কোথাও বাংলা ভাষার প্রকৃত মর্যাদা নেই

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

আমাদের ভাষা আন্দোলনের ৬৮ বছর অতিবাহিত হয়েছে। আমার মনে হয়, এখন আমাদের সংবিধানের তৃতীয় অনুচ্ছেদে উল্লিখিত ‘এই প্রজন্মের ভাষা হবে বাংলা ভাষা’- এই অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করে ‘এই প্রজন্মের ভাষা হবে ইংরেজি’-এটা লেখা উচিত। কারণ, আমরা কেউই সংবিধান মানছি না। স্বয়ং উচ্চ আদালতেই সংবিধান লঙ্ঘন হচ্ছে। এই সংবিধান লঙ্ঘনের হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে আমার মনে হয় সেটাই করা উচিত। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধে  এ তথ্য জানা যায়।  

নিবন্ধে আরও জানা যায়,  ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে যারা জীবন দিয়েছিলেন সেই শহীদদের জীবনদান আমার মনে হয় বৃথা গেছে।   কারণ, রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য তারা জীবন দিয়েছিলেন। কিন্তু আজকে সত্যিকার অর্থে কোথাও বাংলা ভাষার প্রকৃত মর্যাদা নেই। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কোথাও বাংলা ভাষার মর্যাদা নেই। বরং সর্বত্রই বাংলা ভাষাকে অবমাননা করা হচ্ছে। অবজ্ঞা করা হচ্ছে। হয়তো শুনতে খারাপ শোনাবে। তবুও আমি বলতে চাই, অনেক ক্ষেত্রেই বাংলা ভাষাকে বলাৎকার করা হচ্ছে। আমরা বিদেশি ভাষার বিরোধী নই। যেখানে যতটুকু বিদেশি ভাষা ব্যবহার প্রয়োজন, সেখানে ইংরেজি, হিন্দি, চাইনিজ, জাপানি, ফরাসি যে কোনো ভাষা ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু অকারণে, অপ্রয়োজনে তথাকথিত ডিগনিটি এবং উচ্চ মার্গতা প্রমাণের জন্য যথেচ্ছ বিদেশি ভাষা, বিশেষত ইংরেজি ভাষা ব্যবহারের কোনো প্রয়োজন নেই। আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে আমরা কোন ধরনের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বসবাস করছি। আমরা একটি পুঁজিবাদী শ্রেণিবিভক্ত শোষণ-লুণ্ঠনমূলক সমাজ এবং রাষ্ট্রে বসবাস করছি। যার কারণে আমাদের চিন্তা চেতনায়, মগজে, মেধায় সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন আচ্ছন্ন করে রেখেছে।

আমরা একটি তথাকথিত বিশ্বায়নের যুগে বাস করছি। তথাকথিত এই জন্য যে, বিশ্বায়ন মানে প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীর কাছে অন্য ভাষা সংস্কৃতির মুক্ত বাতায়নের নিজস্ব ভাষা সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ করা। কিন্তু আজকের এই সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নের কারণে পৃথিবীর পরাশক্তিগুলো তাদের রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শিকারে পরিণত করছে দুর্বলতম দেশগুলোকে। অন্য ভাষা সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর ওপরে। বাংলাদেশ তার ব্যতিক্রম নয়।

১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের পথপরিক্রমায় আমরা একটি স্বাধীন সার্বভৌম, শোষণ, নিপীড়নমুক্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে তোলার আকাক্সক্ষা লালন করেছিলাম। কিন্তু আমরা কি আদৌ তা অর্জন করতে পেরেছি? আমরা যদি সত্যিকার অর্থে ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন এবং ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে পারতাম তাহলে হয়তো আজকে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির এই দুরবস্থা, দুর্দশা আমাদের দেখতে হতো না। আজকে বাংলা ভাষার যে অপব্যবহার, যে বিকৃতি তা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আমরা যদি সত্যিকার অর্থে বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতিকে সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়ন থেকে রক্ষা করতে চাই, ভাষা ও সংস্কৃতির ঐতিহ্য সংরক্ষণ করতে চাই, তাহলে আমার মনে হয়, আমাদের আরেকটি ভাষা আন্দোলন, আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের প্রয়োজন আছে।       

কবি ও অনুলেখক : শিমুল মাহমুদ


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির - dainik shiksha বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ - dainik shiksha ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029029846191406