সরকারি চাকরির কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের এক দফা দাবিতে রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি দিতে বঙ্গভবন অভিমুখে গণপদযাত্রা শুরু করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।
রোববার বেলা ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন' ব্যানারে এই পদযাত্রা শুরু হয়। শাহবাগ, মৎসভবন, প্রেসক্লাব হয়ে তাদের বঙ্গভবনে যাওয়ার কথা রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাও এ পদযাত্রায় অংশ নিচ্ছেন।
কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা 'দফা এক দাবি এক, কোটা নট কাম ব্যাক', 'কোটা না মেধা, মেধা মেধা', ' সারাদেশে হামলা কেন, প্রশাসননজবাব চাই', 'হামলা করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না', ' মামলা দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না', 'কোটা প্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক' ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছেন।
এদিকে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মীকেও দোয়েল চত্বর ও কার্জন হল এলাকায় অবস্থান নিতে দেখা গেছে। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতাকর্মীরা রয়েছেন।
এর আগে শনিবার বিকেলে 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন' এর সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, রোববার দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও গণপদযাত্রা করে নিজ নিজ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেবেন।
সারাদেশে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ছাত্র ধর্মঘট অব্যাহত রাখারও ঘোষণা দেওয়া হয় সেখানে।
হাই কোর্টে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের রায়ের পর নতুন করে এই আন্দোলন শুরু হয়। গত ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ ক্রমে ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে।
শুরুতে মানববন্ধন, সমাবেশের মত কর্মসূচি থাকেলেও গত সপ্তাহে সারা দেশে তাদের অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়, যার নাম তারা দিয়েছেন ‘বাংলা ব্লকেড’। গত বুধবার দিনভর অবরোধে নাকাল হতে হয় সাধারণ মানুষকে।
কোটার বিরোধিতায় চার দফা দাবিতে শুরু হওয়া এ আন্দোলন এখন এক দফায় এসে ঠেকেছে।
আন্দোলনকারীদের এক দফা দাবি হল- সকল গ্রেডে সকল প্রকার ‘অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক’ কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে৷
এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কোটা নিয়ে হাই কোর্টের রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা জারির আদেশ দিলেও আন্দোলনকারীরা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।
হাই কোর্টের যে রায়ের পর এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেই রায়ের বাস্তবায়নের অংশও ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের আগে থাকা সব কোটা ফিরিয়ে এনে আদালত বলেছে, সরকার প্রয়োজন মনে করলে কোটার হার বা অনুপাত পরিবর্তন করতে পারে।
হাই কোর্টের এই রায়ের ফলে কোটা সংস্কারের পথ খুললেও আন্দোলনকারীরা তাদের অবস্থানে অটল। তারা বলছেন, কেবল অনগ্রসরদের জন্য ৫ শতাংশ পর্যন্ত কোটা মানতে তারা রাজি আছেন, অন্য কোনো কোটা নয়। আর এ বিষয়টি আইন করে বাস্তাবয়নের বিষয়ে সরকারের প্রতিশ্রুতি চাইছেন তারা।