কে এল জুবিলী কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

রাজধানীর পুরান ঢাকার কে এল জুবিলী স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ সমরেন্দ্র নাথ রায়ের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। দৈনিকশিক্ষা ডটকমের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা।

অভিযোগে বলা হয়েছে, কে এল জুবিলী স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ সমরেন্দ্র নাথ রায় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের ২১০৭ খ্রিস্টাব্দে কয়েক মাসের পিএফ ফাণ্ডের ২০ লাখ টাকা জমা দেননি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রায় ২০ বছর কোনো সরকারি অডিট না করিয়ে ইচ্ছামত প্রতিষ্ঠানের টাকা খরচ করেছেন। স্কুল শাখায় দীর্ঘদিন জমানো গ্রাচ্যুইটি ফাণ্ডের টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন তিনি। কলেজ শাখায় ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের সেশন চার্জ ও ভর্তি ফি বাবদ কয়েক লাখ টাকা জমা না দিয়ে আত্নসাত করেছেন ।

কে এল জুবিলী স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ সমরেন্দ্র নাথ রায়ের চাকুরির মেয়াদ ৬০ বছর পূর্ণ হয়েছে গত ৩১ জানুয়ারি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১১/০৮/০৬ খ্রিস্টাব্দের ১৫৬৭ নম্বর স্মারকে বলা আছে, বেকারত্ত্ব দূর করার জন্য সরকার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ (বর্ধিত ৫ বছর) বাতিল করেছেন। যেহেতু সরকার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করেছে, তাই বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ অবসরে যাওয়া কোনো শিক্ষককে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে পারবে না। কিন্তু সরকারের এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বর্তমান অধ্যক্ষ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সদ্যসাবেক কলেজ পরিদর্শকের আত্মীয়কে কে এল জুবিলী স্কুল ও কলেজে বিধিবহির্ভুতভাবে চাকরি দেয়ার বিনিময়ে অধ্যক্ষকে ২ বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায়ও ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা অধ্যক্ষের বিধি বহির্ভূত অবৈধ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।

অভিযোগে জানা যায়, কে এল জুবিলী স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষের জন্য বাসভবন থাকলেও সমরেন্দ্র নাথ রায় ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর হতে প্রতিষ্ঠান থেকে বাসাভাড়ার টাকা উত্তোলন করে আসছেন। অধ্যক্ষের বেতন কোড-৫ যা ৯০০*১০=৯০০০ টাকা ইনক্রিমেন্ট সরকার নির্ধারিত থাকলেও তিনি প্রতি বছর প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত ইনক্রিমেন্ট গ্রহণ করেন প্রায় ১৪৪০০ টাকা ইনক্রিমেন্ট এবং এর ওপর সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করছেন। বছরে ৩ থেকে ৪ বার ভারত ভ্রমণ করেন। অথচ বিধি বহির্ভুত বার্ষিক বেতন সম্পূর্ণ গ্রহণ করেন তিনি। ২০১১ ও ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষা সফরের নামে ভারত ও নেপাল ভ্রমণ করেন অধ্যক্ষের সমরেন্দ্র নাথ রায়। এ সময় তার পরিবারের সকল সদস্য প্রতিষ্ঠানের টাকায় ভ্রমণ করেন। এতে দুই বছরে প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪০ লাখ টাকা খরচ হয়।

আনিসুর রহমান নামে একজন শিক্ষক আমেরিকায় ডিভি লটারি পেয়ে চলে যান। দীর্ঘ ৫ বছর পরে কমিটির কোন সিদ্ধান্ত ছাড়া তার নামে সরকারি টাকা উত্তোলন করেন । ডিভি লটারিতে আমেরিকা গেলেও অবৈধভাবে ৪ বছর শিক্ষা ছুটি দেয়া হয়েছে ওই শিক্ষককে। সরকারি বিধি মোতাবেক ২ ছাড়াই গ্রাচুইটি দেন। আনিসুর রহমান আবার ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে দেশে আসলে তার কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে পুনরায় কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়াই অবৈধভাবে লক্ষাধিক টাকা গ্রাচুইটি দেন অধ্যক্ষ।

অভিযোগে আরও জানা যায়, জেএসসি ও এসএসসি ফরম পূরণে শিক্ষার্থী প্রতি ৪৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা অতিরিক্ত উত্তোলন করে প্রতি বছর ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন অধ্যক্ষ। যা বিগত বছর কয়েকের বোর্ড পরীক্ষার ফিস গ্রহণের রশিদের বিপরীত পৃষ্ঠায় লিখিত রয়েছে। ১০/১২ বছর যাবৎ প্রতিষ্ঠানে কোন বাজেট তৈরি না করে ইচ্ছামত অর্থ খরচ করছে। প্রতি বছর প্রতিষ্ঠানে ৫ম, ৮ম ও ১০ম শ্রেণির কোচিংয়ের টাকা থেকে সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ১০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের ফান্ডে জমা দেয়ার কথা থাকলেও কোচিংয়ের টাকা থেকে জোরপূর্বক ১৫ থেকে ২০ শতাংশ টাকা প্রতি বছর উত্তোলন করেন। প্রতি বছর কোচিং বাবদ প্রায় ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা যা ফান্ডে জমা না করে পুরোটাই আত্মসাৎ করেন, যা কয়েক বছরের হিসাব উভয় শাখার সহকারী প্রধানদের এবং কলেজ কো-অর্ডিনেটরের কাছে রয়েছে।

২০১০ খ্রিস্টাব্দের পর প্রতিষ্ঠানে গভর্নিং বডির কোন নির্বাচন হয়নি। এরপর তিনবার ২০১০ খ্রিস্টাব্দের পর প্রতিষ্ঠানে গভর্নিং বডি গঠনের ক্ষেত্রে একই সদস্য দিয়ে নির্বাচন না করে কমিটি গঠন করেছে। অধ্যক্ষের দুর্নীতির কারণে যেখানে ২০১৩-২০১৪ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ছিল ৪২০০ জন থেকে ৪৪০০ জন। আর ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে অভিভাবকরা মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে ২২০০ জন থেকে ২৩০০ জনে নেমে এসেছে।

অভিযোগে আরও জানা যায়,কলেজ শাখার শিক্ষক কর্মচারীদের কয়েক বছরের পিএফ টাকা বিভিন্ন সময় অনিয়মের মাধ্যমে আত্মসাৎ করে যাচ্ছেন অধ্যক্ষ। জেনারেল ফান্ডের বিষয়টিও আমাদের জানানো হয় না। এমনকি গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত থাকা সত্ত্বেও কলেজ শাখায় গ্রাচুইটি ফান্ড খোলা হয়নি। স্কুল শাখার দীর্ঘদিনের জমানো গ্রাচুইটি ফান্ডের টাকা সমুদয় উত্তোলন করে নিয়েছেন অধ্যক্ষ। কলেজ শাখার ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের সেশন চার্জ ও ভর্তি ফি বাবদ কয়েক লক্ষ টাকা জমা না দিয়ে ইচ্ছামত ব্যবহার করেছেন তিনি।

অধ্যক্ষ সমরেন্দ্র নাথ রায় স্কুল শাখার শিক্ষক কর্মচারীদের বিগত কয়েক বছর পিএফ-এর টাকা সময়মত জমা না দিয়ে নিজে শেয়ারের ব্যবসা করেছেন। ৭/৮ মাস পর পর উত্তোলনকৃত টাকা জমা দিয়েছেন তিনি। এছাড়াও বহু অনিয়ম রয়েছে, যা ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং প্রতিষ্ঠানের আয় ও ব্যয় মিলালে সকল তথ্য পাওয়া যাবে।

অভিযোগের সত্যতা জানতে দৈনিকশিক্ষা ডটকম থেকে কে এল জুবিলী স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ সমরেন্দ্র নাথ রায়কে মোবাইলে ফোনে কল দেয়া হলে তিনি এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানান। পরে আরও কয়েকবার ফোন দেয়া হলে তিনি ফোন কল রিসিভ করেননি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির বেশি হলে স্থানীয়ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে পারে - dainik shiksha তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির বেশি হলে স্থানীয়ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে পারে বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাখাত - dainik shiksha বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাখাত আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032598972320557