পুলিশ সদস্যদের কল্যাণে এক বছরে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ক্যাডেট কলেজের আদলে আটটি বিভাগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হবে। ঢাকায় বিভাগীয় হাসপাতাল এবং সাভারে মাদক নিরাময় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হবে। ক্যানসার ইউনিট ও ক্যাথ ল্যাব স্থাপনসহ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে স্পেশালাইজড হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলা হবে। দায়িত্ব পালন সহজ করতে উন্নত দেশের অনুকরণে পুলিশ বাহিনীতে ট্যাকটিক্যাল বেল্ট ব্যবহার শুরু হয়েছে। এছাড়া জটিলতা ও অনিয়ম রুখতে রেঞ্জের পরিবর্তে কেন্দ্রীয়ভাবে পদোন্নতির পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। পুলিশ সদর দফতরের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। রোববার (২০ ডিসেম্বর) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন লিখেছেন সিরাজুল ইসলাম।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি সোহেল রানা বলেন, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক আধুনিক পুলিশ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বর্তমান আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। পাঁচটি বিষয়কে সামনে রেখে তিনি কাজ করছেন। পুলিশ সদস্যদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। পুলিশ বাহিনীকে মাদকমুক্ত রাখতে এরই মধ্যে ডোপ টেস্ট প্রথা চালু হয়েছে। জনগণের ওপর নির্যাতন বন্ধ করে আইনি সক্ষমতাকে জোর দেয়া হয়েছে। অপরাধ নির্মূলে বিট পুলিশিংকে জোরদার করার প্রচেষ্টা চলছে। পুলিশের প্রশিক্ষণে পরিবর্তন আনা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের যেসব সেবা দিতে হয় সেসব বিষয় প্রশিক্ষণে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পদোন্নতি ও পদায়ন নীতিমালা আধুনিকায়ন করা হয়েছে।
এআইজি সোহেল রানা আরও জানান, সারা দেশকে ছয় হাজার ৯৯২টি বিটে ভাগ করে পুলিশি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রতিটি বিটের দায়িত্বে আছেন একজন এসআই বা এএসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তা। নির্ধারিত এলাকায় কখন কী ঘটছে সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত ধারণা দিচ্ছেন বিট ইনচার্জ। তিনি বলেন, বিভাগীয় পদোন্নতির পরীক্ষা আগে বিভিন্ন রেঞ্জের অধীনে হতো। পদোন্নতিতে স্বচ্ছতা আনতে এটা এখন কেন্দ্রীয়ভাবে শুরু হয়েছে। সম্প্রতি এএসআই পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত পাঁচ শতাধিক পুলিশ সদস্যের পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতরের সিনিয়র তথ্য অফিসার একেএম কামরুল আহছান বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের পুলিশি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ট্যাকটিক্যাল বেল্টের সংযোজন করা হয়েছে। এরই মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) সদস্যরা ট্যাকটিক্যাল বেল্ট পরে দায়িত্ব পালন করছেন। পর্যায়ক্রমে পুলিশের অন্য ইউনিটেও ট্যাকটিক্যাল বেল্ট সরবরাহ করা হবে। এ বেল্ট পরে ডিউটি করলে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালনের সময় তাদের হাত ফ্রি রাখতে পারেন। রুটিন দায়িত্ব পালনের সময় সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যরা এ বেল্ট পরেই ডিউটি করবেন। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে তারা অন্য অস্ত্র ব্যবহার করবেন।
সিনিয়র তথ্য অফিসার কামরুল আহছান আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের সেবার পাশাপাশি পুলিশ সদস্যদের কল্যাণে নানা উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের পাশাপাশি একটি হাসপাতাল (ইমপালস) ভাড়া করে আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা দেয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও হোটেল ভাড়া নিয়ে করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। কামরুল আহসান বলেন, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে মাত্র তিন সপ্তাহে পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। অথচ এটি স্থাপনে সাধারণত চার মাস সময় লাগে। দ্রুততম সময়ে কেবল পিসিআর ল্যাবই নয় পর্যাপ্ত আইসিইউ এবং এইচডিইউ ইউনিটও স্থাপন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল পরিদর্শন করে চীনের একটি দল এবং সরকার গঠিত একটি দল হাসপাতালটির সার্বিক ব্যবস্থাপনার ভূয়সী প্রশংসা করেন। এটিকে করোনা চিকিৎসার অন্যতম সেরা হাসপাতাল ঘোষণা করা হয়। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলার জন্য কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতর জানায়, শুধু কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালেই নয়, অন্যসব বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালেও উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। উন্নত চিকিৎসা, নিবিড় পরিচর্যা এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে পুলিশে মৃত্যুর হার তুলনামূলক কম। প্রায় ১৯ হাজার করোনা আক্রান্তের বিপরীতে এখন পর্যন্ত ৮০ জন পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে।
সূত্র মতে, রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ক্যানসার ইউনিট চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। হার্টে রিং পরানোর জন্য সেখানে ক্যাথ ল্যাব চালুর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। হাসপাতালটিকে স্পেশালাইজড হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তুলতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলছে। বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতাল ও জেলা পুলিশ হাসপাতালগুলো আরও আধুনিকায়ন করা হবে।
সূত্র জানায়, সারা দেশে পুলিশ সদস্যদের সন্তানদের লেখাপড়ার সুবিধার্থে ক্যাডেট কলেজের আদলে আটটি বিভাগীয় শহরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য ইতোমধ্যে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে। চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী কোনো পুলিশ সদস্য মারা গেলে কল্যাণ ফান্ড থেকে তার পরিবার নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পান। জীবদ্দশায় যাতে পুলিশ সদস্যের কল্যাণ হয় সেজন্য পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের আওতায় নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পে টাকা বিনিয়োগ করলে পুলিশ সদস্যরা নির্ধারিত হারে মুনাফা পাবেন।