কোচিংয়ের পক্ষে সাফাই গাইলেন নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল চাওয়া অভিভাবকরা

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : নতুন শিক্ষাক্রম বাতিলের দাবি জানিয়েছেন কিছু অভিভাবক। তারা এ শিক্ষাক্রম বাতিল দাবি করে পুরনো কারিকুলাম বহাল রাখার দাবি জানিয়েছেন। তবে নতুন শিক্ষাক্রম বাতিলের দাবি জানিয়ে করা সংবাদ সম্মেলনে অভিভাবক পরিচয় দেয়া বক্তারা কোচিং বাণিজ্যের পক্ষে কথা বলেন। এ সংবাদ সম্মেলনে কোচিংয়ের পক্ষে সাফাই কেনো গাওয়া হচ্ছে-এমন প্রশ্ন করায় সাংবাদিকদের দিকে তেড়েও আসেন কয়েকজন অভিভাবক। 

এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজনের পেছনে কোচিং ও নোট-গাইড ব্যবসায়ীরা রয়েছেন কি না, জানতে চাইলে বিষয়টি অস্বীকার করেন সংবাদ সম্মেলনের সমন্বয়ক জাহাঙ্গীর কবির। নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল দাবি জানানো কতিপয় অভিভাবকের ফেসবুক গ্রুপ ‘সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলন’-এর অন্যতম এডমিনও এই জাহাঙ্গীর বলে জানা যায়।   

শুক্রবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক ঘণ্টা পরে শুরু হওয়া সংবাদ সম্মেলনে নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল, নম্বরভিত্তিক লিখিত পরীক্ষা চালু, নবম শ্রেণিতে বিভাগ বিভাজন রাখাসহ আট দফা দাবি জানানো হয়। ‘সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলন’ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে।

আরো পড়ুন : কোচিং বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে নতুন শিক্ষাক্রমের বিরোধিতা: শিক্ষামন্ত্রী

সংবাদ সম্মেলনে সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রাখাল রাহা। তিনি নিজেকে লেখক ও অভিভাবক পরিচয় দিয়ে লিখিত বক্তব্যে নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল, নম্বরভিত্তিক দুটি সাময়িক লিখিত পরীক্ষা চালু, বিষয় নির্বাচনের সুযোগ অথবা বিজ্ঞান বিভাগ রাখা, গ্রেডভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি, ক্লাসের ব্যয় সরকারকে বহন, তাত্ত্বিক বিষয়ে অধ্যয়নমুখী করা, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা বহাল রাখার দাবি জানান। একই সঙ্গে সব শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের আগে অবশ্যই তা মন্ত্রিপরিষদ ও সংসদে উত্থাপনের দাবি জানান। 

আরো পড়ুন : নতুন কারিকুলামের সমালোচনায় পঞ্চমের শিক্ষার্থীর অভিভাবক!

সংবাদ সম্মেলনে অভিভাবক পরিচয় দেয়া একাধিক ব্যক্তি কোচিং ও নোট-গাইড বইয়ের পক্ষে বক্তব্য দেন। মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীর অভিভাবক পরিচয় দেয়া মুসফিকা ইসলাম বলেন, কোচিং ব্যবসায়ী, গাইড ব্যবসা থাকবেই সারা জীবন। কোচিংয়ে না পড়লে বাচ্চারা শিখবে কীভাবে অবশ্যই আমাকে কোচিংয়ে যেতে হবে, গাইডও পড়তে হবে। কোচিংয়ে গেলে তো বাচ্চারা পড়তো, সে জন্য আমরা টাকা দিতাম। 

তিনি আরো বলেন, এখন লটারি পদ্ধতিতে ভর্তি। কেনো লটারি পদ্ধতিতে সুযোগ পাবে। আমার বাচ্চা প্রতিযোগিতা করে সুযোগ পাবে। লটারি হযবরল হয়ে যাচ্ছে। এতে স্কুলের মান কমে যাচ্ছে।

আরো পড়ুন : ‘নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষকরা মুখ দেখে দেখে মূল্যায়ন করেন’

সাভারের মর্নিং গ্লোরি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর অভিভাবক ডা. আফরোজ নাসরিন বলেন, হেসেখেলে তো পড়াশোনা হয় না। বলা হয়, এই কারিকুলামের হলে কোচিং ব্যবসা বন্ধ হবে। আমরা কি বলেছি কোচিং ব্যবসা বন্ধ করতে কোচিং ব্যবসা বিশ্বের কোনো দেশে নাই।  

সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তর পর্বে কোচিং ব্যবসার পক্ষে জোরালো বক্তব্য দেন রাখাল রাহা। তিনি বলেন, ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা কি স্কুলে যায় তারা তো সারা বছর কোচিং করে ও লেভেল এবং এ লেভেল দেয়। তারা শুধু কোচিং করে, আর কিছু করে না। তিনি আরো বলেন, ব্রিটিশ কারিকুলাম চালু করতে হবে। কারণ সেটি সবদিক থেকে স্বীকৃত। এর মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থী ও ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের বৈষম্য কমিয়ে আনা যাবে।

ওই সংবাদ সম্মেলনে সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া শিক্ষা বিষয়ক কয়েকজন সাংবাদিক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের শেষের দিকে এক সাংবাদিক কোচিং ও নোট-গাইডের পক্ষে সাফাই গওয়া হচ্ছে কেনো জানতে চাইলে তার দিকে কয়েকজন অভিভাবক তেড়ে আসেন। এ নিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি শান্ত হলে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করতে চাইলে একাধিক ব্যক্তি উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেন। এতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করা অভিভাবকদের কয়েকজন উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল, মতিঝিল মডেল স্কুল  এন্ড কলেজ, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল  এন্ড কলেজ এবং ভিকারুরনিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের বলে জানা গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, নতুন শিক্ষাক্রম বাতিলের দাবিতে আগামী ২৪ নভেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অভিভাবক সমাবেশ করা হবে। এর আগে প্রতিদিন নিজ নিজ সন্তানের স্কুলের সামনে সমাবেশ এবং ১৪ নভেম্বর ডিসিদের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হবে। 

এর আগে গত ৩০ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ১৫ ভুল তথ্যের ব্যাখ্যা দেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। ওই সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেছিলেন, নতুন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক নিয়ে মিথ্যাচার হচ্ছে। আমরা দেখছি, যারা ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে যেসব আইডি থেকে এই প্রচারণা শুরু করেছেন এবং বিষয়টিকে এখন একটি আন্দোলনে রূপ দেয়ার চেষ্টা করেছেন, তারা মূলত কোচিং ব্যবসায়ী। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নোট ও গাইড বই ব্যবসায়ীরা। কারণ, তারা মনে করছেন, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়িত হলে ব্যবসায় মার খাবেন। সে কারণে তারা নামছেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান - dainik shiksha ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ - dainik shiksha সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0062010288238525