শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন, সাবেক প্রক্টর ড. কাজী ওমর সিদ্দিকীসহ ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৫০ থেকে ৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
হমালার ঘটনার সময় ভারতে অবস্থান করা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইকিউএসি'র সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. রশিদুল ইসলাম শেখের নামও রয়েছে এই মামলায়।
মামলাটির বাদী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দেয়া মো: সাখাওয়াত হোসেন। গত বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) কুমিল্লার সদর দক্ষিণ থানায় তিনি এ মামলাটি করেন।
মামলার এজাহারে ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণীতে বলা হয়, হুকুমমতে বেআইনিভাবে আন্দোলনরত জনতাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে সাধারণ জখম করা এবং ককটেল বিস্ফোরণ করে ত্রাস ও আতঙ্ক সৃষ্টির অপরাধে এই মামলা করা হয়েছে।
এই মামলায় সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন ছাড়াও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৪ জন শিক্ষকের নাম রয়েছে। তারা সবাই প্রক্টরিয়াল বডির দায়িত্বে ছিলেন আন্দোলনের সময়। শিক্ষকরা হলেন- সাবেক প্রক্টর ও ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী, আইকিউএসি'র পরিচালক অধ্যাপক ড. রশিদুল ইসলাম শেখ, সহকারী প্রক্টর ও মার্কেটিং বিভাগের প্রভাষক আবু উবাইদা রাহিদ, সহকারী প্রক্টর ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক অমিত দত্ত। এর মধ্যে অধ্যাপক ড. রশিদুল ইসলাম শেখ গত ১১ জুলাই বাংলাদেশেই ছিলেন না বলে জানা যায়।
এছাড়া এই মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামও রয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতি ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. জাকির হোসেন, সেকশন অফিসার রেজাউল ইসলাম মাজেদ, বিল্লাল হোসেন, কর্মচারী পরিষদের সভাপতি জসিম উদ্দিন, প্লানিং দপ্তরের কম্পিউটার অপারেটর মো মহসিন, আইকিউএসি'র অফিস সহকারী কাম ডাটা প্রসেসর মো. জসিম, হিসাব বিভাগের অফিস সহকারী কাম ডাটা প্রসেসর মো. ফখরুল ইসলাম, নিরাপত্তা প্রহরী মিজানুর রহমান।
এই মামলায় বিবাদী করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মীকেও। বিবাদীর তালিকায় না থাকা অনেক নেতা গত দুই বছর আগেই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে যান বলে জানা গেছে। এমন একটি নাম হলো- শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের সভাপতি রাফিউল আলম দীপ্ত। আবার রাকিবুল ইসলাম রকি নামের একজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই নামে কোন শিক্ষার্থী বাংলা বিভাগে নেই বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
পাশাপাশি এই মামলায় আরো আছেন ছাত্রলীগ নেতা বিপ্লব চন্দ্র দাস, রেজা-ই-ইলাহী, এ এস এম সায়েম,অর্ণব সিংহ রায়, মাহমুদুর রহমান মাসুম, রাকেশ দাস, বিশ্বজিৎ সরকার, পার্থ সরকার, রিয়াজ, আব্দুল্লাহ আল মামুন, পারভেজ মোশারফ, এস কে মাসুম, রাকেশ দাসসহ আরও অনেকে।
মামলার বাদী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, 'সমন্বয়কদের সিদ্ধান্তক্রমে আমাকে বাদী করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাই মামলাটি আমি বাদী হয়েছি।'
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে সাবেক প্রক্টর ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি মামলার বিষয়টি জানতে পেরেছি। আমরা বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই এই মামলা দেয়া হয়েছে। মামলার বিষয়ে আমি আইনি পদক্ষেপ নিব।’
আইকিউএসি'র সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. রশিদুল ইসলাম শেখ বলেন, ‘আমার নাম দেখে আমি বিস্মিত ও লজ্জিত। আমার ছুটি ছিলো ১১ তারিখ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত। আমি দেশের বাহিরে ছিলাম তখন। কিন্তু কীভাবে নাম আসলো জানি না। আমি আমার সকল ডকুমেন্টস থানায় জমা দিয়েছি।’
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস এম আরিফুর রহমান বলেন, ‘৩৬ জনের নামসহ এবং ৫০ থেকে ৬০ জন অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। বিষয়টির তদন্ত চলছে। এখানে যেহেতু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষকদের নামও রয়েছে। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা মোতাবেক তদন্ত করা হবে।’