প্রশ্ন : করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ইতোমধ্যে দীর্ঘ এ ছুটির সাড়ে ১৩ মাস পূর্ণ হয়েছে। এ সময়ে শিক্ষার্থীরা সরাসরি পাঠদান ও মূল্যায়ন থেকে বঞ্চিত। দীর্ঘ এ ছুটির ফলে শিক্ষার ওপর কী ধরনের সদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করেন?
ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : কোভিড-১৯ মহামারি সারা বিশ্বে যে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে, বাংলাদেশেও এর কোনো ব্যতিক্রম ঘটেনি। এ বিপর্যয় অনেক ক্ষেত্রেই দৃশ্যমান এবং তাৎক্ষণিকভাবে অনুভূত। যেমন: অর্থনীতি, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মক্ষেত্র অথবা যোগাযোগ ব্যবস্থা। সেই তুলনায় শিক্ষাক্ষেত্রে এ বিপর্যয়ের সত্তা ও প্রকৃতি আমরা এখনো পুরোটা পরিমাপ করতে পারিনি, বুঝে ওঠাও সম্পূর্ণভাবে সম্ভব হয়নি। কিন্তু বিপর্যয়ের প্রভাবটা যে গভীর এবং দূরবিস্তারি, তা উপলব্ধি করাটা কঠিন নয়। এক বছরের বেশি সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। বিভিন্ন অ্যাপের সাহায্যে দেওয়া অনলাইন শিক্ষা ও টেলিভিশন-বেতারের মাধ্যমে দেওয়া দূরশিক্ষণ কার্যক্রমও সীমিত এবং তাতে সর্বজনীন ও কার্যকর অংশগ্রহণ মোটেও সম্ভব হয়নি। কোভিডের ওঠানামার সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে আমরা কোনো ফলদায়ক সিদ্ধান্তও নিতে পারছি না। তারপর আছে পরীক্ষা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা এবং অনিশ্চয়তা। এখন কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। এটি কতটা ভয়াবহ হতে পারে, ভারতের দিকে তাকালেই তা বোঝা যায়। জুলাইয়ের আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে, সে রকম সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
শিক্ষার ওপর এ বিপর্যয়ের সদূরপ্রসারী প্রভাব যা পড়বে, তা ইতোমধ্যেই আমরা দেখতে শুরু করেছি। অনেক প্রভাবের মধ্যে আমি কয়েকটিকে গুরুতর বিবেচনা করি এবং কোভিড মহামারি শেষ হয়ে এলে সব শক্তি দিয়ে এগুলো নিরসন করতে হবে। প্রথমেই আসে শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের হতাশা, মনস্তাত্ত্বিক চাপ এবং সেই চাপে তৈরি হওয়া অবসাদ ও উদ্যমহীনতা; দ্বিতীয়ত, অনলাইন ও দূরশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে না পারা বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম থেমে থাকা, যা তাদের সামর্থ্য ও দক্ষতায় বড় আঘাত হানবে; তৃতীয়ত, অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের আংশিক প্রয়োগ থেকে তৈরি বৈষম্য; চতুর্থত, মহামারির আঘাতে পরিবারগুলো উপার্জন হারানোর কারণে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়া, শিশুশ্রম এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহ বেড়ে যাওয়া; এবং পঞ্চমত, মাদক, কিশোর সহিংসতা (অপরাধ) ও পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা বেড়ে যাওয়া।
প্রশ্ন : অনলাইনের নানা প্ল্যাটফরম এবং দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে ছাত্রছাত্রীরা কতটা উপকৃত হচ্ছে? এভাবে সনাতনী পদ্ধতির পাঠদানের ক্ষতিপূরণ সম্ভব কি না। ১৩ মাসে পাঠদানের ক্ষয়ক্ষতি পূরণে জাতীয়ভাবে কী পরিকল্পনা নেওয়া উচিত?
ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : অনলাইন ও টেলিভিশন-বেতারেও যে বিকল্প শিক্ষা কার্যক্রম চলছে, তাতে ছাত্রছাত্রীরা যে খুব উপকৃত হচ্ছে তা নয়-এগুলোর কার্যকারিতা নির্ভর করে প্রযুক্তির সহজলভ্যতা, সবার অংশগ্রহণ এবং এ শিক্ষার উপযোগী সাজানো পাঠক্রমের ওপর। শুধু কিছু ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকি সব ক্ষেত্রে তা অনেকটাই অনুপস্থিত। এর মাধ্যমে সনাতনী পদ্ধতির পাঠদানের ক্ষতি সামান্য পরিমাণেই পুষিয়ে ওঠা সম্ভব। পাঠদানের ক্ষতি পূরণে জাতীয়ভাবে যা করতে হবে, তার রূপরেখা এখনই ঠিক করে ফেলা উচিত; যাতে কোভিড পরিস্থিতি অনুকূলে চলে এলে তা বাস্তবায়নে নেমে পড়া যায়।
প্রথমেই এ এক বছরের বেশি সময়ে যেসব বিষয় উপেক্ষিত থেকেছে, বা যেগুলো পড়ানো সম্ভব হয়নি, সেগুলোর ওপর জোর দিয়ে পাঠক্রম নির্ধারণ করতে হবে। যেমন: বিজ্ঞান এবং উচ্চ শ্রেণি ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবহারিক ক্লাসগুলো, যেগুলো নেওয়া যায়নি, সেগুলো যথাযথভাবে নিতে হবে। ছুটিছাঁটা কমিয়ে ক্লাসের সময় বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে সরাসরি এবং মানবিকের কয়েকটি বিষয়ে অনলাইন ও দূরশিক্ষণ কার্যক্রমের সমন্বয়ে একটি মিশ্র পদ্ধতিতে পড়ানো যেতে পারে। সরকারকে আগামী অর্থবছরে শিক্ষার বাজেট যথেষ্ট বাড়াতে হবে। গ্রামের ও প্রান্তিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে ইন্টারনেট সংযোগসহ ল্যাপটপ এবং অপেক্ষাকৃত সচ্ছল শিক্ষার্থীদেরও সহজ কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য সাশ্রয়ী মূল্যে ল্যাপটপ দিতে হবে। অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়ার জন্য শিক্ষকদের যথাযথ প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। গ্রামের স্কুলগুলোতে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা এবং অসচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীদের মাসিক বৃত্তির ব্যবস্থা করলে ঝরে পড়া ও অন্যান্য সমস্যার অনেকটাই নিরসন হবে। কোচিং বাণিজ্য যাতে ফিরে না আসে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে স্কুলগুলোতে বাইরের যোগ্য শিক্ষক দিয়ে ছুটির দিনে পড়ানো যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রয়োজনে সন্ধ্যায়ও ক্লাস নেওয়া যেতে পারে।
প্রশ্ন : এই সাড়ে ১৩ মাসের ছুটিতে শিক্ষা ছাড়াও অন্যদিকে কী কী ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করেন? সেগুলো পূরণের কোনো সুযোগ আছে কি না।
ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : সারা বিশ্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় সংস্কৃতিচর্চা, খেলাধুলা, বিতর্ক, সৃজনশীল কর্মকাণ্ড এবং বিজ্ঞানভিত্তিক প্রকল্প গ্রহণে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করা হয়। আমাদের দেশে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া এসব উপেক্ষিত। মাদ্রাসাগুলোতে এসব তো প্রায় নিষিদ্ধ পর্যায়ে রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নৈতিকতা, সামাজিক দায়িত্ববোধ, নেতৃত্বগুণ ও নান্দনিক বৃত্তিগুলো লালন ও জাগাতে ভূমিকা রাখে। আমাদের মুখস্থ বিদ্যাভিত্তিক, টিউশননির্ভর, পরীক্ষাকেন্দ্রিক শিক্ষা পদ্ধতি ইত্যাদি এ সবের কিছুই প্রায় শেখায় না। এজন্য মাদকসেবন, কিশোর অপরাধ এবং বখাটেপনা আমাদের গুরুতর সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৩ মাসে শিক্ষায় বিশাল ক্ষতি হয়েছে এবং আমি যেসব কর্মকাণ্ডের কথা ওপরে উল্লেখ করলাম, সেগুলো যেসব স্কুলে সীমিত হলেও চলে, সেগুলো থেকে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হয়েছে। বড় বঞ্চনাটি হচ্ছে, সবার সঙ্গে মিলে পাঠ গ্রহণে এবং সময় কাটানোতে যে আনন্দ তা থেকে বঞ্চিত হওয়া। আমি মনে করি, বিশ্বের অন্য দেশের মতো আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয়-বাংলা-ইংরেজি মাধ্যমে, স্কুল ও মাদ্রাসাগুলোয়ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, খেলাধুলা এবং নানা সহশিক্ষা কার্যক্রম চালু করা উচিত।
প্রশ্ন : করোনাকালে এখন পর্যন্ত বেশকিছু পাবলিক ও অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা বাতিল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে অসংখ্য পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। পরীক্ষা বা মূল্যায়ন বাতিল ও স্থগিতের ফলে শিক্ষাব্যবস্থার ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে?
ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : পরীক্ষা বাতিলের বিষয়ে আমাদের কারও কিছু করার ছিল না। এটি শুধু আমাদের দেশে নয়, আশপাশের সব দেশেরই একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। ফলে স্থগিত পরীক্ষাগুলো নেওয়ার ও দেওয়ার একটি বাড়তি চাপ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরও ওপর পড়বে। বাতিল হওয়া পরীক্ষাগুলো নেওয়া সম্ভব হবে না। তবে সরাসরি কার্যক্রম শুরু হলে নিয়মমতো যেসব পরীক্ষা নিতে হয়, সেগুলোর অতিরিক্ত স্থগিত পরীক্ষাগুলো কীভাবে নেওয়া যায়, তার উপায় বের করতে হবে। পরীক্ষার পূর্ণমান বা নম্বর ও বিষয় কমিয়ে সেটি হয়তো সম্ভব। এর প্রভাব পড়বে প্রধানত দুভাবে। প্রথমত, শিক্ষার্থীদের মেধার সঠিক মূল্যায়ন না হওয়ায় তাদের ভবিষ্যৎ জীবনে এজন্য কিছু সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে। যেমন: প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলোতে এদের সমস্যা দেখা দেবে; দ্বিতীয়ত, শিক্ষার্থীরা নিজেরা একটি অপূর্ণতাবোধে আক্রান্ত হতে পারে।
প্রশ্ন : আমাদের দেশের ইন্টারনেট ফ্রিকোয়েন্সি, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা, তথ্যপ্রযুক্তি সামগ্রী (স্মার্ট ফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার ইত্যাদি ডিভাইস), ক্রয় সক্ষমতা ইত্যাদি অবকাঠামোগত বাস্তবতা বিবেচনায় ভবিষ্যৎ শিক্ষাব্যবস্থার জন্য সরকারের এখন কী পরিকল্পনা নেওয়া উচিত?
ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : আমি আগেই বলেছি, কোভিড বিপর্যয়ের জন্য পশ্চিমা বিশ্বও প্রস্তুত ছিল না। আমরা তো নয়ই। এখনো আমরা জানি না এটি কতদিন স্থায়ী হবে। সেজন্য আমি আগেই যেমন বলেছি, আমাদের একটি মিশ্র (শিক্ষা) পদ্ধতিতে এগোতে হবে। অর্থাৎ সরাসরি শিক্ষাদানের সঙ্গে অনলাইনভিত্তিক শিক্ষাক্রমের মিশ্রণের মাধ্যমে। এজন্য আপনি যা যা বলেছেন-ইন্টারনেটের গতি ও মান বাড়ানো, তা সহজলভ্য করা, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা, তথ্যপ্রযুক্তি সামগ্রী ও ডিভাইস সহজলভ্য করা-এসব ক্ষেত্রে সরকারকে বড় বিনিয়োগ করে শিক্ষাব্যবস্থাকে গতিশীল করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারকে তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। সেগুলো হচ্ছে, সরাসরি শিক্ষা ও অনলাইন শিক্ষায় সবার অন্তর্ভুক্তি, অনলাইন শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রযুক্তি ও সামগ্রী সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণ, গতিশীল পাঠক্রম এবং পরীক্ষাগ্রহণ ও মূল্যায়ন পদ্ধতি যুগোপযোগী করা।
প্রশ্ন : ক্ষতিপূরণে সরাসরি পাঠে ছাত্রছাত্রীদের নিয়োজিত করার লক্ষ্যে সংক্রমণ বিবেচনায় এলাকাভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার নীতি কতটা বাস্তবসম্মত হতে পারে?
ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : খুব একটি বাস্তবসম্মত হবে না। বাংলাদেশের কোনো অঞ্চলই যেহেতু এখন আর বিচ্ছিন্ন নয়। কোনো এলাকার সংক্রমণ কমে গেলেও তা দীর্ঘদিন থাকবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তা ছাড়া এতে এলাকায় এলাকায় বৈষম্য সৃষ্টি হতে পারে।
প্রশ্ন : করোনাকালে আরেকটি ক্ষতি হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রমের ক্ষেত্রে। এটি চলতি বছরই প্রবর্তনের কথা ছিল। সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে প্রস্তুতি শেষ হয়নি বলে প্রবর্তন করা হয়নি। প্রথমে এটি ২০২২ সালে ও সর্বশেষ কয়েকদিন আগে ২০২৩ সালে প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে ২০২৩ সালে পুরোপুরি নয়, কিছু প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষামূলক প্রবর্তন করার কথা বলা হচ্ছে। পুরোপুরি প্রবর্তন বাতিল করে পরীক্ষামূলক পর্যায়ে নেমে আসার ক্ষেত্রে শিক্ষাক্রম প্রবর্তনকারী সংস্থার ভেতরের কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্ব ভূমিকা রেখেছে বলে জানা যাচ্ছে। তাদের কেউ কেউ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদেরও বিভ্রান্ত করেছেন বলে অভিযোগ আছে। ফলে নতুন শিক্ষাক্রম রূপায়ণে এখন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর আলাদা চলো নীতি গ্রহণ করেছে। কোভিড পরিস্থিতির নামে জাতীয় ইস্যুতে এ ধরনের নীতি কতটা গ্রহণযোগ্য?
ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : আমি অবাক হচ্ছি, যারা প্রাথমিক শিক্ষার দায়িত্বে আছেন, তারা নিজেদের কেন আলাদা ভাবছেন এবং সরকারই বা কীভাবে তা মেনে নিচ্ছে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত সমন্বিত শিক্ষাক্রম যদি এভাবে একটি পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিদের জন্য হোঁচট খায়, তাহলে এর যে বিরূপ প্রভাব শিক্ষাক্ষেত্রে পড়বে, তা কি ভেবে দেখা হচ্ছে? আমি সরকারকে অনুরোধ করব, এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হোক। এমনিতে আমরা একটা ঘুণে ধরা শিক্ষাক্রম নিয়ে চলছি। আমাদের শিক্ষার্থীদের ভাষাশিক্ষা নিচুমানের, গণিত ও বিজ্ঞানে তারা দুর্বল। এক্ষুনি যদি আমরা এ শিক্ষা কার্যক্রমকে ঢেলে না সাজাই, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও এতে অংশগ্রহণ দূরের কথা, তার ছিটেফোঁটা ফল ভোগও আমরা করতে পারব না। তাছাড়া জাতীয়ভাবে আমরা ২০৪১ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। সেখানে পৌঁছতে হলেও বাস্তবভিত্তিক ও আধুনিক শিক্ষাক্রম অপরিহার্য।
প্রশ্ন : শিক্ষায় কেবল শিক্ষার্থী নয়, অনেক শিক্ষকও ট্রমার মধ্যে পড়েছেন। বিশেষ করে যেসব প্রতিষ্ঠান বেতনভাতা বন্ধ রেখেছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা খুব দুরবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এ বাস্তবতায় শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে সরকারের আলাদা কোনো নীতিগ্রহণ প্রয়োজন কি না।
ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : শিক্ষকদের ব্যাপারে সরকারকে সহানুভূতিশীল ও উদার হতে হবে। তারা বঞ্চিতবোধ করলে শিক্ষাব্যবস্থা বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে। সরকারের উচিত যেসব শিক্ষক বিপন্ন হয়েছেন বা চাকরি হারিয়েছেন, তাদের তালিকা করে সহায়তা দেওয়া ও তাদের পুনর্বাসিত করা। সরকার যদি পোশাক ব্যবসায়ীদের বিশাল অঙ্কের টাকা প্রণোদনা হিসাবে সহায়তা দিতে পারে, তাহলে শিক্ষকদের কেন পারবে না। শিক্ষকরা তো আমাদের ভবিষ্যৎ নির্মাণ করছেন। আসলে সমস্যা বহুমুখী, সমাধানও আসতে হবে সুচিন্তার আলোকে।
প্রশ্ন : আপনাকে ধন্যবাদ।
ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : ধন্যবাদ।
সূত্র : ৬ মে, দৈনিক যুগান্তর