নিউজিল্যান্ডের মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার পেছনে প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে অ্যাবা অকারলান্ড। অ্যাবা ১১ বছরের একটি শিশু। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে সুইডেনের স্টকহোমে সন্ত্রাসী হামলায় সে নিহত হয়। অ্যাবা হত্যার প্রতিশোধ নিতেই নিউজিল্যান্ডের মসজিদে হামলা চালানো হয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছে মূল হামলাকারী ব্রেন্টন ট্যারেন্ট।
শুক্রবার (১৫ মার্চ) জুমার নামাজের সময় নিউজিল্যান্ডের দুটি মসজিদে হামলার আগে ট্যারেন্ট তার টুইটার অ্যাকাউন্টে ৭৩ পৃষ্ঠার একটি মেনিফেস্টো (ঘটনার কারণ) প্রকাশ করে। তাতে একথা উল্লেখ করা হয়েছে।
মেনিফেস্টোতে বলা হয়, ‘২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে সুইডেনের স্টকহোমে সন্ত্রাসী হামলায় ১১ বছর বয়সী শিশু অ্যাবা অকারলান্ড নিহত হওয়ার ঘটনার শোধ নিতে এই হামলাটি চালানো হয়েছে। স্টকহোমের ওই ঘটনাটিই আমাকে প্রথম এ ধরনের হামলার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে, বিশেষ করে ওই ১১ বছর বয়সী মেয়েটির মৃত্যু। অ্যাবার মৃত্যু হয়েছে ‘দখলদার’দের হাতে...আমি এ ধরনের হামলা এড়িয়ে যেতে পারি না।’ ফ্রান্সের নিস শহরের ঘটনাটিও তাকে হামলায় প্রেরণা যুগিয়েছে বলে মেনিফেস্টোতে উল্লেখ করে ট্যারেন্ট।
বন্দুকধারী হামলাকারী ব্রেন্টন ট্যারেন্ট অস্ট্রেলিয়ান বংশোদ্ভূত একজন শ্বেতাঙ্গ মৌলবাদী, ডানপন্থি ও সহিংস সন্ত্রাসী। তার বয়স ২৮ বছর। অস্ট্রেলিয়ান প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন জানান, হামলাকারী ব্রেন্টন ট্যারেন্ট অস্ট্রেলিয়ান বংশোদ্ভূত শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদের মৌলবাদী ও জঙ্গি মানসিকতার। ওই ব্যক্তিকে অস্ট্রেলিয়ায় হাজতবাস করতে হয়েছিল। এছাড়াও জানা যায়, অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস অঙ্গরাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অপরাধ সংক্রান্ত পুরনো রেকর্ড আছে গ্রাফটন শহরের এই লোকের।
ব্রেন্টন ট্যারেন্ট প্রকাশিত মেনিফেস্টোতে তিনি নিজেকে একজন সাধারণ শ্বেতাঙ্গ লোক বলে পরিচয় দেন। উল্লেখ করেন, একটি শ্রমিক শ্রেণির স্বল্প-আয়ের পরিবারে জন্ম নিলেও জনগণের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে তিনি হামলার সিদ্ধান্ত নেন। ট্যারেন্টের অস্ত্র-সরঞ্জামে ছিল মুসলিম-বিদ্বেষী নানা শব্দ। মেনিফোস্টেতে আরো বলা হয়, ইউরোপের ভূমিতে অভিবাসীর সংখ্যা একেবারে কমিয়ে ফেলতে সে এই হামলাটি চালিয়েছে।
ট্যারেন্টের ব্যক্তিগত টুইটার অ্যাকাউন্টের হেডার ফটো হিসেবে যে ছবি রয়েছে, সেখানে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রান্সের নিস শহরে বাস্তিল ডে উদযাপন অনুষ্ঠানে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত একজনের ছবি রয়েছে। সেদিন জনতার ওপর ট্রাক চালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় ৮৪ জনের প্রাণহানি হয়।
নিউজিল্যান্ডে ভয়াবহ হামলাটি চালানোর জন্য দুই বছর ধরে পরিকল্পনা করছিল জানিয়ে ট্যারেন্ট তার মেনিফেস্টোতে বলেছে, তিন মাস আগেই সে ক্রাইস্টচার্চে হামলার সিদ্ধান্ত নেয়। অভিবাসীদের দিকে ইঙ্গিত করে বলা হয়, ‘ঐতিহাসিকভাবে ইউরোপের ভূমিতে বিদেশি দখলদারদের কারণে শত শত মানুষের মৃত্যুর পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে ‘দখলদার’দের ওপর এই হামলা চালানো হচ্ছে।’