বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকট, ক্রমবর্ধমান দুর্বিষহ লোডশেডিং, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতির জন্য প্রতিনিয়ত প্রেক্ষিত পরিবর্তন হচ্ছে। এতে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও প্রাজ্ঞ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের অভাব এবং ব্যবসায়ী মহলের তথাকথিত সিন্ডিকেটের কারণে আজকের এই পরিস্থিতি।
তবে ক্ষমতাসীনরা বলছেন, সারা পৃথিবীতেই মন্দাজনিত কারণে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। রাজিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তেলের বাজার অস্থির।
যদিও বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমেছে। বাংলাদেশে সেই অনুসারে তেলের দাম কমেনি বা সমন্বয় করা হয়নি।
এদিকে স্বাভাবিক নিয়মে জাতীয় নির্বাচনের আর মাস ছয়েক বাকি। নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সরকার ও বিরোধী দল মুখোমুখি। সরকার সংবিধানের বাইরে যেতে চাইছে না। কিন্তু মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং গণতন্ত্র মঞ্চ, গণ-অধিকার ফোরাম ও নাগরিক ঐক্যসহ প্রায় সব বিরোধী দলই একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে আসছে।
এসবের মধ্যেই বাংলাদেশে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের প্রশ্নে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ কারণে সরকার নিয়ন্ত্রিত জনপ্রশাসনসহ আইনশৃংখলা বাহিনীতেও একটি প্রভাব পড়েছে। অনেক সরকারি কর্মকর্তা ও সাবেক কর্মকর্তা নাকি এরই মধ্যে বিদেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছেন।
এমন পরিস্থিতিতে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনকে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, নির্বাচন যতোই ঘনিয়ে আসছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স খবর দিয়েছে, সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারতসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশের গোয়েন্দা প্রধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান এভ্রিল হেইনস ছিলেন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও ঢাকার সাবেক কূটনীতিকরা মনে করছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথা পশ্চিমা দেশগুলোতে আমাদের কূটনীতিকদের সময়োচিত পদক্ষেপ না নেয়া, সমন্বয়ের অভাব ও দরকষাকষির ব্যর্থতার কারণে পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে সরকারের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু বলে বিবেচিত প্রতিবেশী দেশ ভারত, বাংলাদেশের পাশে কৌশলগতভাবে কি অবস্থান নেবে সেটি বিবেচ্য বিষয়। তবে নয়া দিল্লির সাউথ ব্লক থেকে এখন পর্যন্ত স্পষ্টত কিছু জানা যায়নি।
ঢাকায় কূটনীতিক তৎপরতা
বাংলাদেশের ঘনীভূত রাজনৈতিক সংকট সমাধানে, ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসসহ পশ্চিমা কূটনীতিকরা গত প্রায় এক বছর ধরে ব্যাপক তৎপর। এ ছাড়া ঢাকায় জাতিসংঘের প্রতিনিধিও দফায় দফায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করছেন। গত ছয় মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা ঢাকায় বৈঠক করে গেছেন।
ঢাকায় কূটনীতিকরা বলছেন, দেশের রাজনৈতিক ও আর্থ সামাজিক পরিস্থিতি দ্রুত প্রেক্ষাপট পরিবর্তিনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এদিকে আগামী সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। সাউথ ব্লকের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি বছরে শেখ হাসিনার ভারত সফর অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে।
ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের বরফ গলাতে ব্যাপক তৎপরতা চলছে। এছাড়া ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথেও সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা চলছে। দায়িত্বশীল সূত্র মতে, বর্তমানে জাপানের টোকিওতে দুজন উর্দ্ধতন সরকারি কর্মকর্তা সফরে রয়েছেন। জাপানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের বৈঠক করার কথা।
আগামী নির্বাচন
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিতে দোলাচল চলছেই। নির্বাচনের সঠিক সময় কিংবা নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি নিয়ে এখন আর খবর শোনা যাচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান প্রায় দুমাস আগে এ লেখকে বলেছিলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে, সব ঠিকঠাক থাকলে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে অথবা ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারির ৮ তারিখে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীও এমন আভাস দিয়েছিলেন। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সংবিধান মতে কি হবে এখনো তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
লেখক : কুদরাত-ই-খোদা, স্পেশাল এডিটর, দৈনিক আমাদের বার্তা