২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে দেশের ২৬তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৬-এর মাধ্যমে যাত্রা করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে ওই আইনের ১১ ধারা সংশোধন করে প্রো-ভিসির পদ সৃষ্টি করা হয়। পদ সৃষ্টির পর প্রায় ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও ওই পদে কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। শুধু প্রো-ভিসিই নয়, বিশ্ববিদ্যালয় আইনে পরিচালক (গবেষণা ও সম্প্রসারণ), পরিচালক (বহিরঙ্গন) ও পরিচালক (শরীরচর্চা শিক্ষা) পদের উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে এ পদগুলোয় কোনো কর্মকর্তা নেই। গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো খালি থাকায় প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
এদিকে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ এপ্রিল কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কুন্ডু গোপী দাসের মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই বছর পেরিয়ে গেলেও ওই পদে নিয়োগ দেয়া হয়নি। এসব পদ ছাড়াও অধিকাংশ দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তার পদগুলো চলছে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে। এর মধ্যে পরিচালক (অর্থ ও হিসাব), পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, জনসংযোগ কর্মকর্তার পদে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিয়ে কার্যক্রম চলছে। গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো শূন্য ও ভারপ্রাপ্ত দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রায়ই দেখা দেয় প্রশাসনিক জটিলতা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অর্থ ও হিসাব দপ্তরে কামাল উদ্দিন ভুইয়াকে ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের দায়িত্ব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে মোহাম্মদ নূরুল করিম চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব ও জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে মোহাম্মদ এমদাদুল হককে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। লাইব্রেরিয়ান পদে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা নেই, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রেজিস্ট্রার মো. মজিবুর রহমান মজুমদারকে রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে লাইব্রেরিয়ান পদে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এদিকে প্রো-ভিসি, কোষাধ্যক্ষের পদসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো শূন্য থাকায় অনেক সময় প্রশাসনিক স্থবিরতা দেখা দেয়। দীর্ঘ দুই বছর ধরে কোষাধ্যক্ষের পদ শূন্য থাকায় কোষাধ্যক্ষের কার্যক্রম পালন করছেন উপাচার্য। এতে উপাচার্যের চাপ যেমন বাড়ছে, তেমনি তার অনুপস্থিতিতে দপ্তরের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। বর্তমান উপাচার্যের পূর্ববর্তী উপাচার্য অধ্যাপক ড. আলী আশরাফের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরীর নিয়োগে দুই মাস বিলম্ব হয়। ওই দুই মাস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা আটকে ছিল।
এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. আবু তাহের বলেন, ‘গবেষণা ও সম্প্রসারণের জন্য শিগগিরই একটি দপ্তর চালু করে গবেষণায় অভিজ্ঞ একজন শিক্ষককে এখানে দায়িত্ব দেয়া হবে। বহিরঙ্গনের জন্যও পরিচালক নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এছাড়া অন্য যে পদগুলোয় বর্তমানে কর্মকর্তারা ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে আছেন, তার মধ্যে অনেক পদের বিপরীতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে এবং বাকি পদগুলোয়ও নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান। আর কোষাধ্যক্ষ ও প্রো-ভিসি নিয়োগের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেয়া হবে।’
উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, এ দুই পদে দ্রুত নিয়োগ দেয়া জরুরি। এজন্য আমি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে একাধিবার অনুরোধ করেছি। বিশেষ করে কোষাধ্যক্ষ পদে কাউকে নিয়োগ দিলে আমার ওপর চাপ কমত। অন্য কাজে আরো বেশি সময় দিতে পারতাম।