কোটা বিরোধী আন্দোলন নতুন মোড় নিয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে চলা এই আন্দোলন সোমবার (৮ জুলাই) সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের এক দফা আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। আর এই এক দফা আদায়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের নিয়ে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে ৬৫ সদস্যবিশিষ্ট সমন্বয় কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ২৩ সমন্বয়ক ও ৪২ সহ-সমন্বয়কের এ কমিটি ঘোষণা করা হয়।
কমিটির তরফে বলা হয়, সরকারি চাকরির সব গ্রেডের অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর জাতির জন্য কোটা নূন্যতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা প্রথা বাতিল করতে হবে।
কোটা সংস্কারের একদফা দাবিতে পূর্ব ঘোষিত ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার শাহবাগ, বাংলামোটর, কারওয়ানবাজার, ফার্মগেট, সায়েন্স ল্যাব মোড় ও গুলিস্তান জিরো পয়েন্টসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ করেছন আন্দোলনকারীরা। এর ফলে পুরো ঢাকা শহর যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে। তৈরি হয় চরম জনভোগান্তি। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীরা মহাসড়ক অবরোধ করেন। কোথাও কোথাও ট্রেনও থামিয়ে দেন।
আমাদের বার্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জানিয়েছেন, বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর ব্যানারে মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে শাহবাগ মোড়ে আসে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে। মিছিলের সামনের অংশটি সড়ক অবরোধ করতে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ও বাংলামোটর মোড়ের দিকে চলে যায়। পেছনের অংশটি শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয়।
এদিকে জবি শিক্ষার্থীরা পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে গুলিস্থান জিরো পয়েন্টে এসে কাফনের কাপড় পরে সড়কে শুয়ে বিক্ষোভ দেখান।
একই দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। এতে সড়কের উভয় লেনে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গার মতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রেললাইন অবরোধ করেন। ফলে রাজশাহী রেল স্টেশনের সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছাড়া বাকি সব জেলার সঙ্গে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাও একই দাবিতে ৩ ঘণ্টা বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করেন। ফলে সেখানেও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এর আগে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের পরিপত্র পুনর্বহালের পাশাপাশি আরও তিনটি দাবি জানাচ্ছিলেন। তবে এবার চার দাবি থেকে সরে একদফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
এই একদফা দাবি হলো- সব গ্রেডের অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর জাতির জন্য কোটা নূন্যতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা প্রথা বাতিল করতে হবে।
তাদের আগের দাবিগুলো ছিলো, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে, সে ক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী শুধু অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে; সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা–সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না ও কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।