কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) আবাসিক হল ও একাডেমিক ভবনে ফিল্টার থাকলেও শিক্ষার্থীদের জন্য নেই নিরাপদ পানির ব্যবস্থা। আবার কোনো কোনো হলে ফিল্টারের ব্যবস্থা না থাকার অভিযোগও রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলে দুটি ফিল্টার থাকলেও দুটিই অকেজো হয়ে পড়ে আছে। কাজী নজরুল ইসলাম হল, নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী হল, শেখ হাসিনা হলে ফিল্টারের ব্যবস্থা নেই। তবে এসব হলগুলোতে খাবারের পানির জন্য আলাদা ট্যাংক করা আছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ এসব ট্যাংক নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। ফলে অনেক সময় পানিতে ময়লা পাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ডাইনিংয়ে ফিল্টারের ব্যবস্থা থাকলেও শিক্ষার্থীর তুলনায় ফিল্টারের সংখ্যা অপ্রতুল। ডাইনিংয়ে শুধুমাত্র ফিল্টার থাকায় ওপরের তলায় থাকা শিক্ষার্থীরা ফিল্টার ব্যবহারে তুলনামূলক কম আগ্রহী নিচতলায় থাকা শিক্ষার্থীদের থেকে।
কাজী নজরুল ইসলাম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মজুমদার মোহাম্মদ কাইয়ুম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমাদের পুরো হলের সব শিক্ষার্থী ৩ তলার ট্যাংক থেকে পানি খাই। কিন্তু এই ট্যাংক পরিষ্কার করে কি-না জানা নেই। কারণ এটা পরিষ্কার করতে কখনো দেখিনি। ফলে আমরা নিরাপদ পানি পান করছি কিনা এটা নিয়ে সন্দিহান।
তিনি আরো বলেন, এই পরিস্থিতিতে আমাদের হলে পানির ফিল্টার প্রয়োজন। এটা আমাদের নিরাপদ পানি পান করার ব্যাপারটি নিশ্চিত করবে। আমাদের প্রতি ফ্লোরে একটি করে ফিল্টার দেয়া হলে আমাদের জন্য নিরাপদ পানি পান করা সহজ হবে।
নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মুন্নি ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমাদের হলে আমরা যে পানি পান করি সেটা ফিল্টারের নয়। ট্যাংক থেকে যে পানি আমরা খাই সেই ট্যাংক আদৌও নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় কি-না সেটাও আমরা জানি না। একটু ভালো করে লক্ষ্য করলে পানির সঙ্গে প্রায় সময় ‘গুঁড়িগুঁড়ি’ ময়লা দেখা যায়। আবার পানির বেসিনগুলোতেও মাঝে মাঝে কেঁচো চোখে পড়ে।
শেখ হাসিনা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা শান্তা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, রমজানের ঈদের পর থেকে খাবার পানি থেকে গন্ধ পাচ্ছি। বোতল পরিবর্তন করার পরও গন্ধ আছে, ময়লাও জমে বোতলের তলানিতে। নতুন হল অথচ পানির ফিল্টারের ব্যবস্থা করা হয় নি। এভাবে চলতে থাকলে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়বো।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের প্রভোস্ট জিল্লুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, মেয়েদের জন্য আলাদা একটা ট্যাংকে খাবার পানি রাখা হয়। তারা সেখান থেকে নিয়ে পানি পান করে। সেই জায়গা থেকে ফিল্টার ব্যবহারের প্রয়োজন দেখছি না। কিছুদিন পরপর সেই ট্যাংক পরিষ্কার করানো হয় বলেও দাবি করেন তিনি।
পানিতে ময়লার পাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ব্যপারটি আমিও শুনেছি। ট্যাংক ও পাইপ পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করা হবে। আর সামনে হল কর্তৃপক্ষের মিটিংয়ে নিরাপদ পানির ফিল্টারের বিষয়টি আমি বলবো।
জানতে চাইলে শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট মো. সাহেদুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন,আমাদের হলে ডেডিকেটেড একটা মোটর ও একটা ট্যাংক আছে শিক্ষার্থীদের সুপেয় পানির জন্য। টিউবওয়েলের মতো মাটির নিচের পানি উঠাচ্ছে, সেই পানি খাচ্ছে। তবে সমস্যা হচ্ছে দীর্ঘদিন পানি জমে থাকলে হয়তো ময়লা জমতে পারে।
হলে ফিল্টারের ব্যবস্থা করা হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, একটা হলে এতোগুলো ফিল্টার দেয়ার সুযোগ নেই। আমরা মেয়েদের সঙ্গে কথা বলে এর সল্যুশনের দিকে গিয়েছি।
শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সাবমারসিবল পাম্প থেকে আলাদা দুইটি খাবার পানির লাইন রাখা হয়েছে। ৫০০ লিটারের একটি টাংকি বসানো হয়েছে। সোম, মঙ্গলবারের মধ্যে ছাত্ররা সেখান থেকে পানি পাবে।
বঙ্গবন্ধু হলে পর্যাপ্ত ফিল্টারের ব্যবস্থা না থাকার বিষয়ে হলটির প্রাধ্যক্ষ ড. মোঃ মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম বলেন, হলে ফিল্টার দেয়ার ব্যাপারটি হল কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছে। তবে সে বিষয়ে তারা (প্রশাসন) এখনও কিছু জানায়নি।
একই অবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনগুলোতে। অনুষদের প্রতিটি তলায় দুটো করে ফিল্টারের ব্যবস্থা থাকলেও বেশিরভাগ ফিল্টারে জমে আছে শ্যাওলা।
জানতে চাইলে প্রত্নতত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো.সোহরাব উদ্দীন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমাদের এখানে যে ফিল্টারটি আছে সেটা অনেক আগের। আমরা ঈদের পর ফিল্টারগুলো চেঞ্জ করেছি। কিন্তু ছাদের ট্যাংকিটাই অপরিষ্কার। ফলে কয়েকদিনের মধ্যে আবার ময়লা হয়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি চিফ মেডিক্যাল অফিসার মাহমুদুল হাসান খান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শিক্ষার্থীদের সুস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে হল, হল ও অনুষদগুলোতে ফিল্টারের ব্যবস্থা করা উচিত। তাছাড়া ট্যাংক থেকে পানি পান করার ক্ষেত্রে পানিতে ফিটকারী ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে কয়েকদিন পরপর ট্যাংকগুলো পরিষ্কার করা উচিত।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শক ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. মোহা. হাবিবুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এটা বিভাগগুলো দেখবে। কারণ বিভাগের ফিল্টারের পানি তো বিভাগের সবাই খাচ্ছে। এই সমস্যা সবার। এ ব্যাপারে আমি ১৯ টি বিভাগের ছাত্র পরামর্শককে জানাবো। তারা বিভাগের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করবেন।