অবসর-কল্যাণে কেটে নেয়া টাকার হিসাব চান শিক্ষকরা

রুম্মান তূর্য |

একযুগের বেশি সময় শিক্ষকতা করছেন মো. মিজানুর রহমান। বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার মানিকখালি রহমানিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। এমপিওভুক্ত এই সিনিয়র শিক্ষক জানেন না অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য তার এমপিও থেকে কতো টাকা এখন পর্যন্ত চাঁদা বাবদ কেটে নেওয়া হয়েছে। তার মতোই ধোঁয়াশায় আছেন বিভিন্ন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাড়ে ৫ লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী।

দৈনিক আমাদের বার্তাকে মিজানুর রহমান বলেন, অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট বাবদ এক সময় মোট ৬ শতাংশ কেটে রাখা হতো, এখন কাটা হচ্ছে ১০ শতাংশ। প্রতি মাসে এ খাতে কতো টাকা দিচ্ছি, এখন পর্যন্ত কতো টাকা দিয়েছি, সুদে আসলে সে টাকার পরিমাণ কতো হয়েছে সে বিষয়ে কিছুই জানানো হয় না শিক্ষকদের। শুধু জানি, ২৫ বছর চাকরি করতে পারলে অবসরের পর এককালীন ১০০ মাসের মূল বেতনের সমান সুবিধা পাবো। এর মধ্যে ৭৫ মাসের বেতন দেবে অবসর সুবিধা বোর্ড, আর ২৫ মাসের বেতন দেবে কল্যাণ ট্রাস্ট। সে টাকাও অবসরে যাওয়ার কতো বছর পরে পাবো তার কোনো হিসাব নেই। তাই আমরা চাই পূর্ণাঙ্গ পেনশন সুবিধা। [insie-ad-1]

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বর্তমানে স্কুল ও কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও (বেতন-ভাতার সরকারি অংশ) থেকে প্রতিমাসে ৩২ কোটি টাকার বেশি কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য ও প্রায় ৪৯ কোটি টাকা অবসর সুবিধা বোর্ডের জন্য কেটে রাখা হয়। আর মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষকদের এমপিও থেকে প্রতিমাসে এ দুই খাতের জন্য কেটে রাখা হয় ৩২ কোটি টাকার বেশি। প্রতি মাসে শিক্ষকরা ১১৩ কোটি টাকা নিজেদের এমপিও থেকে এ দুই খাতে দেন। সে হিসেবে বছরে এ দুই খাতে শিক্ষকরা দেন ১ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা। এ বিপুল পরিমাণ টাকার সুদ বাবদ কতো টাকা পাওয়া যায় সে হিসাবও নেই শিক্ষকদের কাছে। বর্তমানে শিক্ষকদের এমপিও থেকে কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য ৪ শতাংশ ও অবসর সুবিধা বোর্ডের জন্য ৬ শতাংশসহ মোট ১০ শতাংশ টাকা কেটে রাখা হয়। তবে কোন শিক্ষক কতো টাকা দিচ্ছেন সে হিসাব এমপিও শিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। শিক্ষক-কর্মচারীদের জমানো টাকায় অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা দেয়া হয় প্রতি মাসে। আবার শিক্ষকদের থেকে কেটে রাখা টাকার বাইরেও বেসরকারি স্কুল-কলেজে ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের ১০০ টাকা করে গতবছর থেকে নেয়া হচ্ছে শিক্ষকদের অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট বাবদ।

শিক্ষকরা বলছেন, অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা নিতে যখন অবসর প্রাপ্ত শিক্ষকরা আবেদন করেন তখন জানানো হয় ফান্ড নেই। আমরা চাই পূর্ণাঙ্গ পেনশন সুবিধা। কিন্তু এর আগে প্রতি মাসে কতো টাকা কেটে নেয়া হচ্ছে তার হিসেব চাই এমপিও শিটে। [insie-ad]

তবে, অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের কতো টাকা কেটে নেয়া হয় সে হিসাব এমপিও শিটে অন্তর্ভুক্ত করার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানিয়েছেন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান পদে থাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। তিনি বলেন, সরকারি কর্মচারীদের বেতন থেকেও টাকা কেটে নেয়া হয়, সে টাকার হিসাবও সরকারি কর্মচারীরা পান না। আমাদের অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টে শিক্ষকদের বেতন থেকে কেটে নেয়া টাকা ছাড়াও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের থেকে নেয়া টাকা এখনো প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে আছে। এ টাকা আমরা শিগগিরই পাঠানোর জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলবো। 

তিনি আরো বলেন, শিক্ষকরা কে কতো টাকা অবসর সুবিধা বাবদ দিচ্ছেন সে হিসেব এজি অফিসের কাছে আছে। তাদের কাছে চাইলে তারা আমাদের (অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্ট) দিতে পারবেন। আর শিক্ষার্থীদের ভর্তি থেকে যে টাকা আসছে সে টাকা যুক্ত হলে শিক্ষকদের অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পাওয়ার ভোগান্তি কমবে বলে আশা করছি।    

এদিকে এমপিও শিক্ষকদের পেনশন সুবিধা দেয়া না দেয়ার বিষয়টি সরকারে উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে ওপর নির্ভর করে বলে জানিয়েছেন অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্ট সংশ্লিষ্টরা। তাই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি তারা।

পদাধিকার বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবই অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের সভাপতি। আর দুটোরই সচিব পদে দুজন এমপিওভুক্ত অধ্যক্ষ।  

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল   SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান - dainik shiksha ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ - dainik shiksha সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0079178810119629