গেস্ট হাউজ একাই ব্যবহার করেন কুবি ভিসি

দৈনিক শিক্ষাডটকম, কুবি |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, কুবি :   ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজধানীর কমলাপুরে একটি গেস্ট হাউজ ক্রয় করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। ব্যবস্থা ছিল জরুরি সভার আয়োজনেরও। তবে বর্তমানে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আব্দুল মঈন ব্যতীত কেউই যেতে পারেন না সেখানে। চাবিও রয়েছে তার নিজের নিয়ন্ত্রণে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গেস্ট হাউজটিতে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের শুরুতে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরীর আমলে প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে ইন্টেরিয়র, কনফারেন্স কক্ষসহ ইত্যাদি সংস্কারের কাজ করানো হয়। সর্বশেষ ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে প্রায় ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে আরএফকিউ (রিকোয়েস্ট ফর কোটেশন) পদ্ধতিতে গেস্ট হাউজে উপাচার্যের কক্ষে ওয়াশরুমের সৌন্দর্যবর্ধন, সাউন্ড প্রুফিং, টাইলস ইত্যাদি সংস্কারে কাজ করানো হয়।

তবে সম্প্রতি গেস্ট হাউজে নিয়োজিত একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট দপ্তরে বদলি করে সেখানে শূন্যতা তৈরী করে প্রশাসন। ফলে একাডেমিক এবং প্রশাসনিক বিভিন্ন কাজে শিক্ষক-কর্মকর্তারা রাজধানী কিংবা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করতে গিয়ে পড়ছেন বিপাকে। এতে প্রশ্ন উঠেছে প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে গেস্ট হাউজ রাখা এবং নিয়মিত আনুসাঙ্গিক ব্যয় মেটানো হলেও প্রকৃতপক্ষে এর সুবিধাভোগী কে?

জানা যায়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের পর গেস্ট হাউজটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ব্যতীত কোন অংশীজন রাতযাপন কিংবা অবস্থানের সুযোগ পাননি। শুধু উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আব্দুল মঈন কয়েকবার অবস্থান করেছেন। উপাচার্য যাতায়াত করার সময় তার বিশ্বস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অফিস সহায়ককে সঙ্গে নিয়ে গেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গেস্ট হাউজে অবস্থান করতে চেয়ে তারা নিজেদের সুযোগ-সুবিধা পায়নি। স্বাভাবিক নিয়মে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরে আবেদন করলে সেটির ব্যবস্থাপনা করতে এস্টেট শাখা কাজ করে। তবে সম্প্রতি এস্টেট শাখা এ বিষয়ে কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করে। জানা যায়, বর্তমানে গেস্ট হাউজের চাবিও উপাচার্যের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শামীমুল ইসলাম জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ব্যয়ে যে সম্পত্তি ক্রয় করা হয়েছে সেটি উপাচার্য কুক্ষিগত করে রেখেছেন, বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত। যদি লোকবলের প্রয়োজন হয়, সেটির ব্যবস্থাপনা করা জরুরি। ঢাকার বাইরের প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ধরনের গেস্ট হাউজ থাকে। যেখানে জরুরি প্রয়োজনে অবস্থান কিংবা সভার আযয়োজন করা যায়।

তিনি বলেন, পূর্বের উপাচার্যদের সময়েও এই সেবা সকলের জন্য উন্মুক্ত ছিল। কিছুদিন আগে আমাকে একাডেমিক কাজে রাজশাহী যাতায়াত করতে হয়েছিল। তখন গেস্ট হাউজ ব্যবহারের সুযোগ না পেয়ে লম্বা সময় কমলাপুর রেলস্টেশনে অপেক্ষা করতে হয়েছে। অথচ রেলস্টেশনের পাশেই বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউজ অবস্থিত। শুধুমাত্র অনুমতি না পেয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের এ ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। বিষয়টি সামগ্রিকভাবে আমাদের জন্য লজ্জাজনক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমি আনুষ্ঠানিকভাবে গেস্ট হাউজে থাকতে চেয়ে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু আমাকেও গেস্ট হাউজে অবস্থানের অনুমতি দেয়া হয়নি। আমি একা নই। বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য সিনিয়র শিক্ষকও এমন বিড়ম্বনায় পড়েছেন। উপাচার্যের মর্জি না হলে সেখানে কেউ অবস্থান করতে পারছেন না।

তবে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে দায় নিতে রাজি হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট শাখা। ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. মিজানুর রহমান জানান, আমরা নিজস্ব কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করি না। গেস্ট হাউজে থাকার জন্য আবেদন করতে হয় রেজিস্ট্রার বরাবর। এটির নিয়ন্ত্রন আমাদের হাতে থাকে না। রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে আমাদের যে নির্দেশনা দেয়া হয়, আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) আমিরুল হক চৌধুরী জানান, গেস্ট হাউজটি আপাতত বন্ধ রয়েছে। এটির সংস্কার এবং লোক নিয়োগের পরে পুনরায় সুযোগ-সুবিধা চালু করা হবে।

এদিকে, সম্প্রতি গেস্ট হাউজ বিক্রয় এবং নতুন ক্রয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন এবং শৃঙ্খলা রক্ষার্থে উপাচার্য কার্যকরী সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করবেন। গেস্ট হাউজের বিষয়ে বেশকিছু সমস্যা পরিলক্ষিত হয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোন নীতিমালা না থাকায় কিছু বিশৃঙ্খলাও তৈরী হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।

শিক্ষক-কর্মকর্তারা গেস্ট হাউজের সুবিধা না পেলেও উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আব্দুল মঈন নিজের সুবিধা ভোগ করছেন। এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ে তার দপ্তরে গেলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, গেস্ট হাউজ সম্পর্কিত কোনো সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আমি অবগত নই। অভিযোগের বিষয়ে আমি খোঁজ নিয়ে মন্তব্য করতে পারব।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
আইনের মারপ্যাঁচে অনিশ্চিত ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন - dainik shiksha আইনের মারপ্যাঁচে অনিশ্চিত ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন ‘ঢাবির ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হচ্ছে শিগগিরই’ - dainik shiksha ‘ঢাবির ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হচ্ছে শিগগিরই’ হাই-টেক পার্কের নাম হবে জেলার নামে: উপদেষ্টা নাহিদ - dainik shiksha হাই-টেক পার্কের নাম হবে জেলার নামে: উপদেষ্টা নাহিদ দীপু মনির নামে আরেক মামলা, আসামি ৬০০ - dainik shiksha দীপু মনির নামে আরেক মামলা, আসামি ৬০০ স্কুল-কলেজে বিশৃঙ্খলা : কোথাও জবরদস্তি কোথাও পালিয়ে থাকা - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বিশৃঙ্খলা : কোথাও জবরদস্তি কোথাও পালিয়ে থাকা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026271343231201