কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ইংরেজি বিভাগের সান্ধ্য কোর্সের এক শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়ন ও বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করার দায়ে অভিযুক্ত বিভাগীয় প্রধান আলী রেজওয়ান তালুকদার চাপে পড়ে বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। তিনি অব্যাহতি চাওয়ার প্রেক্ষিতে তার আবেদন গ্রহণ করে ওই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. বনানী বিশ্বাসকে বিভাগীয় প্রধান করে এক অফিস আদেশ দেয়া হয়।
বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাপে পড়ে কৌশলে তাকে অব্যাহতি নিতে বাধ্য করেছেন বলে অভিযোগ বিভাগটির শিক্ষকদের।
জানা যায়, গত ১৫ জানুয়ারি আলী রেজওয়ান তালুকদারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও মোবাইল ফোনের গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য মুছে ফেলার অভিযোগ তুলে বিভাগটির সান্ধ্য কোর্সের এক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরবর্তীতে অভিযুক্ত শিক্ষক বিষয়টিকে বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে বিভাগের দুই শিক্ষককে এর মদদ দাতার অভিযোগ তুলে কুমিল্লা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি ওই ছাত্রীকে মানসিক ভারসাম্যহীন, পরকীয়ায় আসক্ত বলেও সবার সামনে উপস্থাপন করেন। পরে তার বক্তব্যের প্রতিবাদ শাস্তির দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর ভিন্ন ভিন্ন আবেদন করে দুই শিক্ষক এবং ওই শিক্ষার্থী।
এছাড়া অভিযোগকারী শিক্ষার্থী নিজের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে। অভিযুক্ত শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্য কোর্স থেকে অব্যাহতি দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এদিকে, গত ৬ ফেব্রুয়ারি সহকর্মী শিক্ষকদের নিয়ে বাজে মন্তব্য এবং তাদের সঙ্গে অসদাচারণসহ একাডেমিক বিভিন্ন সিদ্ধান্তে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে তার প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করে বিভাগের শিক্ষকদের স্বাক্ষরসহ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য রেজিস্ট্রার বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেন বিভাগের শিক্ষকরা।
পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাপে পড়লে এবং প্রশাসন অভিযুক্তের পক্ষ নিচ্ছে এমন অভিযোগ উঠলে অভিযুক্ত শিক্ষককে উপাচার্য কৌশলে অব্যাহতি নিতে বাধ্য করেন বলে দাবি করেন বিভাগের শিক্ষকরা। তারই প্রেক্ষিতে গত রোববার তিনি ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এটি গ্রহণ করে তাকে পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. বনানী বিশ্বাসকে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব দিয়ে এক অফিস আদেশ প্রেরণ করেন রেজিস্ট্রার।
ইংরেজি বিভাগের বেশ কয়েকজন শিক্ষক ক্ষোভপ্রকাশ করে বলেন, ‘যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষককে বাঁচাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উঠে-পড়ে লেগেছে। অভিযুক্ত শিক্ষক সহকর্মী শিক্ষকদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করায় তার প্রতিবাদ জানিয়ে আমরা তার প্রতি অনাস্থা দেয়ায় কৌশলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে অব্যাহতি নিতে বাধ্য করে। আমাদের বিচার তো আমরা পাইনি। আমরা চাই অভিযুক্ত শিক্ষকের সঠিক বিচার হোক।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, ‘ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আলী রেজওয়ান তালুকদারের পদ থেকে অব্যাহতি চাওয়ার আবেদন প্রেক্ষিতে তাকে পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন একজনকে দায়িত্ব দিয়েছি।’
আলী রেজওয়ান তালুকদারকে বাঁচাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কৌশলে তাকে পদ থেকে অব্যাহতি নিতে বাধ্য করেছে শিক্ষকদের এমন অভিযোগের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘অভিযোগ পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে করেছে। আলী রেজওয়ানও তার বিভাগের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের একটা তদন্ত কমিটি তো আছেই।’