দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ খ্যাত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ১৮তম ভিসি পদ কে পেতে যাচ্ছেন তা নিয়ে ক্যাম্পাসসহ আগ্রহী মহলে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনার পাশাপাশি নানা কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে।
দীর্ঘ চার বছর ভিসির দায়িত্ব পালন করার পর গত ১৪ জুন ড. প্রফেসর ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর মেয়াদ শেষ হয়েছে। এর দুদিন আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বর্তমান প্রো-ভিসি ড. প্রফেসর শিরীন আখতারকে নতুন ভিসি নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত রুটিন দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, রুটিন দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা পেয়ে প্রো-ভিসি ড. শিরীন আখতার গত ১৩ জুন ড. প্রফেসর ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর মেয়াদ শেষ না হওয়ার আগেই নিজ স্বাক্ষরে ভিসি পদে যোগদান করেছেন বলে জানান দিয়ে মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করেছেন। শুধু তাই নয়, ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী ভিসি হিসাবে যে গাড়ি ও বাংলো ব্যবহার করতেন তাও দখলে নিয়েছেন। বাংলোর কর্মচারীদের নিজ বাসায় দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত করেছেন। একটি গ্রুপ নিয়ে ড. শিরীন আখতার ভিসির রুটিন দায়িত্ব পালনের স্থলে পূর্ণাঙ্গ ভিসির আদলেই কার্যক্রম চালানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত হওয়ায় ক্যাম্পাস জুড়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে চলেছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮তম ভিসির পদ পেতে যে চারজন বর্তমানে রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ে লবিংয়ে তৎপর রয়েছেন তাদের মধ্যে প্রথমেই রয়েছেন প্রো-ভিসি ড. শিরীন আখতার চৌধুরী। তিনি বাংলা বিভাগের প্রফেসর। এরপরই রয়েছেন আর্টস ফ্যাকাল্টির ডিন সেকান্দার চৌধুরী, ব্যাংকিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স বিভাগের প্রফেসর সুলতান আহমেদ ও অ্যাকাউন্টিংয়ের প্রফেসর বর্তমানে সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের সদস্য হেলাল নিজামী। পাশাপাশি সদ্য ক্ষমতা থেকে বিদায়ী ড. প্রফেসর ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীও পুনরায় ভিসি পদে নিয়োগ লাভে তৎপর বলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠালগ্নে অর্থাৎ প্রথম ভিসির দায়িত্ব পালন করেন ড. এ আর মল্লিক। তারপরে দীর্ঘ সময়ে ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীসহ ১৭ জন ভিসি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন ১৮তম ভিসি পদে নিয়োগ দেয়ার পালা। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে আগ্রহীরা বিভিন্নভাবে লবিং তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এদের মধ্যে প্রো-ভিসি ড. শিরীন আখতার চট্টগ্রামের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সুপারিশ সম্বলিত পত্রও মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন বলে তথ্য মিলেছে। চ্যান্সেলর হিসেবে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ভিসি পদে নিয়োগের চূড়ান্ত আদেশে সম্মতি দেয়ার পর তা কার্যকর হবে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রকাশের আগে বিষয়টি পুরোপুরিভাবে প্রধানমন্ত্রীর ইঙ্গিতের ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল।
এ অবস্থায় চবির নতুন ভিসি পদে নিয়োগ পেতে যারা মরিয়া হয়েছেন তারা ইতোমধ্যেই গ্রুপিং, লবিং এবং রাজনৈতিক দলীয় নেতাদের সুপারিশ নিয়ে দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহের মধ্যে বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদানের আগে যেহেতু ভিসি পদে দায়িত্ব পালনকারী ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর মেয়াদ ১৪ জুন শেষ হওয়ার আগে রুটিন দায়িত্ব পালনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব হাবিবুর রহমানের স্বাক্ষরে বর্তমান প্রো-ভিসি শিরীন আখতারকে ভিসি পদে রুটিন দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রুটিন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্রো-ভিসি কোনো নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন না। অভ্যন্তরীণ বদলি, নিয়োগ বা সিন্ডিকেটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের তার কোনো এখতিয়ার থাকবে না। শুধুমাত্র জরুরি কোনো অবস্থার উদ্ভব হলে তিনি সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার রাখবেন। দৈনন্দিন কার্যক্রমের বাইরে রুটিন দায়িত্ব পালনকারী কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা হবে আইন পরিপন্থি।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর ভিসি পদে দায়িত্ব থাকার কথা। কিন্তু ১৩ জুন প্রো-ভিসি ড. শিরীন আখতার ভিসি পদে রুটিন দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা পেয়ে তার গ্রুপের সমর্থন নিয়ে নিজেই চবির ভিসি পদে যোগদান পত্রে স্বাক্ষর করে তা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেন। এছাড়া ১৪ জুন সকাল থেকে ভিসির ব্যবহৃত গাড়িটি পরিবহন বিভাগের মাধ্যমে নিজ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। এরপর থেকে ভিসির ফ্ল্যাগ ব্যবহার করে নির্দিষ্ট গাড়িতে করে আসা যাওয়ায় লিপ্ত হয়েছেন। চবির ইতিহাসে এ বিষয়টি একটি ব্যতিক্রম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, তিনি ভিসির বাংলোকেও নিজ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন এবং বাংলোর কর্মচারীদের নিজ ভবনে কর্মে নিয়োজিত করেছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব সমীপে গত ১৩ জুন প্রো-ভিসি ড. শিরীন আখতার যে চিঠি পাঠিয়েছেন তাতে তিনি লিখেছেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১৩.৬.২০১৯ তারিখের ১৮/৯ চ.বি.-১/২০০৬/১৭৫ প্রজ্ঞাপনের পরিপ্রেক্ষিতে আপনার সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জানানো যাচ্ছে যে, আমি অদ্য ১৩.৬.২০১৯ অপরাহ্নে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছি।’ পত্রের শেষাংশে তিনি লিখেছেন, ‘আপনারই একান্ত প্রফেসর ড. শিরীন আখতার, উপাচার্য।’ প্রশ্ন উঠেছে, মন্ত্রণালয় তাকে ভিসি পদে বা ভারপ্রাপ্ত ভিসির দায়িত্ব পালনের কোনোটিই দেয়নি। তাকে শুধু ভিসির রুটিন দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। অথচ, পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব প্রাপ্তি ছাড়াই তিনি পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা পালনে তৎপর হয়ে সংশ্লিষ্ট সকল মহলে হাস্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে বলে জোরালো আলোচনা চলছে।