দৈনিক শিক্ষাডটকম, ঢাবি : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হয়। কিন্তু গত বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে নেতা-কর্মীদের একটি বহর বুয়েট ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রবেশ করে। এ ঘটনাকে ন্যক্কারজনক আখ্যা দিয়ে এর প্রতিবাদে ৬ দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার বিকেলে বুয়েটের শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলন করে মধ্যরাতে বুয়েটে বহিরাগতদের প্রবেশের প্রতিবাদে ৩০ ও ৩১ মার্চের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনের পর মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের (ডিএসডব্লিউ) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁরা ‘ছাত্ররাজনীতির ঠিকানা এই বুয়েটে হবে না’, ‘বুয়েট থেকে করবো ছাড়া, পলিটিকসে যুক্ত যারা’ এমন বিভিন্ন স্লোগান দেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বুয়েট শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ৬ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুস্পষ্ট বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে বুধবার মধ্যরাতে রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক পুরকৌশল বিভাগের ২১তম ব্যাচের ছাত্র ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ রাব্বিকে বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার এবং হলের (আসন) বাতিল; ওই ঘটনায় ইমতিয়াজ রাব্বির সঙ্গে বুয়েটের বাকি যেসব শিক্ষার্থী জড়িত ছিলেন, তাঁদের বিভিন্ন মেয়াদে হল এবং টার্ম বহিষ্কার; যেসব বহিরাগত রাজনৈতিক ব্যক্তি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না ও তাঁরা কেন কীভাবে প্রবেশ করার অনুমতি পেলেন, সে ব্যাপারে বুয়েট প্রশাসনের সুস্পষ্ট সদুত্তর ও জবাবদিহি; প্রথম দুটি দাবি দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন না হলে ডিএসডব্লিউর পদত্যাগ এবং আন্দোলনরত বুয়েট শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো রকম হয়রানিমূলক ব্যবস্থা না নেয়ার বিষয়ে লিখিত প্রতিশ্রুতি দেয়া৷
বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধ, এমন একটি ক্যাম্পাসে রাতের আঁধারে এতো বড় একটি রাজনৈতিক সমাগম এবং বহিরাগতদের আগমন ক্যাম্পাসের মর্যাদার প্রতি তীব্র অপমানজনক। একই সঙ্গে এটি একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস এবং শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু স্বাভাবিক শিক্ষাপরিবেশের নিরাপত্তার ব্যাপারকে গুরুতরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এবং ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তর কোনোভাবেই এই দায় এড়িয়ে যেতে পারে না৷
মধ্যরাতে বুয়েটে বহিরাগত রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টদের এমন দাপুটে প্রবেশ কর্তৃপক্ষ এবং ডিএসডব্লিউর দৃষ্টির অগোচরে হওয়া অসম্ভব বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা৷ লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ঘটনা ঘটে যাওয়ার দেড় দিন পার হয়ে গেলেও ডিএসডব্লিউর কাছ থেকে ওই ঘটনা সম্পর্কে কোনো ধরনের সদুত্তর পাওয়া যায়নি। ক্যাম্পাসে মধ্যরাতে তারা প্রবেশের এই অনুমতি কীভাবে কর্তৃপক্ষের থেকে পেয়েছিলো, তা এখনো ধোঁয়াশাপূর্ণ এবং সন্দেহজনক। এসব ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েটে বর্তমানে চলমান পাঁচটি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিপুল সমালোচনার ঝড় ওঠে। তাঁরা তাঁদের নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।