গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের উপজেলার কামারপাড়া ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হওয়া নাজমুল হাসানের খবর কেউ রাখেনি।
নাজমুল হাসান (২৪) সাদুল্লাপুর উপজেলার কামারপাড়া ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামের মৃত হাইদুল ইসলামের ছেলে।
জানা যায়, নাজমুল হাসান (২৪) হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান। তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়। তার বাবা একজন দিনমজুর ছিলেন। অষ্টম শ্রেণি পাস করার পর পরিবারের অভাবের কারণে ঢাকায় একটিগার্মেন্টসে চাকরি নেন তিনি।
গত ৪ আগস্ট বিকালে চলমান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে চার বন্ধু মিলে আশুলিয়া থেকে বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। বিক্ষোভ মিছিল চলা কালে গুলিবিদ্ধ হয়ে নাজমুল ও তার এক বন্ধু আহত হন। তাদেরকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তার বন্ধু। নাজমুল হাসপাতালের চতুর্থ তলায় ২১ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ওইদিন সন্ধ্যায় অপারেশন করে বের করা হয় বুকের নিচে লাগা গুলি। চিকিৎসকরা আশাবাদী হলেও পরে ৯ আগস্ট মারা যান তিনি।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে তার মরদেহ গত ১০ আগস্ট গ্রামের বাড়িতে নিয়ে এসে তার বাবার করবের পাশে দাফন করা হয়। মৃত্যুর ১৩ দিন অতিবাহিত হলেও বাংলাদেশ নতুনভাবে স্বাধীন হলেও কেউ খোঁজ রাখেনি শহীদ নাজমুল হাসানের। খবর রাখেনি কেউ তার পরিবারের, পাশে দাঁড়ায়নি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত নাজমুল ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তান। তার উপার্জনের অর্থে চলতো সংসার বাড়িতে যে টাকা পয়সা ছিলো তার সবটাই ব্যয় হয়েছে নাজমুলের চিকিৎসার পেছনে।
কান্নাজড়িত কন্ঠে নাজমুলের দাদি বলেন, বড় আশা ছিলো আমার ছেলের মৃত্যুর পর নাতি (নাজমুল) সংসারের হাল ধরবে, তাকেও আল্লাহ কেড়ে নিলো। আমরা এখন কেমনে বাঁচবো।
ছোট বোন আয়শা বলেন, ভাই মারা যাওয়ার পর আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম। কীভাবে চলবে আমাদের সংসার?
এলাকাবাসী জানান, আমাদের গ্রামের মধ্যে সবচেয়ে গরিব পরিবার তারাই। নাজমুলের বাবা মারা যওয়ার পর থেকে নাজমুলই সংসার চালাতো। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নাজমুল মারা যাওয়ার পর তাদের পাশে কেউ দাঁড়ায়নি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও আন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টামণ্ডলীদের নিকট আবেদন যেনো তারা এই অসহায় পরিবারটির দিকে একটু তাকান।