কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে মাত্র ১৩০০ শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা পাচ্ছে

কুমিল্লা প্রতিনিধি |

দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার প্রাচীন বিদ্যাপীঠ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ। ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে এ কলেজের শিক্ষার্থীরা অসামান্য অবদান রেখেছেন। এ কলেজের ৩৩৪ জন ছাত্র ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে ৩৫ জন শহীদ হন। কিন্তু প্রতিষ্ঠার প্রায় ১২০ বছরেও ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যাপীঠের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আবাসনসহ নানা সমস্যা ও সংকটের সমাধান হয়নি। এখানে প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ১৩শ শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা পেলেও অন্যরা বঞ্চিত রয়েছেন। এ অবস্থার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ জেলার বিশিষ্টজনরা। কলেজ কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ সেপ্টেম্বর ত্রিপুরা রাজ্যের তৎকালীন জমিদার রায় বাহাদুর আনন্দ চন্দ্র রায় কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে চালু হয় অনার্স কোর্স। বিএসসি ও বিকম কোর্স শুরু হয় পর্যায়ক্রমে ১৯৪২ এবং ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে। নৈশকালীন পাঠদান কর্মসূচি চালু হয় ১৯৫৮খ্রিষ্টাব্দে। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে এ কলেজ উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি শাখায় বিভক্ত হয়। কলেজটি ১৯৮৪-৮৫ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের মর্যাদা লাভ করে। কিন্তু প্রাচীন এ কলেজে রয়েছে আবাসন সংকটসহ নানা সমস্যা।

সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, কলেজের ডিগ্রি শাখায় দুটি ছাত্রাবাস রয়েছে। এর মধ্যে ছাত্রদের কবি নজরুল ইসলাম হলে আসন সংখ্যা ৬৩৫ এবং ছাত্রীদের নবাব ফয়জুন্নেছা হলে আসন ৪শটি। উচ্চ মাধ্যমিক শাখার জন্য নগরীর টমছম ব্রিজ এলাকায় নিউ হোস্টেলের সোহরাওয়ার্দী ও রবীন্দ্রনাথ হলের ৪টি ভবনের মধ্যে একতলা বিশিষ্ট তিনটি ভবনই জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত। পাশের চারতলা বিশিষ্ট একটি ভবনে গাদাগাদি করে প্রায় ৩শ জন ছাত্র রয়েছে। নগরীর দক্ষিণ চর্থায় শেরে বাংলা ছাত্রী নিবাসটি দীর্ঘ দুই যুগেরও অধিক সময় ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। কলেজের দুটি শাখার প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ১৩শ ছাত্র ও ছাত্রীর জন্য হলে আসন থাকায় বাকি শিক্ষার্থীরা আবাসন সংকটে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বিশেষ করে ছাত্রীদের ক্ষেত্রে এ দুর্ভোগের মাত্রা অবর্ণনীয়। প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল আবাসিক ব্যবস্থার ফলে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও মেসে অতিরিক্ত ব্যয়ভার বহন করে থাকতে হচ্ছে।

ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ছাত্র ফাহিম, শওকতসহ কয়েকজন জানান, নগরীতে ছাত্রছাত্রী বা ব্যাচেলর ভাড়া প্রদানে বাসাবাড়ির মালিকদের অনীহা রয়েছে। এ অবস্থায় দূর-দূরান্তের ছাত্রছাত্রীরা বাসা ভাড়া নিয়ে মেসে ও আত্মীয়-স্বজনের বাসাবাড়িতে যেনতেনভাবে থাকার ব্যবস্থা করেই পড়ালেখা করছে।

কবি নজরুল হল ও নিউ হোস্টেল হলের ছাত্র অনিক, মেহেদী, ফারুক, জয়সহ বেশ কয়েকজন জানান, তাদের কক্ষগুলো জীর্ণশীর্ণ ও স্যাঁতসেতে, ভবনে ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। দেওয়ালের চুনা ও পলেস্তারা খসে পড়ছে। বেশিরভাগ বাথরুম ও টয়লেটের দরজা নেই। শিক্ষার্থীর তুলনায় বাথরুম ও টয়লেট অপ্রতুল। প্রতিদিন ভোরে সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে পর্যায়ক্রমে প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে হয়।

তারা আরও জানান, নিউ হোস্টেলের চারটি আবাসিক ভবনের মধ্যে একতলা বিশিষ্ট তিনটি ভবন সংস্কারের অভাবে পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ সংস্কারের উদ্যোগ নিলে এখানে অনেক শিক্ষার্থী থাকার সুযোগ পেত। আশপাশে খানাখন্দ ও আগাছার কারণে মশা-মাছি ও সাপ-বিচ্ছুর উপদ্রব বেড়েছে। নবাব ফয়জুন্নেছা হলের ছাত্রী ফৌজিয়া, তামান্না, প্রিয়াংকাসহ কয়েকজন জানায়, তারাও একই সমস্যায় ভুগছে। তারা অবিলম্বে এগুলো সংস্কারের দাবি জানিয়েছে।

কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার সাহা বলেন, এ কলেজে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর আবাসন সংকট সমাধানে পরিকল্পনা রয়েছে। পরিত্যক্ত অডিটরিয়াম ও আবাসিক ভবনগুলো সংস্কারসহ যেসব হলে সমস্যা রয়েছে, তা সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কলেজে খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চার জন্য মাঠসহ অবকাঠামোর উন্নয়নে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0042610168457031