রোবট নির্মাণে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দিনকে দিন নিজেদের ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। এবার তারা বানিয়েছেন থ্রিডি প্রিন্টেড রাসবেরি পাই বেইজ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন বাংলাদেশের সর্বাধুনিক মানব রোবট। বিখ্যাত বিজ্ঞানী নিকোলাস টেসলার নামের প্রথম অংশ থেকে এই রোবটের নাম তারা দিয়েছেন 'নিকো'। দীর্ঘ এক বছরের পরিশ্রম এবং কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের উদ্যোগে ও কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের অর্থায়নে এটি তৈরি করা হয়েছে। রোবট 'নিকো' তৈরি করা দলের নাম কোয়ান্টা রোবটিক্স। এই দলের সদস্যরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সঞ্জিত মণ্ডল, আইসিটি বিভাগের জুয়েল নাথ, অনিক চক্রবর্তী, তাওসীফ বিন পারভেজ ও মহিউদ্দিন খান মাহিন। নির্মাতা দলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, 'নিকো' তাদের তৃতীয় রোবট। প্রায় ৪ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে এটি নির্মাণে।
রোবটটিতে ব্যবহার করা হয়েছে নিকো ভার্সন ১.০, স্পিড ১.৫ গিগাহার্জ, সিক্সটি ফোর বিট কোয়ার্ড কোর এআরএম প্রসেসর, ৮ গিগাবাইট র্যাম, ১২০ গিগাবাইট রম। ২৯টি শক্তিশালী সার্ভো মোটর ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন প্রকার বডি পার্টস মুভমেন্টের জন্য, চলার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে হাই টর্কের ডিসি মোটর। এ ছাড়া পরিচালনা করার জন্য রয়েছে সেভেন ইঞ্চি রাসবেরি পাই টার্চ ডিসপ্লে। এটি কোনো প্রকার তার সংযোগ ছাড়াই সরাসরি রোবটের সঙ্গে কথা বলে রোবটটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
কোয়ান্টা রোবটিক্স টিমের লিডার সঞ্জিত মণ্ডল বলেন, রোবটটিকে কর্মক্ষেত্রে যে কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে। মানুষের মতোই যে কোনো কাজ করতে সক্ষম আমাদের এ রোবটটি। রোবটটিতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহারের কারণে মানুষের মতোই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করতে পারবে এবং এক চার্জেই প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা ব্যাটারি ব্যাকআপ দিতে সক্ষম আমাদের এই রোবটটি। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে এমন ধরনের রোবট সর্বপ্রথম উদ্ভাবন করা হয়েছে কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের নির্মিত ফ্যাভ ল্যাবে। আমাদের টিম কোয়ার্টার রোবটিক্স আগে আরও দুটি রোবট তৈরি করেছিল। রোবট নিকো আমাদের নির্মিত তৃতীয় রোবট, যেটি বাংলাদেশের সবচেয়ে অ্যাডভান্স রোবট। এর আগে বাংলাদেশে আগে কখনোই ফুল থ্রিডি প্রিন্টেড রাসবেরি পাই বেইস কোনো রোবট তৈরি হয়নি।
কামরুল হাসান বলেন, রোবটটি তৈরিতে কাজ করেছে একঝাঁক তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থী। এটি একটি টকিং রোবট। সে নিজেই নিজের পরিচয় দিতে পারে। ১৮০ ডিগ্রিতে রোবটটি মুভমেন্টও করতে পারে। সে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও দিতে পারে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে রোবটটি অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে আশা রাখি। শিক্ষার্থীদের এমন সাফল্যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন কুবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন। তিনি বলেন, 'এটা দারুণ একটা মাইলফলক বলে আমি মনে করি। এর মাধ্যমে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ রেখেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে গর্বিত করেছে। এসব সাফল্য নিঃসন্দেহে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীকে উৎসাহ জোগাবে। তারা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে নতুন নতুন লার্নিং প্রজেক্টের অংশ হতে পারবে। আমি চাই টিম কোয়ান্টা সংশ্নিষ্ট সবাই এবং আমার শিক্ষার্থীরা যেন এ ধরনের কাজ অব্যাহত রাখে। আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের অনুশীলনভিত্তিক অথেনটিক লার্নিংয়ে যুক্ত করার যে কোনো সুযোগকে স্বাগত জানাতে চাই।