কুবির গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় বিএনপি জামায়াতপন্থিরা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, প্রকৌশলী, প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বিএনপি-জামায়াত পন্থিরা। এদের দাপটে অনেকটা কোণঠাসা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ভুয়া তথ্য ও সনদ দিয়ে চলছে নিয়োগ ও পদোন্নতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা খালিদ সাইফুল্লাহ হত্যা মামলার ৪ বছরেও আসামিদের গ্রেফতার কিংবা বিচার না হলেও পিবিআইর তদন্তে উঠে আসা তিন আসামিকে ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে চাকরিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতির নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধ রাখার কথা বলা হলেও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক কর্মকর্তা উইক ইন্ড কোর্সের নামে শিক্ষা-সনদ বাণিজ্য চালাচ্ছেন। এদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবেখ্যাত বিএনপি-জামায়াত পরিবারের সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. আবু তাহেরের ভাই বিএনপি ক্যাডার মোতাহের হোসেন স্বপনের বিরুদ্ধে রয়েছে দুটি নাশকতার মামলা। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মীর শাহ আলম।[]inside-ad

প্রতিবেদনে আরও জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুরু হয়। ওই সময়ে দলীয় বিবেচনায় শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর কতিপয় ধান্ধাবাজ নেতৃত্বসহ ওই সব বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষক কর্মকর্তাদের নিয়োগ-পদোন্নতি বাণিজ্য ও প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগিতায় বিএনপি-জামায়াতপন্থিদের অনুসারীদের কেউ হরহামেশায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে নিয়োগ ও পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। ফলে বঞ্চিত হচ্ছে প্রগতিশীলধারার প্রার্থীরা। নিয়োগ ও পদোন্নতি প্রাপ্তদের অনেকেই সাময়িকভাবে বোল ও লেবাস পাল্টে আওয়ামী লীগের রাজনীতির ব্যানারে ঢুকে পড়লেও তাদের মধ্যে অন্তত ৮০ শতাংশই শিক্ষাজীবনে কোন না কোনোভাবে বিএনপি-জামায়াত এন্টি বা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ভুয়া তথ্য ও সনদ জালিয়াতি এবং অনিয়মের মাধ্যমে কেউ কেউ চাকরিতে যোগদান ও পদোন্নতি পেলেও এদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয়ভাবে অডিট হয়। কিন্তু ব্যবস্থা নেয়া হয় না কখনও।

সূত্র মতে বাংলা বিভাগের বিতর্কিত শিক্ষক জামায়াতপন্থি মোহাম্মদ গোলাম মাওলা। মাদরাসায় পড়ুয়া এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য দিয়ে ও জালিয়াতি করে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি লাভের অভিযোগ রয়েছে। মাদরাসার দাখিল, আলিম, ফাজিল পাস সনদে তার নাম মোহাম্মদ গোলাম মাওলা উল্লেখ থাকলেও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির আবেদনে তার নাম উল্লেখ করা হয় ড. মোহাম্মদ গোলাম মাওলা (আহম্মেদ মাওলা)। এছাড়া আবেদনপত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিবরণে দাখিলের পরিবর্তে এসএসসি-মানবিক, আলিমের পরিবর্তে এইচএসসি-মানবিক, ঢাকা বোর্ড উল্লেখ করা হয়। টাঙ্গাইলের ঘাটাইলস্থ জিবিজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে নেয়া তার অভিজ্ঞতা সনদেও জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি লাভের আগে মোহাম্মদ গোলাম মাওলা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে রাষ্ট্রপতির বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ১০ শতাংশ বিশেষ কোটায় ভুয়া অভিজ্ঞতা সনদের মাধ্যমে নিয়োগ পান। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে তিনি পটিয়া সরকারি কলেজে যোগদান করেন। এরপর বদলি হয়ে জামায়াত অধ্যুষিত চট্টগ্রামের সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজে ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাস থেকে চাকরি শুরু করেন। তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিতে আবেদন করার সময় সরকারি হাজী মুহম্মদ মহসীন কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবদুল গোফরানের গত ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ২১ সেপ্টেম্বর তারিখের স্বাক্ষর ও সিলযুক্ত অনুমতিপত্র চাকরির আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করেন। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো- ডেইলি স্টার পত্রিকায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশিত হয় ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ মে তারিখে। অর্থাৎ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ৬ মাস ২৩ দিন আগে মহসীন কলেজের অধ্যক্ষ থেকে তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিতে আবেদন করার অনুমতিপত্র গ্রহণ করেছেন। তাহলে প্রশ্ন জাগে উক্ত মোহাম্মদ গোলাম মাওলা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ কিংবা এর কপি ছাড়াই এ ধরনের ভুয়া অনুমতিপত্র কীভাবে নেন এবং কীভাবেই তা আবেদনপত্রে সংযোজন করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পেয়ে যান। ভুয়া তথ্য ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তার চাকরি প্রাপ্তির বিষয়টি ওই সময় দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি। উপরন্তু পদোন্নতি পেয়ে তিনি এখন অধ্যাপক। এবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটিতে এবং ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য সমাবর্তন অনুষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও বঙ্গবন্ধু পরিষদ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি-শিক্ষক ড. জিএম মনিরুজ্জামান বিগত ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ মে সদর দক্ষিণ মডেল থানায় গোলাম মাওলার বিরুদ্ধে জিডি নং- ৫৯৫ দায়ের করেন। ওই জিডিতে শিক্ষক মনিরুজ্জামানকে গোলাম মাওলা লাঞ্ছিত করেছেন এবং প্রাণ নাশের হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়।

গত বছরের ডিসেম্বর মাসে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগসহ কয়েকটি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। অভিযোগে জানা যায়, অন্যান্য বিভাগের জন্য প্রার্থী যোগ্যতা ঠিক রাখা হলেও স্নাতক ২য় শ্রেণির একজনকে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে নিয়োগ দেয়ার জন্য নিয়ম বহির্ভূতভাবে শর্ত কমিয়ে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রভাষক পদের জন্য বিজ্ঞাপনে শিক্ষগতা যোগ্যতা অপেক্ষাকৃত কম চাওয়া হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. আবু তাহের নির্দিষ্ট প্রার্থীর জন্য নিয়ম বহির্ভূত শর্ত দিয়ে এ বিজ্ঞপ্তিটি দিয়েছিলেন। বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দিনের স্ত্রীকে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়োগ পাওয়া ওই প্রভাষক সোহরাবের স্ত্রী শারমিন রেজোয়ানা ১৯৯৭-১৯৯৮ সেশনে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩ বছরের স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ২৭তম ব্যাচের ওই শিক্ষার্থী শারমিন রেজোয়ানা ২য় শ্রেণিতে স্নাতক অর্জন করেন। উক্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের চাকরি প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে গোঁজামিলের কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, আইসিটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. ইমরান হোসেন, অধ্যাপক সোহরাব উদ্দিন ও রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ড. আবু তাহের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করেন। ইমরান নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যেষ্ঠ সাবেক শিক্ষার্থী ড. আবু তাহেরের অনুসারী ও দলীয় আস্থাভাজন ছিলেন। সে সময় ক্ষমতার দাপটে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক লাঞ্ছনার অভিযোগ রয়েছে ইমরানের বিরুদ্ধে। বর্তমানে ৩ জনই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিসহ উচ্চ পদে আসীন হওয়ার সুবাদে ড. আবু তাহেরের একান্ত আস্থাভাজন দলীয় অনুসারী ইমরানের আবদার ও পরামর্শসহ লেনদেনে ড. আবু তাহের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রভাষক পদে যোগ্যতার গোঁজামিল দিয়ে বিজ্ঞপ্তি দেন এবং সোহরাবের স্ত্রী শারমিন রেজোয়ানাকে তার শিক্ষা জীবন শেষের ১৮ বছর পর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে নিয়োগের সুযোগ করে দেন বলে অনেকে জানান।

এদিকে আগামী ২৭ জানুয়ারি সমাবর্তন ও রাষ্ট্রপতির আগমন উপলক্ষে বিভিন্ন ব্যাংক, বীমা, সিমেন্ট-রড কোম্পানি, অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠান, ঠিকাদারসহ বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রেরিত স্পন্সর চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি অর্থমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা অবস্থিত উল্লেখ করে স্পন্সরের নামে লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এসব বিষয় নিয়ে আলাপকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ড. আবু তাহের জানান, আমার ভাইয়ের রাজনীতি ও মামলার বিষয়ে আমার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নিয়োগ পদোন্নতি নিয়ম মাফিক সিন্ডিকেট-কমিটির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। এতে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই।

মঙ্গলবার দুপুরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. এমরান কবির চৌধুরীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা যায়নি। তবে এর আগে আলাপকালে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন-চাকরিপ্রাপ্তদের কেউ মামলা মোকদ্দমায় জড়িত হয়ে শাস্তি পেলে চাকরিচ্যুত করা হবে মর্মে আগেই লিখিত রাখা হয়েছে। এছাড়া নিয়মনীতি মেনে নিয়োগ পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতির সমাবর্তনে দায়িত্ব প্রাপ্তদের নামের তালিকা গোয়েন্দা সংস্থার হাতে দেয়া হয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023488998413086