহী ৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. এনামুল হক, সিরাজগঞ্জ ৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ এবং সংরক্ষিত মহিলা এমপি হাবিবা রহমান খানের অতিথি হিসেবে অংশ নেয়ার কথা আছে। 

বাংলাদেশ মাদরাসা জেনারেল টিচার্স এসোসিয়েশন বুধবার বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে ভার্চুয়াল মাধ্যমে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।

বিএনপিপন্থি শিক্ষক সংগঠন শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোট আজ সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচির ডাক দিয়েছে।

দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এখনও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। আর বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষকরা বেতন বৈষম্যে ভুগছেন বলে জানিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদাক্রমেও শিক্ষকরা রয়েছেন বেশ পেছনে। আবার শিক্ষকতায় সরকারি ও বেসরকারি দুটি ভাগ থাকায় বেসরকারি শিক্ষকরা কোনো পদমর্যাদাই পান না। তাদের বঞ্চনা আরও বেশি।

দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষকদের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি খাতে বেতন বৈষম্য তীব্র। বৈষম্য সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও। অথচ একই শিক্ষাগত যোগ্যতায় তাদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। সরকারি শিক্ষকরা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে নিয়োগ পাচ্ছেন। বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষকরাও কেন্দ্রীয়ভাবে বেসরকারি শিক্ষা নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নিয়োগ পাচ্ছেন। একই সিলেবাস ও কারিকুলামে তারা পাঠদান করলেও বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। অথচ, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ৯৭ ভাগই বেসরকারি খাতের। শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সংখ্যায়ও তারাই বেশি।

প্রবীণ শিক্ষক নেতা অধ্যাপক মাজহারুল হান্নান বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এ শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্য ক্রমশ কমিয়ে আনার কথা বলা আছে। সমযোগ্যতায় চাকরি করলে আর সমপরিমাণ শ্রম দিলে বেতন-ভাতায় অধিক বৈষম্য সৃষ্টি করা কাম্য নয়। সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী সব সুযোগ-সুবিধা পান তারা। স্কেলভিত্তিক পূর্ণ বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা হিসেবে ১ হাজার ৫০০ টাকা, বার্ষিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধিও পান। এর বাইরে উৎসব বোনাস স্কেলভিত্তিক দেয়া হয়। 

সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড সরকারি কর্মকর্তার পদমর্যাদা ভোগ করেন। বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কোনো পদমর্যাদাই নির্ধারণ করা নেই। বেসরকারি শিক্ষকরা সরকারি শিক্ষকদের মত বদলির সুবিধা পান না। দীর্ঘদিন একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকতে হয় তাদের। আর প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনও করতে হয় নতুনভাবে নিয়োগ নিয়ে। সরকারি শিক্ষকরা বেতনের শতভাগ উৎসব ভাতা পেলেও বেসরকারি শিক্ষকরা পাচ্ছেন ২৫ শতাংশ। এ নিয়ে শিক্ষকদের মাঝে অসন্তোষ আছে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল বেতন স্কেলও সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের সমানই। তবে কেবল মূল বেতনটুকুই সমান, বাকি সব ভাতা ও সুযোগ সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা পিছিয়ে। তাদের বর্তমানে জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ অনুযায়ী মূল বেতনের শতভাগ বেতন দেয়া হয়। সঙ্গে দেয়া হয় মাত্র এক হাজার টাকা বাড়িভাড়া। এটি নির্ধারিত, অর্থাৎ বাড়িভাড়া বৃদ্ধির কোনো সুযোগ নেই। চিকিৎসা ভাতা নির্ধারিত মাত্র ৫০০ টাকা। আর বিদেশ ভ্রমণ, উন্নত প্রশিক্ষণ এগুলোতে বেসরকারি শিক্ষকরা পিছিয়ে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029349327087402